বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বিশেষ ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তারা

‘প্রকৃতি সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে, বিশ্ব পরিবেশ দিবস পরিবেশগত কর্মের জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিন। জাতিসংঘ পরিবেশ প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা এবং পদক্ষেপকে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিবছর পরিবেশ দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
১৯৭২ সালে ৫ জুন থেকে ৬ জুনের মধ্যে স্টকহোম সুইডেনে মানব পরিবেশ সম্পর্কিত স্টকহোম সম্মেলনের পুথম দিনে জাতিসংঘ জেনারেল অ্যাসেমব্লির মাধ্যমে বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তার পর থেকে প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপিত হয় এবং পরিবেশ সচেতনতা এবং সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৮৭ সালে পরিবেশ দিবস কার্যক্রম উদযাপনের জন্য একটি হোস্ট দেশ নির্বাচন করে পরিবেশ দিবসের কার্যক্রমের হোস্টকে আবর্তিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং প্রতিবেশ পূণরুদ্ধারের জন্য ২০২১-২০৩০ জাতিসংঘ প্রতিবেশ পূণরুদ্ধার দশকের সূচনা হচ্ছে। প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে সফল করতে জাতিসংঘ ব্যাপক হারে গাছ লাগানো,সবুজ শহর, সবুজ উদ্যান, শহরে বাগান তৈরী, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নদী ও উপকূল পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন। মোটা দাগে বলছেন প্রকৃতির সাথে শান্তি স্থাপন করার। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বাংলা ভাবানুবাদ করা হয়েছে ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার,হোক সবার অঙ্গিকার’ স্লোগানের ভাবানুবাদ করা হয়েছে ‘ প্রকৃতি সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি’।

বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে । গতকাল বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, ইসাবেলা ফাউ্ডশেন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার, নেচার কনসারভেসন ম্যানেজমেন্ট, হালদা নদী রক্ষা কমিটি, নদী অধিকার মঞ্চ, রিভার বাংলা এবং পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজন কওে একটি বিশেষ ভার্চুয়াল সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।

সভাপতিত্ব করেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। এ বিষয়ে আলোচনা করেন নেচার কনজারভেসন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম মুঞ্জুরুল হান্নান খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন, নদী অধিকার মঞ্চের সদস্য সচিব শমসের আলী। আরও বক্তব্য রাখেন উক্ত সভার প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মোহাম্ম আলী হোসেন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সেক্রেটারি জেনারেল প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান এবং সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সদস্য শাহ্জিয়া শাহ্রিন আনিক।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, গতবছর আমরা তিনটি ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করেছি। সামনে বর্ষকাল, জানি না কী হয়। এই বর্ষাকাল আসলেই আমার বুকটা দুরু দুরু করে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার কারনে সমুদ্রপৃষ্ঠরে উচ্চতা বাড়ছে।এই সমস্যা ভবিষ্যতে আমাদের কী ভয়াবহ পরিনতি ডেকে আনবে, তা ভাবলেই শিহরিত হই। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খেলার মাঠ নষ্ট করো না।পরিবেশ নষ্ট করো না।

তিনি আরও বলেন, সোনাদিয়া প্রাকৃতিক ইকো সিষ্টেম মহান আল্লাহ্ তায়লার সৃষ্টি। তা আমরা তৈরি করতে পারবো না।এখানেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে সোনাদিয়ার পরিবেশ নষ্ট না করার ।
হালদা নদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হালদার বিষয়ে আমাকে দায়িত্ব দেন। আমি সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করি। সমস্যা চিহ্নত করি। সমাধানে উদ্যোগ নিই। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হালদার সুরক্ষায় একটি কমিটি করে দেন।হালদার পাড়ে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেই ক্ষতিক্ষর পাওয়ারপ্ল্যান্টটি বন্ধ করে দিবো।আমরা তা করছি।
তিনি বিভিন্ন উদাহরণ টেনে বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রতিটিক্ষেত্রে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার’ সারাবিশ্বই ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেছে। এই সময়ে জলবায়ু বিষয়টি ভীষণভাবে ভাবাচ্ছে। এখন যে ডিজাস্টার হচ্ছে এর জন্য দায়ি আমরাই। এই সময়ে আমরা যদি সজাগ না হই, তাহলে আমরা কিন্তু ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বো।
তিনি আরও বলেন, জীববৈচিত্র বিষয়টি খুবেই গুরত্বপূর্ণ, তা ঠিক রাখতে নানা কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। সরকার জীববৈচিত্র রক্ষায় আইন করেছে।পরে তহবিল তৈরি করা হয়েছে। সরকার জীববৈচিত্র রক্ষায় বদ্ধপরিকর। আমাদেরও বেসরকারি উদ্যোগে তহবিল তৈরি করা উচিত।এই তহবিল দিয়ে জীববৈচিত্র রক্ষায় অংশগ্রহণ করি, তাহলে অনেক কাজ এগিয়ে যাবে।
মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে জীববৈচিত্র তহবিলকে কাজে লাগে লাগাতে হবে। একাজে তরুণদের, ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ তার মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘ মানুষের জীবন, জীবিকা, স্বাস্থ্য এবং সুস্বাস্থ্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে প্রতিবেশ ব্যবস্থা জড়িত। পানি হচ্ছে প্রতিবেশ পরিষেবাগুলির মৌলিক উপাদান। দূষিত পানি মৃত্যও হার বৃদ্ধিও কারণ ও বিশ^ব্যাপী রোগব্যাধির অন্যতম কারণ। এবারের বিশ^ পরিবেশ দিবসটি প্রকৃতি ধ্বংস থামানোর এবং হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি ফিরিয়ে আনার প্রতিজ্ঞা।পুনরায় পরিকল্পনা করুন। পুনরায় তৈরি করুন। পুনরুদ্ধার করুন। এটা আমাদের মুহূর্ত। আমরা পেছনে যেতে পারবোনা তবে আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাসগুলি প্রকৃতিবান্ধব করতে পারি, নদী এবং উপকূল পরিষ্কার করতে পারি ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে পারি’।

