“বন বিভাগের চোখে কালো চশমা” বাইশারীতে চলছে প্রকাশ্যে কাঠ পাচার

Kat-pasarমুফিজুর রহমান, বাইশারী (নাইক্ষ্যংছড়ি)।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে চলছে প্রকাশ্যে দিবালোকে কাঠ পাচার। বন বিভাগের রহস্যজনক ভূমিকার জন্য স্থানীয়রা মনে করেছেন তাদের চোখে রয়েছে কালো চশমা। যার কারণে তারা দেখেও না দেখার ভান করে বসে রয়েছেন। প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রশাসন ও বন বিভাগের সামনে এধরনের কাঠ পাচার নিয়ে জনগনের প্রশ্ন হল দেশে এখন প্রশাসন থাকলেও এসব বন দস্যুদের জন্য কোন আইন প্রয়োগ হচ্ছে না। বাইশারীর সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছাড়াও উজাড় হচ্ছে প্রাকৃতিক বন ভূমি। এতে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব, উজাড় হচ্ছে বন ভূমি, ধ্বংশ হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বাইশারীতে বন দস্যুরা এমনই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা প্রকাশ্যে দিবালোকে শত শত জনসাধারনের সামনে রাতদিন সমান তালেই বাইশারী বাজার সহ আশপাশের সড়ক দিয়ে জিপ ও ট্রাক ভর্তি করে কাঠ পাচার করে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে কাঠ পাচারকালীন বন বিভাগ ও অন্যান্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিরব দর্শকের ভূমিকায় চেয়ে থাকে। বান্দরবানের লামা বন বিভাগের আওতাধীন বাইশারীর সাঙ্গু রেঞ্জ শুধু অফিসেই সিমাবদ্ধ। বন বিভাগের কোন কার্যক্রম চোখে পড়ে না তাদের। ১২ ঘন্টায়ই তালাবদ্ধ থাকে। বন বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীরা সারা দিন ও রাতের বেলা বাইশারী বাজারের সড়ক গুলোতে ঘোরাঘুরি সহ আশপাশের সড়ক গুলিতে ঘোরাঘুরি করে এবং কোন্ সময় কাঠ পাচারের গাড়ী আসবে সে দিকে লক্ষ্য রেখে কাঠ পাচারকারীদের সাথে আঁতাতের মাধ্যমে টি.বি পারমিট ছাড়াই সরকারের রাজস্ব আদায় না করে শুধু তাদের পকেট রাজস্ব আদায়ের বিনিময়ে কাঠ গুলো ছেড়ে দেয়। তা ছাড়া বন বিভাগের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে পাহাড়ে বন্য প্রানী শিকার অব্যাহত রয়েছে। বনের হরিণ শিকার এখন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান শুস্ক মৌসুমে বন দস্যুদের দল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকে ম্যানেজ করে পাচার করছে জালানী কাঠ গোলকাঠ, টিম্বার, চিরাই কাঠ সহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ। প্রতিদিন বাইশারী থেকে কম হলেও হাজার ফুট জালানী এবং চিরাই কাঠ সরকারের রাজস্ব ছাড়াই পাচার অব্যাহত রয়েছে। কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে এক সাবেক জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় যুবদল নেতা নামধারী আলী আহমদ ও আনোয়ারুল হক এবং রামু উপজেলার গর্জনীয়া ইউনিয়নের হাজির পাড়া গ্রামের যুবলীগ নেতা নামধারী মদ পাচার সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা গৌলাম মৌলা সহ স্থানীয় হোমড়া-চোমড়া টাইপের কিছু নেতা। তবে এরা সকলেই নেতাদের নাম বিক্রি করেই চলে। এছাড়া বর্তমানে বাইশারীর বিভিন্ন স্থানে জালানী, রদ্দা, গোলকাঠ ও টিম্বার পাচারের জন্য মওজুদ রয়েছে কয়েক হাজারেরও অধিক ঘনফুট। পরিবেশবাদীদের মতে দীর্ঘদিন যাবৎ নাইক্ষ্যংছড়িস্থ বিজিবির অভিযান বন্ধ থাকায় কাঠ পাচারকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মওজুদকৃত কাঠের মধ্যে রয়েছে গর্জন, জাম, বাটানা, গামারী, আকাশমনি সহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ। কাঠ পাচারের বিষয়ে স্থানীয় সাঙ্গু রেঞ্জ কর্মকর্তা এমদাদ হোসাইন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকট ও অস্ত্র না থাকায় কাঠ চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।


শেয়ার করুন