প্রার্থীদের গ্রেপ্তার নিয়ে চিন্তিত খালেদা জিয়া

1426403801

আমাদের সময়.কম:
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজের গ্রেপ্তার নিয়ে চিন্তিত নন। তা নাহলেও সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে চিন্তিত। নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে অভিযুক্ত প্রার্থীদের গ্রেপ্তারে কমিশনের অনুমতির প্রয়োজন হবে না। পুলিশ চাইলে আটক, গ্রেপ্তার করতে পারবে। এদিকে সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির এমন প্রার্থী যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়না রয়েছে তাদের ছাড় দিবে না পুলিশ। সেই হিসাবে তারা প্রস্তুতি রেখেছে। প্রার্থীরা প্রচারনা শুরু করলে ও তাদেরকে প্রকাশ্যে পেলেই আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিবে।

এদিকে বিএনপির সূত্র জানায়, আগামী মাসের ৫ থেকে ১৫ এপ্রিল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আট মামলার শুনানীর দিন ধার্য রয়েছে। এরমধ্যে কমপক্ষে তিনটি মামলায় তাকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হতে হবে। তিনি এখনও পর্যন্ত কোন মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি আদালতে যেতে চান না। শেষ পর্যন্ত আদালতে তিনি না গেলে আদালত তার ব্যাপারে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে ও সরকার কি উদ্যোগ নেয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। এই অবস্থায় তার দলের তরফ থেকে সিটি নির্বাচনের জন্য আন্দোলন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। আগামী দিনেও বিএনপি নির্বাচনে থাকার সুযোগ পেলে আন্দোলন আরো শিথিল করতে পারেন। কিন্তু এখন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত তিনি ঠিক কি করবেন সেটা ঠিক করতে পারেননি। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ এপ্রিল। তার দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে না থাকলে ওইদিন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সেই ব্যাপারে তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত দিবেন।

সূত্র জানায়, আগামী ৫ এপ্রিল দুর্নীতির দুই মালায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজির হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি আদালতে হাজির না হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেও হাজির করাতে পারে। সেই হিসাবে ৪ এপ্রিল গুরুত্বপূর্ন একটি দিন হতে পারে। জিয়া অরফ্যানেঞ্জ ট্রা®্র¡ ও জিয়া চ্যারিটেব্যাল ট্রাষ্ট্রের মামলা রয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন গত ৪ মার্চ আদালতে হাজির হননি। ওই দিন তার আদালাতে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তামূলক সব ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। তিনি যাননি। এবারও ৫ এপ্রিল তার আদালতে উপিস্থত হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এই জন্য পুলিশ থাকবে। তিনি তার অফিস থেকে বাইরে বের হওয়া থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত পৌঁছানো ও সেখানে আদালতের কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আশা করি তিনি আদালতে যাবেন। এরপরও না গেলে সেখানে আমাদের কি করার থাকতে পারে।

তিনি আদালাতে না গেলে কি হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেটা আমি এখন বলতে পারবো না। আদালাত যদি তার সময় আর মঞ্জুর না করেন ও গ্রেপ্তারী পরোয়না বহাল রয়েছে সেটা কার্যকর করতে বললে সেটা কার্যকর করা হবে। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হবে। হাজির করার পর আদালত তার জামিন দিলে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসবেন আর জামিন না দিলে কারাগারে পাঠিয়ে দিতে বললে সেইভাবেই আদালতের আদেশ কার্যকর করা হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদার ভয় তিনি আদালতে গেলে সরকার তাকে আর তাকে তার অফিসে ফিরতে দিতে দিবে না। তিনি অফিসে বসেই আন্দোলন সফল করতে চান। এই জন্য আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত বাসায় ফিরতে চাইছেন না এই নিশ্চয়তা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি আদালতে যাবেন, হাজির হবেন সেটাই আমরা জানি। এরপর কি হবে সেটা জানেন বিচারক। বিচারক তাকে জামিন দিলে তার বাসায় অফিস যেখানে খুশী যাবেন সেটা সরকারের কোন ব্যাপার নয়।

খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন মনে করছেন তিনি আদালতে আন্তসমর্পন করার জন্য যাবেন না। এরপরও বলা যায় না শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নেন। তবে এটা বলা যায় তারপক্ষে মামলায় প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কাউকে দিবেন না। এই অবস্থায় আদালতের পরোয়ানা অনুযায়ী সরকার যদি তাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়, নিক। সেটা তিনি মেনে নিবেন। কিন্তু সরকার সেটা করবে না। কারণ সরকার এতে ভয় পাচ্ছে। মনে করছে তাকে গ্রেপ্তার করার পর আন্দোলনের গতি বাড়বে। সেই সঙ্গে সিটি নির্বাচনেও বিএনপি সুবিধা পারে। এই কারণে সরকার তাকে ওই ধরনের কোন সুবিধা দিতে চাইছে না।

