প্রবাল দ্বীপে স্মরণীয় আমার একদিন

abu-bakar-and-abdur-rahimমুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক

প্রবাল দ্বীপে একদিন (সেন্টমার্টিন) ২২ জানুয়ারি ২০১৬ইং কক্সবাজার অনলাইন প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ভ্রমণের আমার স্মরণীয় একদিন। সর্বপ্রথম প্রবাল দ্বীপে একদিন ভ্রমণের দাওয়াত পেয়েছি আনছার ভাইয়ের মাধ্যমে। তারপর কক্সবাজার নিউজ ডট কম এর সম্পাদক ও প্রকাশক অধ্যাপক আকতার চৌধুরীর সাথে আলাপ করে জানতে পারি, ২২ জানুয়ারি অনলাইন প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে সেন্টমার্টিন তথা প্রবাল দ্বীপে একদিন ভ্রমণ করা হবে। ২২ তারিখের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমার সহধর্মীনি কুলছুমা আকতার মুনমুনের সাথে আলাপ করলে, তিনি বলেন, আমি তো শারীরিক ভাবে অসুস্থ, এই সময় বাইরে বেড়াতে যাওয়াটা কি ভাল হবে? সাংবাদিকরা যখন বেড়াতে যাচ্ছে সেন্টমার্টিনে, আপনি কেন যাবেন না? যান, সমস্যা নেই, তবে দোয়া করবেন। তার কথা ভেবে আমি চিন্তা করলাম, সহধর্মীনির গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের সাথে আলাপ করলে- ডাক্তার বলেন, ২৫ জানুয়ারি তো তার শেষ চেকআপ, সম্ভাব্য ডেলিভারি তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি। ডাক্তারের কথা শুনে, আমি একটু আশ্বস্ত হলাম এবং যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করলাম। ২১ জানুয়ারি, সারা রাত চিন্তায় ছিলাম। কখন প্রহর হবে, কখন রওয়ানা দিব স্বপ্নের সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে! ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে অজু করে ফজরের নামাজ আদায় করলাম ও সহধর্মীনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কথা ছিল, টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে ভোর ৬টায়। আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে বের হয়ে পড়লাম, পথিমধ্যেই পেলাম একটি সিএনজি। সেই সিএনজি’র মাধ্যমেই সোজা কক্সবাজার বাস টার্মিনাল গিয়ে থামলাম। সেখান থেকে শহরের আল হেরা হোটেলের সামনে থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বাসে উঠলাম। বাস কয়েক মিনিটের জন্য যাত্রা বিরতি করেছিল উখিয়ার থাইংখালীতে। এরপর সোজা টেকনাফের দমদমিয়া কেয়ারী জাহাজ ঘাটে পৌঁছলাম সকাল ৯টার দিকে। তারপর জাহাজ ঘাটস্থ চায়ের দোকানে হাল্কা নাস্তা সেরে কেয়ারী জাহাজে করে সেন্টমার্টিনে উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে জাহাজে সবাই মিলে অনেক আনন্দ উপভোগ করলাম, ভুলে গেলাম বাড়ি ঘরের কথা! সাড়ে ১২টার দিকে গিয়ে পৌঁছলাম সেন্টমার্টিন। এরপর সেখান থেকে দুপুর ১টায় উঠলাম ময়নামতি রিসোর্টে। তারপর ফ্রেশ হয়ে জুমার নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে গেলাম। নামাজ আদায় করে সবার জন্য দোয়া প্রার্থনা করলাম, কিন্তু স্পেশাল ভাবে দোয়া কামনা করেছি গর্ভাবস্থায় রেখে আসা আমার সহধর্মীনির জন্য। পরে হোটেলেই দুপুরের খাবার সেরে, কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিলাম। DSC_0149_1বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রবাল দ্বীপে একদিনের প্রথম কর্মসূচী হিসেবে দুই দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলায় অংশ গ্রহণ করলাম। এর পূর্বে বেশ কয়েক মিনিট বিভিন্ন ঢঙে ফটোসেশন করা হয়। দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে এক পর্যায়ে গোল করতে আঘাত পেলাম। শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা আমি না পেলেও, আমাদের দল ১-০ গোলে বিজয়ী হয়। দুই দলের নেতৃত্বে ছিলেন আমাদের দলে আকতার ভাই (যদিও পরে রেফারি), পরে আনছার ভাই