বরণকুলা নিয়ে অপেক্ষমান কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা

Mohammad Nurul Huda-1মুহম্মদ নূরুল ইসলাম

“জগৎ অতিথি তুমি এসো এই ঘরে
পেতেছি বরণকুলা দরিয়ানগরে।”
ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত বাঙালি জাতিসত্তার কবি হিসেবে স্বীকৃত দরিয়ানগরের ভূমিপুত্র কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার খ্যাতি ও পরিচিতি আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুবিস্তৃত। কবি কথাসাহিত্যিক, মননশীল লেখক, অনুবাদক, গবেষক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ইত্যকার নানা পরিচয়ে তিনি আজ আমাদের এক রেঁনেসা পুরুষ। তাঁর জীবন ও সৃষ্টি বৈচিত্র্যে ভরপুর। বিভিন্ন নান্দনিক পরিচয়ের মাঝেও তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের চেয়ারম্যান ও ডিন হিসেবে কর্মরত।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ১৯৪৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা- মরহুম হাজী মোহাম্মদ সেকান্দও সওদাগর। মাতা- আঞ্জুমান আরা বেগম। শিক্ষা জীবনে তিনি ১৯৫৯ সালে পূর্ব পোকখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প ম শ্রেণিতে মেধা-বৃত্তি লাভ করেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের অবস্থান মহেশখালী চ্যানেলের কিনারা ঘেঁষে। পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে মহেশখালী চ্যানেল। পূর্ব পার্শ্বে ঈদগাঁও নদী (খাল), উত্তরে ফুলেশ্বরী ও মেধা খাল। ঈদগাঁও খালের পলিবাহিত এলাকা পোকখালী। বর্তমানে পোকখালী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অ লে যে কোন ধরনের যানবাহন নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু ১৯৬০ সালের দিকে তা ছিলো কল্পনাতীত। পায়ে হাটা বা নৌকাই ছিলো এলাকাবাসীর একমাত্র বাহন। হাঁটু কাদার সড়ক, গ্রামীন সরু আইল বা নৌকা করেই এলাকাবাসীকে ঈদগাঁও সদরে আসা-যাওয়া করতে হতো। বিদ্যুতের বিষয়টি ছিল অলীক স্বপ্ন। এ পরিবেশে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার শৈশব-কৈশোর কাটে পোকখালীতে। হুদা’র পিতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ সেকান্দর ঈদগাঁও এলাকায় সেকান্দর সওদাগর নামে সমধিক পরিচিত। যারা ব্যবসা বাণিজ্য করে তারা সওদাগর নামে খ্যাত। সেকান্দর সওদাগরের ছিল ঈদগাঁও বাজারে মনোহারী পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লবণের ব্যবসা। কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা’র শৈশব ও কৈশোরের সাথী ছিলো পোকখালী গ্রামের পরিবেশ। চতূর্পাশে ছিল লবণ পানিতে সয়লাব। কবির জন্মের সময়েও পোকখালীতে ব্যাপক ভাবে সূর্যের তাপের (মোটা দানা) লবণ উৎপাদন শুরু হয় নি। লবণ পানি আগুনে ফুটিয়ে কিছু কিছু সরু লবণ উৎপাদন করা হতো। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে লবণ উৎপাদনেও আসে পরিবর্তন। সূর্যের তাপে মোটা দানা লবণ উৎপাদন শুরু হয়। মহেশখালী চ্যানেলসহ কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার বাড়ীর চতুর্পাশে যেসব নদ-নদী ছিল সেখানে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন রাত দিন মাছ ধরতো। এ ছাড়াও স্থানীয় জনসাধারণ নিজেদের প্রয়োজনে ঝাকি জাল (হাত জাল) দিয়ে হরেক রকম মাছ ধরতো। রাখাল বালকেরা উপকূলের প্যারায় মহিষ চড়াতো। মহিষের পাল উন্মুক্ত প্যারায় মাঝে মাঝে বুনো হয়ে উঠত। উপকূলের প্যারাবনে পানকৌড়ি, সারস, গাঙচিল, ডাহুক, টিয়া, চিল, শকুন, হারিকুরী (হাড়িচাচা), কোয়েল, চেগাসহ হরেক রকমের পাখির কলরব ছিল কবি’র অতি পরিচিত। এসব দেখতে দেখতে কবি বেড়ে উঠেছেন পোকখালীর কাদাময় ভূ-খণ্ডে। কিন্তু এখন পোকখালীসহ সমগ্র কক্সবাজার জেলা কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা’র আলোতে আলোকিত। না ভুল বললাম, সমগ্র বাংলাদেশ কবি হুদার রৌশনাইতে প্রজ্জ্বলিত।
গ্রামের বাড়ীতে মৌলভীর কাছেই পড়া লেখার হাতে খড়ি। একই সাথে গ্রাম্য মক্তবের পরিবর্তে হুজুরের কাছে কুরআন শরীফের প্রথম পাঠ আমপারা পড়তে শুরু করেন। বাড়ি থেকে প্রায় একমাইল দূরের পূর্ব পোকখালী প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হন ১৯৫৪ সালে। ক্লাসের প্রথম স্থান তিনি বরাবরই দখলে রাখতেন। ৫ম শ্রেণীর পাঠ চুকিয়ে ১৯৫৯ সালে ঈদগাঁও হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন।
ঈদগাঁও হাইস্কুল তাঁর বাড়ী থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে অবস্থিত। বাড়ী থেকে কাদা মাড়িয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঈদগাঁও হাইস্কুলে আসা-যাওয়া করতে হতো। তিনি বরাবরই ভাল ও মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়া লেখার পাশাপাশি তিনি ভাল ফুটবলাও ছিলেন। দীর্ঘ দেহী নূরুল হুদার ডাক পড়তো ভলিবল খেলার কোর্টেও। স্কুলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে নিয়মিত পুরস্কার ঘরে তুলতেন।
১৯৬৫ সালে জেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও হাইস্কুল থেকে এসএসসি (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় (কলা বিভাগে) কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে তৎকালীন মহকুমাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ঈদগাঁও হাইস্কুলের ন্যায় মফস্বলের পিছিয়ে একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা চাট্টিখানি কথা নয়। মুহম্মদ নূরুল হুদা যে কত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তা তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফল দেখেই অনুমান করা যায়। তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে তিনি ঈদগাঁও বাজারে গড়ে তুলেন একটি সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন। যা ‘উর্মিমালা সংসদ’ নামে খ্যাত। ১৯৬৫ সালে উর্মিমালা সংসদের মুখপত্র হিসেবে প্রকাশ করা হয় ‘কলতান, নামের সাহিত্য সংকলন। ‘কলতান’ সম্পদনা করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। কলতান’ই ছিলো কবি নূরুল হুদা’র সাহিত্য জীবনের সূচনা।
১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অনার্স ও পরের বছর মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া জেলার তালশহর কলেজের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। পরীক্ষার পরেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং ঈদগাঁও, বদরখালী, নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়াতে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে থাকেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি রাজধানী ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। সোহরাওয়ার্দী