প্রবীণদের প্রতি অবহেলায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন

elderly_care_giving_bg_528340710সিটিএন ডেস্ক :

আজ ১ অক্টোবর, বিশ্ব প্রবীণ দিবস। বয়সে যারা বুড়ো তাদের প্রতি সম্মান দেখানোই এই দিবসটি পালনের লক্ষ্য। প্রবীণদের প্রতি সম্মান দেখানো সব সমাজেরই অনুসরণীয় রীতি। আগেকার সমাজে বৃদ্ধরা বেশ সম্মানিত এবং শ্রদ্ধেয় ছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বৃদ্ধদের ওপর এই শ্রদ্ধা ও সম্মান অক্ষুন্ন ছিল। বিশেষ করে প্রাচ্য সমাজে বৃদ্ধদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শনের ঐতিহ্য আজও মোটামুটি লক্ষ্য করা যায়। তার পরও কিছু কিছু বৃদ্ধদের মায়া-মমতায় ঘেরা পরিবারের বাইরে অবস্থান করতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ইসলাম বৃদ্ধদেরকে অসম্ভব শ্রদ্ধা ও সম্মান দিয়েছে। হজরত রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি একজন বয়োবৃদ্ধের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করবে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন তাকে কিয়ামতের দিন সকল ভয়-ভীতি ও আশঙ্কা থেকে নিরাপদে রাখবেন। বৃদ্ধদের শ্রদ্ধা সম্মান করা আর ছোটোদের স্নেহ করা ইসলামি নৈতিকতার অন্যতম বিধান। যারা ইসলামের এই বিধান মেনে চলবে না, তারা অবশ্যই আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে উপস্থিত হবে।

বস্তুত ‘জ্ঞানীকে তার জ্ঞানের জন্য আর বৃদ্ধকে তার বয়সের জন্য শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে হবে।’ এটাই ইসলামের শিক্ষা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রবীণ ও নবীন মিলেই এ দুনিয়ার সমাজ ব্যবস্থা। যারা দুনিয়াতে আগে এসেছেন তারা পরবর্তীদের নিকট শ্রদ্ধাভাজন এবং প্রবীণ হিসেবে মর্যাদার অধিকারী। আর নবীনরা প্রবীণদের কাছে স্নেহভাজন এবং তাদের আদর-সোহাগ পাওয়ার অধিকারী।

প্রবীণদের শ্রদ্ধা করা এবং নবীনদের স্নেহ করা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।’

আসলে মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া উচিত। এটা মহানবীর শিক্ষা। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের সঙ্গে তাদের পদমর্যাদা অনুযা‍য়ী আচরণ করো।’ -আবু দাউদ

এ কথা ঠিক, ধনী-গরিব, সৎ-অসৎ, ছোট-বড় সবাই আইনের দৃষ্টিতে সমান। আল্লাহর নির্ধারিত আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের কারও প্রতি সামান্যতম পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। কিন্তু সামাজিক আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাকওয়া-পরহেজগারি ও অন্যান্য বিশেষ পদমর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। এ কথাকেই ‘পদমর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করো’ বাক্যে বর্ণনা করা হয়েছে।

ইসলামের শিক্ষা হলো- সন্তানের অসহায়ত্বের সময় যেভাবে পিতা-মাতা তাকে স্নেহভরে সযত্নে প্রতিপালন করেন। পিতা-মাতার অসহায়ত্ব তথা বৃদ্ধাবস্থায় তাদেরকে সেভাবে লালন-পালন করা সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা অমানবিক ও ইসলাম বিবর্জিত কাজ। এমন কাজ যারা করে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। এ অবহেলার জন্য সন্তানদের পরকালে কঠিন শাস্তি জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে আর দুনিয়াতেও তার বার্ধক্যাবস্থায় আরও চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।

বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি সদাশয় হওয়া এবং তাদের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহয়ালা বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ওহ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো।’

এভাবেই ইসলাম পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও সর্বস্তরের প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তাদের অসহায়ত্বের সময় সেবাযত্ন করার তাগিদ দিয়েছে। ইসলামের এ নির্দেশনা মেনে চললে প্রবীণ নিবাসে বেদনাদায়কভাবে প্রবীণদের জীবনযাপন করার প্রয়োজন হতো না। একজন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ তার বৃদ্ধা পিতা-মাতাকে এবং তার আত্মীয়-পরিজনকে অবহেলা ও উপেক্ষা করতে পারে না।

ইসলামের নির্দেশ মতে, আমাদেরকে প্রবীণদের প্রতি যত্নবান ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নিজেদের বার্ধক্যের কথা চিন্তা করে বৃদ্ধ ও প্রবীণদের সেবাযত্ন করতে হবে।


শেয়ার করুন