দায়িত্ব পালন করেন, অন্য দলে ইসলাম মাহমুদ ভাই। পরে আকতার ভাই উভয় দলকে বিজয়ী ঘোষণা করে ৫০০ টাকা পুরস্কার প্রদান করেন। পরে আমরা রুম মিটরা (আমি, দুই ফারুক ও মনির) মিলে লেখক ড. হুমায়ুন আহমেদ এর বাংলো দেখতে গেলাম ও ফটোসেশন করলাম। বাংলো যাওয়ার পথে প্রবাল দ্বীপের সৈকত, পাথর ও হাল্কা বাতাসে বালি মিশ্রিত হাওয়ায় মজা উপভোগ করার মাঝে, হঠাৎ গর্ভাবস্থায় ফেলে আসা সহধর্মীনিকে খুব মিস করেছি এবং এই মুহুর্তটি এক ভাইয়ের কাছেও শেয়ার করেছিলাম। পরে অনেক ঘুরাঘুরি করে ৪ জনই হোটেল রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। এই মুহুর্তেই রেখে যাওয়া মোবাইল ফোনের কথা মনে পড়ল। দেখলাম, ওই মুহুর্তে সহধর্মীনির ৩টি মিসকল, সাথে অন্যান্য নাম্বারেরও ফোন কল। এর পর পরই সহধর্মীনির মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানতে পারি, সবচেয়ে মজার খবরটি! আর তা হলো, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দ্বিতীয় সন্তানের জনক হলাম আমি। উল্লেখ্য, আমার প্রথম সন্তান আয়েশা ছিদ্দিকা। কিন্তু কথাটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, তারপর সুখবর শুনে সবাইকে জানালাম এবং মিষ্টি খাওয়ার ঘোষণা দিলাম। ও হে, আমার নবাগত সন্তানের নামটি আগেই ঠিক করা ছিল। তাই উপস্থিত সবাইকে নবাগত সন্তানের নামটিও (মুহাম্মদ আবদুর রহমান) জানিয়ে দিলাম। এরপর ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিলাম। তারপর মাগরিবের নামাজ আদায় করি, ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে স্ত্রী ও সন্তানের সুস্থতা কামনা করে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে মোনাজাত করলাম। এশার নামাজ আদায় করে, মসজিদ থেকে বের হয়ে সেন্টমার্টিনবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যোগদান করলাম। মিটিং শেষ না করেই, রুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা। মাঝপথে সেন্টমার্টিন আসাকে স্বার্থক করার জন্য একটি রূপচাঁদা মাছ ফ্রাই করে দুই জন মিলে খেয়ে হোটেলে গিয়ে উঠলাম। পরে একটু বিশ্রাম নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করি এবং র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও বিজয় আমার, একটি ডায়েরি পুরস্কার হিসেবে পেলাম। এরপর ঘুমাতে গেলাম, আল্লাহর রহমতে তারপর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ছেড়াদ্বীপ যাওয়ার জন্য সবাই মিলে একটি গাম বোট রিজার্ভ করে রওয়ানা হলাম। ছেড়াদ্বীপ যাওয়ার পথে ঢেউয়ের কারণে সবাই একটু ভয় পেলেও, আল্লাহর রহমতে সহী সালামতে সবাই সুস্থ ভাবে পৌঁছতে পারি। সেখানে একটি পরিবারের বসবাস, আর পাথরের সাথে সাগরের গর্জনসহ আল্লাহর সৃষ্টি স্বচক্ষে দেখলাম ও সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। পরে সেখান থেকে সেন্টমার্টিনে ফেরত আসি এবং তড়িঘড়ি করে হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিজ বাসস্থানে ফেরত আসার জন্য জাহাজে উলাম এবং ঠিক আগের মতো আনন্দ করে জাহাজের সময়টুকু অতিবাহিত করি। পরে সন্ধ্যার দিকে সবাই টেকনাফে ফেরত এসে, বাসে করে যার যার ঘরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
কক্সবাজার পৌঁছলাম রাত প্রায় ৯টার দিকে, সেখান থেকে নবাগত সন্তানের জন্য কিছু কেনাকাটা করে রামুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম এবং সুন্দর ভাবে রাত ১১টার দিকে গিয়ে পৌঁছলাম ঘরে। তারপর নবাগত সন্তানের চেহারা মোবারক ও সুস্থ স্ত্রীকে দেখলাম এবং আবারও আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করি।
ছবির ক্যাপশন :
১। সংবাদ কর্মী মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক ও নবাগত সন্তান মুহাম্মদ আবদুর রহমান।


শেয়ার করুন