প্রবীণদের কথা কেউ কি ভাবে!

6b58d612-7e27-42ee-b4be-9eb63660bba0এস.এইচ মুক্তা, কক্সবাজার

প্রবীণ শব্দটির সাথে প্রজ্ঞা, জ্ঞান, গাম্ভীর্য ও আদর-স্নেহমাখা এমন কতগুলো শব্দ জড়িত। যেখানে রয়েছে শ্রদ্ধা ও সম্মানের বিষয়টি। প্রবীণ ব্যক্তি বয়সে, অভিজ্ঞতায় ও সম্মানের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। আমাদের সামাজিক শিষ্টাচারের মধ্যেও এই মুল্যবোধ প্রাচীন কাল থেকে বিদ্যমান। কিন্তু বর্তমান সমাজে আকাশ সংস্কৃতিক কল্যাণে পশ্চিমা সংস্কৃতির ব্যাপক বিস্তার, সামাজিক দ্বন্ধ, অর্থনেতিক সংকট, জীবনযাত্রার আধুনিকীকরণ ইত্যাদি কারণে আমরা আমাদের মুল্যবোধ গুলো অনেকটা হারিয়ে ফেলেছি। এ কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধরা।
আমাদের সমাজে এমনিতে মহিলারা সব রকমের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত। বৃদ্ধ বয়সে যখন তারা সংসারের হাল ছেড়ে দেন তখন তাদের প্রতি অবহেলা বেড়ে যায়। দিন-দিন প্রবীণ ব্যক্তিরা নি:সঙ্গ ও অসহায় হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ মহিলা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ঠে তিন সন্তানকে মানুষ করেছি। কিন্তু এখন কেউ আমার খবর নেয় না। ঢাকায় থাকে, যার-যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ভেবেছিলাম সন্তানদের হাতে সুখ পাবো। কিন্তু না। আমাদের কিছু না বলাই ভালো। কিছু বললে আমাদের ঘরেও থাকতে দেবে না, তখন আমাদের স্থান হবে বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা রাস্তায় ভিক্ষুকের বেশে। বিশেষ করে ছেলে সন্তান বিয়ে করার পর বাবা-মাে ভুলতে বসে। এটা কিন্তু একেবেরে ঠিক না। যারা বাবা-মাকে কষ্ঠ দেন তাদের বিচার হবেই একদিন। হাশরের ময়দানে সবের জবাবদিহি করতে হবে। তাই সময় থাকতে সাবধান।
কিন্তু প্রবীণদের মধ্যে বয়স্ক মহিলারাই বেশি অসহায়ত্বের শিকার। মহিলারা সব সময়ই নিজেদেকে বঞ্চিত করেন তাই এই বয়সে এসেও তাদের প্রতি আমরা সচেতন হই না। মহিলাদের বয়স যত বাড়ে তাদের স্বাস্থ্যেরর ঝুঁকিও তত বাড়ে। এ সময় তাঁদের শরীরে নানা ধরণের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই প্রয়োজন হয় বেশি যতেœর ও সতর্কতার। কিন্তু অধিকাংশ বৃদ্ধার প্রতি পরিবার সেই সর্তকতা মেনে চলে না। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণেও অনেক বৃদ্ধা অবহেলার শিকার হন। জীবনের প্রয়োজন গুলোর ক্ষেত্রে বৃদ্ধাদের প্রয়োজনকে পরে স্থান দেয়া হয়। সামাজিক দ্বন্ধের কারণেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। দুই বা তিন ছেলে থাকলে কেউ একা মায়ের দায়িত্ব নিতে চায় না। অথচ পরিবার এবং সমাজকে সারা জীবন তাঁরা কিছু না কিছু দিয়ে এসেছেন। কারণ, তাঁরা আমাদের কারো না কারো মা-বাবা কিংবা আত্মীয় পরিজন। আসল কথা হলো বৃদ্ধ বয়সের অসহায় অবস্থা সবার জীবনেই আসবে। কাজেই জীবনের শেষ সময়টুকু তাঁরা যাতে নিশ্চিত ভাবে শুধু নয়, আনন্দের সাথে কাটাতে পারে তার ব্যবস্থায় সবারই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রবীণদের অবস্থা যেনো এতোটা শোচনীয় না হয়/মানে বয়স্ক মানুষ গুলোকে সংসার, সন্তান, প্রিয়জন, প্রিয় পরিবেশ ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে না হয়। অথচ একটু সহনশীলতা, একটু উদারতা ও আন্তরিকতা যদি পরিবারের সবার মাঝে আনন্দে, তৃপ্তিতে, সিরাপত্তা ও নির্ভরশীলতার মধ্যদিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। আর সেটাই সবার প্রচেষ্টা হওয়া প্রয়োজন। তা নয় কি? ঠিক বলিনি!


শেয়ার করুন