তার ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তিনি তার গ্রেপ্তার নিয়ে চিন্তত নন। তিনি চিন্তিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন তাদের নিয়ে। কারণ প্রার্থীরা এখনও প্রকাশ্যে আসতে পারছে না। প্রকাশ্যে আসলেই গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে যেসব প্রার্থীর নামে মামলা রয়েছে ওই সব প্রার্থীরা প্রকাশ্যে পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। সরকার এই ব্যাপারে হার্ডলাইনে থাকার কারণে বিএনপির প্রার্থীরা আতœগোপনেই রয়েছেন। তাদের পক্ষে তাদের ঘনিষ্টজনরা কাজ করছেন। কিন্তু তারা প্রার্থীরা কেউ নির্বাচনী মাঠে না নামতে পারলে কয়েকজন জয়ী হলেও সবাই হতে পারবেন না। এই জন্য তাদের মাঠে নামার প্রয়োজনীয়তা অনভুব করছেন। কিন্তু কোন উপায় মিলছে না।

তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন সংশ্লিস্ট নেতা কর্মীদের বলা হয়েছে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার। যাতে করে প্রার্থীদের কেউ গ্রেপ্তার না হয়। গ্রেপ্তার হলে তাদের নামে নতুন মামলা হওয়া ছাড়াও এমন সব মামলায় তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। তখন তারা নির্বাচন করতে পারবে না।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ফৌজদারী অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোন বাঁধা দিবে না নির্বাচন কমিশন। কমিশন তাদের মতো করে কাজ করবে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মতো করে কাজ করবে। কমিশনের দাবি অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রয়েছে এমন কাউকে গ্রেপ্তারের জন্য কমিশনের অনুমতির দরকার হবে না। এমন কোন নিয়ম রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। যদিও শত নাগরিক কমিটির ব্যানারে ছয় সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে এগিয়ে আসা বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করা হয় সেই অনুরোধ জানান। এই ব্যাপারে কমিশন তাদেরকে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। বরং কমিশনের কাছে তারা এই দাবি করার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বিষয়টি স্পষ্ট করেন। সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের কেউ মামলায় আদালত থেকে জামিন না নিলে আসামি হলে পুলিশ তাদের ছাড় দেবে না।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, মামলা ও সাজাপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। সেটা করা হবে আইন অনুযায়ী। আইনের বাইরে বিএনপির প্রার্থীদের জন্য আলাদা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কমিশনও কারো ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে পারবে না। শত নাগরিক কমিটির তরফ থেকে আইনে কমিশনের কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল বিএনপির প্রার্থীদের যাতে হয়রানী করা না হয়। তারা প্রচার প্রচারনা চালাতে পারেন। এই ব্যাপারে কমিশনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই ব্যাপারে আইন পরিস্কার। সেখানে বলা আছে , ওই ধরনের কেউ প্রার্থী হলে কি করতে হবে। কাকে কিভাবে গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা প্রচলিত আইনের বাইরে কোন ব্যবস্থা নিতে পারবো না। প্রচলিত আইনে যেভাবে রয়েছে সেভাবে হবে। কমিশন এই ব্যাপারে কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে না। তাছাড়া অভিযুক্ত যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের মত নিয়ে ওই ব্যক্তিকে প্রশাসন, পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু এই জন্য আমাদের মত নেওয়ার কোন বিষয় আচরণ বিধি ও আইনে লেখা নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র আরো জানায়, খালেদা জিয়ার কাছে খবর রয়েছে প্রার্থীদের যাদের নামে মামলা রয়েছে তারা মাঠে নামা মাত্র, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। ঢাকা উত্তর,দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাদের অনেকের নামেই নাশকতার মামলা রয়েছে। যে কোরণে প্রার্থীদের বেশিরভাগই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় রিপাটনিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাননি। তাদের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তাদের লোকজন। এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের আশঙ্কা বিএনপির প্রার্থীদেরকে প্রশাসনিকভাবে হয়রানি করা হতে পারে। আর সেটা করা হলে তারা নির্বিঘেœ প্রচার চালাতে পারবেন না। তা করতে না পারলে বিজয়ী হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। সূত্র জানায় , ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিন সিটি করপোরেশনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী ৬০ মেয়র ও কাউন্সিল এর পদে প্রার্থী হয়েছেন এমন ১ হাজার ৮’শ ৩৩ জনের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। আর এটা নির্বাচন কমিশনের কাছেও জানানো হয়েছে।


শেয়ার করুন