কলেজে তিনি বেশিদিন অধ্যাপনা করেন নি। কলেজে থাকতেই তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শোণিতে সমুদ্রপাত’ (১৯৭২) প্রকাশিত হয়। শোণিত সমুদ্রপাতের মাধ্যমে তিনি বোদ্ধাপাঠক ও সাহিত্যমোদিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অর্র্থাৎ ১৯৭৩ সালে মুহম্মদ নূরুল হুদা বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমীতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি একাডেমীতে একটানা বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমীতে একটানা বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের আগষ্ট মাসে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক পদে যোগদান করেন এবং ২০০২ সালের ৭ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ১,৯৯৯ দিন পরে আবার বাংলা একাডেমীতে ফিরে আসেন। পরে তিনি বাংলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি একজন অগ্রণী সাহিত্য-সংগঠক। তিনি ‘বাংলাদেশ রাইর্টাস ক্লাব’, ‘কবিতা বাংলা’সহ বহু সাহিত্য সংগঠনের সভাপতি।
বাংলা একাডেমীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৮৫ সালে আমেরিকার হাওয়াইস্থ ইষ্ট-ওয়েষ্ট সেন্টারের সংস্কৃতি ও যোগাযোগ বিষয়ক ইনস্টিটিউটে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮৬ সালে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সাল থেকে এযাবৎ কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা লিখেছেন দু’হাতে। কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন গদ্য, করেছেন অনুবাদ, লিখেছেন চিকিৎসা শাস্ত্র (হোমিওপ্যাথিক) নিয়ে। বাংলাভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতেও লিখেছেন তিনি। কবি হুদা বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের পাশাপাশি তিনি বিদেশ থেকেও পুরস্কার ও সম্মান এনেছেন নিজের জন্য, বাংলাদেশের জন্য, বাংলা সাহিত্যের জন্য এবং কক্সবাজাবাসীর জন্য। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর কবিতা ও উপন্যাসে সৃষ্টি করেছেন একটি পৃথক ধারা।
‘কলতান’ সম্পাদনা দিয়ে কবি’র সাহিত্য কর্মের আনুষ্ঠানিক আতœপ্রকাশ। এরপর তিনি আর পেছনে তাকান নি। এগিয়েছেন সামনের দিকে, সমুদ্র, পাহাড় পর্বত ডিঙ্গিয়ে গেছেন। তাঁর চলার গতি এখনো রয়েছে অব্যাহত। তিনি চষে বেড়াচ্ছেন কবিতার উর্বর ভূমি।
দেশের কয়েকজন শীর্ষ কবি-সাহিত্যকের দৃষ্টিতে জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার অবয়ব ফুটে উঠেছে বিভিন্ন ভাবে। অনেকেই অনেকভাবে দেখেছেন কবি হুদাকে। কবি হুদা সম্পর্কে কবি শামসুর রাহমানের মূল্যায়ন ‘গুরুত্বপূর্ণ কবি এবং ভাল কবি এক কথা নয়। আমি কবি মুহম্মদ নুরুল হুদাকে আমাদের দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি বলে মনে করি। ভাল কবি বেশ কয়েকজন হতে পারেন তবে গুরুত্বপূর্ণ কবি আমার বিবেচনায় কম এবং সেই বিরল কবিদেরই একজন মুহম্মদ নুরুল হুদা”।
কথাশিল্পী মমতাজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন ‘আমার আসার ১৫বছর পরে একজন কবি বাংলাদেশে এসেছে। আমার যাবার ১০০ বছর পরে সে কবি যাবে। ভুল বললাম। আমার হারিয়ে যাবার, আমি বিস্মিত হওয়ার হাজার বছর পরেও সে কবি বেঁচে থাকবে। মুহম্মদ নূরুল হুদার কথা বলছি। হুদাকে কবি ডাকি। শুধু শুধু ডাকিনা, তাকে কবি বলে মানি’। জনাব মমতাজ উদ্দিন আহমদ আরো বলেছেন, মুহম্মদ নূরুল হুদা শব্দ শিকারী। কোথা থেকে না কোথা থেকে, শব্দকে খুঁজে আনে। বাচ-বিচার করেন। ইলিয়টে তার আনন্দ, সেক্সপীয়রে তার নেশা, বাল্মীকিতে সে অনুরাগী, হোমারে অভিভূত আর কোরানে সে আকন্ঠ।