নেচার কনজারভেসন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম মুঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, ‘এ পর্যন্ত যে সকল প্রতিবেশ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে তার একটি তালিকা তৈরী করে তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করে তা পুনরুদ্ধার করতে হবে । প্রাকৃতিক বনকে কোন অবস্থাতেই মানুষের বিনোদনের কেন্দ্র তথা সাফারি পার্ক, ইকো পার্ক করা যাবে না। প্রাকৃতিক বনকে প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই দু’য়ের সমন্বয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী সিস্টেম একটি অন্যতম ইকোসিস্টেম। এই নদীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং বসবাসের অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠেছে। মরে যাওয়া নদীগুলো পুনরুদ্ধার এবং জীবিত নদীগুলোর সংরক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলার একমাত্র উপায়। ইকোসিস্টেম সংরক্ষণে এ জন্য প্রয়োজন জন সম্পৃক্ততা, রাজনৈতিক অঙ্গীকার, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধান। ২০২১ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে হালদা নদীর (বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ) ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার বাংলাদেশের জন্য একটি সফল ও অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে গাছ জন্মাতে পারি। বাগান সৃজন এবং সবুজ শহর তৈরী গুরত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখতে পারে ।

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন. নদী, প্রকৃতি, পরিবেশ তথা প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে সচেতনতা একটা গুরত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে। আর এ বিষয়টিই বরাবরই উপেক্ষিত। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষা না থাকলে জ্ঞান আসবেনা, আর জ্ঞান না হলে দক্ষতা আসবেনা,দক্ষতা না থাকলে সচেতনতা তৈরী হবে না। আর সচেতনতা তৈরী না হলে পুনরুদ্ধার বা সংরক্ষন কোনটিই হবে না। সচেতনতা তৈরী ও সরকার কর্তৃক প্রণিত বিভিন্ন আইন জনসমক্ষে প্রচারের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা গুরত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সরকার যদি এধরনের সংস্থাসমূহকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে উৎসাহিত করে তাহলে প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের কাজ আরো এগিয়ে যাবে। মোদ্দা কথা হলো যদি আমরা প্রতিজ্ঞা করি যে আমরা পৃতিবেশে ধ্বংস করবোনা তাহলে প্রতিবেশ রক্ষার প্রশ্ন আসবে না। আসুন আমরা প্রতিবেশ ধ্বংস না করি।

নদী অধিকার মঞ্চের সদস্য সচিব শমসের আলী বলেন, ‘ পরবিশের্কমীরা র্আথকি বা অন্য কোন ফায়দা হাসলিরে জন্য কাজ করনো।তারা কারো ক্ষতি না কর, নিজেদের  ও পরর্বতি প্রজন্মরে সুস্থ্য ভাবে বেঁচে থাকার তাগিদ থকেে কাজ কর। দেশেরে র্কণধার হসিাবে সরকাররে দায়ত্বি হলো, পরবিশের্কমীদরে স্বদচ্ছিার মুল্যায়ন করা এবং দশেরে ভবষ্যিৎ প্রজন্মরে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার পরবিশে তরৈী করা।
উক্ত আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার কালের কন্ঠ ও চ্যানেল আই।


শেয়ার করুন