চকরিয়ায় মহেশখালী-বদরখালী নৌ-চ্যানেলে

বদরখালীতে প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের

চকরিয়ায় মহেশখালী- বদরখালী নৌ-চ্যানেলে এভাবেই নদীর চর দখল করে এবং গাছ কেটে তৈরি করা হচ্ছে চিংড়ি ঘের

ইসলাম মাহমুদঃ

১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ। এর পর ১৯৯৬ সালে উপকূলীয় এলাকায় বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সবুজ বেষ্টনীর আওতায় রোপণ করা হয় ১ লক্ষাধিক বাইন ও কেওড়া গাছের চারা। এসব চারা এখন বড় গাছে পরিণত। বয়স ২৯ বছর।
কক্সবাজারের মহেশখালী-বদরখালী নৌ-চ্যানেলে নদীর চর দখল করে সেই প্যারাবন কেটে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করছে ভূমিদস্যুরা। চিংড়ি ঘের তৈরি করতে গত এক সপ্তাহে কাটা হয়েছে অন্তত ১০ হাজার বাইন ও কেওড়া গাছ।
খবর পেয়ে ১৩ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাতুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ও বন বিভাগ গিয়ে ঘের নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বদরখালী সমবায় সমিতির লোকজন পরিবেশবিধ্বংসী এ কাজ করছে। বদরখালী সমবায় সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুনেছি, আমার সমিতির কয়েকজন সদস্য এসব চিংড়ি ঘের তৈরি করছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নদীর চর দখল করে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি ঘের নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া গেছে জানিয়ে ভূমি কর্মকর্তা রাহাতুজ্জামান বলেন, গতকাল অভিযানের সময় জোয়ারের পানির কারণে কোনো গাছ কাটা হয়েছে কিনা তা দেখা যায়নি। তার পরও পরিবেশবিধ্বংসী এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বন বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চকরিয়ার বদরখালী-মহেশখালী সেতুর দক্ষিণ পাশে শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে খরস্রোতা প্রবহমান নদী দখল করে চিংড়ি ঘের নির্মাণের কাজ চলছে। একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন, বদরখালী সমবায় সমিতির কর্মকর্তাদের নির্দেশে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা।
১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের রাতে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়। এতে ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ। ১৯৯৬ সালে উপকূলীয় এলাকায় বনায়নে এগিয়ে আসে উবিনীগ (উন্নয়ন প্রকল্পের নী‌তি নির্ধারণী গবেষণা) নামের একটি এনজিও। সে সময় সংস্থাটির পক্ষ থেকে সবুজ বেষ্টনীর আওতায় ১ লক্ষাধিক বাইন ও কেওড়া গাছের চারা রোপণ করা হয়। এসব চারা এখন বড় গাছে পরিণত হয়েছে। বয়স ২৯ বছর।
উবিনীগের কক্সবাজার আঞ্চলিক শাখার সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, বদরখালী-মহেশখালী সেতুর দক্ষিণ পাশে শত শত শ্রমিক দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার নদীর চর দখল করে গত তিন দিনে অন্তত ১০ হাজার বাইন ও কেওড়া গাছ কেটে চিংড়ি ঘের তৈরি করা হয়েছে। এ অপরাধটা কে করছেন, তা স্থানীয় সবাই জানেন। তাই উপকূলীয় এলাকার রক্ষাকবচ প্যারাবন রক্ষার স্বার্থে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বন বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করার জন্য স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, এ বিষয়ে কেউ মামলা জমা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।


শেয়ার করুন