অনু হোসেন বলেছেন, “কাল জ্ঞান, ইতিহাসে জ্ঞান ও সমাজ জ্ঞানের সমবায়ে নূরুল হুদার কাব্য ভূগোল প্রদীপ্ত। জাতি সত্তার ঐতিহ্যসন্ধানী এই কবি প্রাগৈতিহাসিক বিবর খুঁড়ে ও জাতির তামাটে বর্ণকে দ্রাবিড়ার রক্তের উত্তরাধিকার বলে ইতিহাসের যে উপাত্ত নির্দেশ করছেন তা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবিদার।”
কথাশিল্পী রশিদ হায়দার বলেছেন, “হুদা অসম্ভর ভাল বাংলা লেখে, ইংরেজিও খুব সুন্দর, আমি নিজের স্বার্থেই ওর সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলি। আমি ভুল ইংরেজি বললে বা লিখলে হুদা শুদ্ধ করে দেয়, আমি ঋদ্ধ হই।”
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক বশীর আল হেলাল বলেন “আসলে পাঠকের দৃষ্টি কাড়ার ক্ষমতা তিনি রাখেন, তিনি-জীবন্ত এবং খুব উজ্জ্বল কবি। তাঁর কাব্যের শরীর নবযুবতীর মত পৃথল।………… এই যুবতীর সাজ বেশ বর্ণাঢ্য। বেশে বেছে রুচি সম্মত অলংকার, হ্যাঁ স্বর্ণালংকার পরেছেন। তিনি যে ফুলসাজ অঙ্গে ধারণ করেছেন তাও প্লাষ্টিকের নয়, প্রকৃত ফুলের। সেই তিনি হচ্ছেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।”
বিশিষ্ট নজরুল গবেষক কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ বলেছেন “মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতার উতরোল তরঙ্গের পাশে গহন-উন্মুক্ত কিন্তু যুক্তিশীল, শিকড়িত কিন্তু মুক্তচিত্ত প্রবন্ধ-সমালোচনার একটি নির্জন নহর বয়ে চলেছে”।
শৈশবের সেই স্মৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ কবি হুদাকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে বৈশাখ মাসে কাট ফাঁটা রোদে মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে সুর্যের তাপের লবণ উৎপাদন করার দৃশ্য। সেই লবণ বিক্রি করার সময় দালালের দৌরাত্ব্য। মৈন পাহাড়ের চুড়া দেখতে দেখতে স্কুলে যাওয়া। জেলে সম্প্রদায়ের হরেক রকমের জাল, নৌকা দেখে দেখে ঘরে ফেরা, হুদার কবিসত্বাকে প্রভাবিত করেছে। জাতির শিকড় সন্ধানে মুহম্মদ নূরুল হুদার আত্মনিয়োগ বাংলা সাহিত্যকে করেছে ঋদ্ধ, তিনি নিজেকে করেছেন ইতিহাসের অংশ। তিনি এখনও লিখে যাচ্ছে নিজের আনন্দের জন্য, নিজের তৃপ্তির জন্য, আমাদের জন্য, আমাদের উত্তর পুরুষের জন্য।
দরিয়ানগরের মাটিতেই তিনি ফিরে আসতে চান চিরকালের জন্য। এই দরিয়ানগরেই তিনি বেছে নিয়েছেন পৃথিবীর প্রথম ‘কবিচূড়া’। জীবন, কবিতা ও মহাকালকে নিয়ে সেই ‘কবিচূড়া’-য় তিনি নির্মাণ করতে চান এক অনশ্বর নিবাস। ‘কবিচূড়া’ তাঁর এক দৃষ্টান্তরহিত স্বপ্ন, সর্বকালের শান্তিকামী মানুষের এক আবাসযোগ্য নন্দননিবাস।
কবির কণ্ঠেই বলি,
“রোদ্দুরে নেয়েছি আর বৃষ্টিতে বেড়েছি
সহস্র শতাব্দী দিয়ে নিজেকে গড়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছে।
……………………………………..
……………………………………..
……………………………………..
রাজধর্ম পিছে ফেলে, পিছে ফেলে গোত্রের আরতি
লোকধর্মে লোকসঙ্ঘে সুদীক্ষা নিয়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছে।”

লেখক : সাংবাদিক, গবেষক।


শেয়ার করুন