রামুতে পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে

বন মামলায় কিশোরকে জড়ানোর অভিযোগ

ramu pic rashedসোয়েব সাঈদ, রামু :
রামুতে বন বিভাগের মামলায় পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে কিশোরকে জড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) মো. রাশেদ নামের ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় রামু থানা পুলিশ। হয়রানির শিকার মো. রাশেদ রামু উপজেলা ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে।
মো. রাশেদ এর মা ইসমত আরা জানান, ছেলেকে ধরে নেয়ার পরদিন কোর্ট গিয়ে দেখতে পান বন বিভাগের দায়েরকৃত একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে রাশেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর ছেলে এ ধরনের কোন কর্মকান্ডে কখনো সম্পৃক্ত ছিলো না। হয়তো পারিবারিক বা আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অতীতের কোন বিরোধের জের ধরে প্রভাবশালী চক্র মামলাটির তদন্তকারি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যা সুষ্ঠু তদন্ত হলে আসল রহস্য জানা যাবে।
মা ইসমত আরা আরো জানান, ৭ বছর আগে রাশেদের বাবা মারা যান। চার ভাই-বোনের মধ্যে রাশেদ সবার বড়। ছোট ৪ শিশু সন্তান নিয়ে তিনি অতিকষ্টে সংসার চালাচ্ছিলেন। সম্প্রতি অভাবের কারনে পড়াশোনা ছেড়ে রাশেদ একটি ঔষধ কোম্পানীর বিক্রয় কর্মী হিসেবে চাকরি করে আসছিলো। সে কোনদিন বনে গাছ কাটতে যাইনি।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর রামু-মরিচ্যা সড়কে একটি চোরাই কাঠ বোঝাই টমটম গাড়ি আটক করার পর রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আমির হামজার সাথে ধস্তাধস্তি করে গাড়িটি ছিনিয়ে নেয় মো. ভুট্টু ও মনির আহমদ নামের দুই ব্যক্তি। চিহ্নিত এ দুইজনকে অভিযুক্ত করে ঘটনারদিন রামু থানায় মামলা (নং-২৪) করেন রাজারকুল বিট কর্মকর্তা মোঃ মাসুম কবীর।
মামলাটির তদন্তকারি কর্মকর্তা রামু থানার এসআই মকবুল হোসেন চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে এ ঘটনায় অভিযোগপত্র দেন। এতে মামলার এফআইআর এ নাম না থাকা সত্ত্বেও রাশেদকে অভিযুক্ত করেন।
এসআই মকবল হোসেন সম্প্রতি রামু থানা থেকে বদলী হন। তাই অনেক চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
মামলার বাদি রাজারকুল বিট কর্মকর্তা মোঃ মাসুম কবীর জানান, রাশেদ নামের কেউ এ ঘটনায় জড়িত ছিলো না। ঘটনার সাথে জড়িত দুইজনকে তিনি চেনেন এবং মামলায় তাদেরই অভিযুক্ত করা হয়েছিলো।
রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আমির হামজা জানান, এ মামলার আসামীরা চিহ্নিত। তাই নিরীহ কাউকে হয়রানি করাটা উচিত নয়। আর নিরীহ কেউ যাতে হয়রানি না হয় সে ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।
ফতেখাঁরকুল ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, রাশেদ নামের ছেলেটি এতিম এবং শান্ত স্বভাবের। সে এধরনের কোন কাজে জড়িত থাকার কথা নয়। কেউ যদি তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়িয়ে থাকে তাহলে সেটা হবে বড় ধরনের অন্যায়।
রামু থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ কায় কিসলু জানান, রাশেদ নামের ছেলেটিকে অন্যায়ভাবে জড়ানো হয়েছে কিনা সেটা প্রমানের এখতিয়ার আদালতের। যদি তদন্তকালীন সময়ে তদন্তকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যেত, তাহলে তাৎক্ষণিক তাকে পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেয়া যেত। আর উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছেলেটিকে হয়রানি করা হলে, জড়িতরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কখনো মাফ পাবে না। পুলিশের দায়িত্ব অপরাধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। নিরীহ কাউকে জড়িতে হয়রানি নয়।
জানা গেছে, আটকের পর থেকে রাশেদ এখনো কারাগারে থাকায় মা সহ আরো ৩ ছোট ভাই-বোন অভাব-অনটনে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।


শেয়ার করুন