পৌরসভায় সিইও নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় সরকারের অনেক জনপ্রতিনিধি

সিটিএন ডেস্কঃ 

বাংলাদেশে সরকার প্রথম শ্রেণির পৌরসভাগুলোতে একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বিষয়টির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে।

সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মূলত বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভাগুলোর সার্বিক কাজে গতি আনার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ।

তিনি বলেন, “বেশিরভাগ পৌরসভাতে রাজস্ব আদায়ের কাজটি নিয়মিত হয় না। যে কারণে অনেক পৌরসভাই নিজেদের কর্মীদের বেতন-ভাতা নিজেরা সংস্থান করতে পারে না। এ কারণে পৌরসভার কার্যক্রমে গতি আনতে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।”

প্রথম শ্রেণির পৌরসভা বলতে সিটি কর্পোরেশনের বাইরে পুরনো ও বড় জেলার পৌরসভাকে বোঝানো হয়, এমন পৌরসভার সংখ্যা ১৯৪।

স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, প্রাথমিকভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত কেবল প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে, এরপর পর্যায়ক্রমে সব পৌরসভাতেই হবে এই নিয়োগ।

পৌরসভাগুলোতে সিইও হবেন জেলা প্রশাসনে কর্মরত সহকারী কমিশনার বা সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

সিনিয়র সচিব মি. আহমেদ বলেছেন, এই মূহূর্তে দেশের ১০টি পৌরসভাতে সিইও হিসেবে ১০জন সরকারি কর্মকর্তা কাজ করছেন।

জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে প্রশ্ন যদিও সরকার বলছে, পৌরসভার কাজে গতিশীলতা আনার জন্য নতুন উদ্যোগ নেয়া, কিন্তু ইতোমধ্যেই সিইও’র বেতন কোথা থেকে হবে এবং তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন কি-না, এ নিয়ে চিন্তিত অনেক জনপ্রতিনিধি।

দেশের উত্তর এবং দক্ষিণ অঞ্চলের পাঁচটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার নির্বাচিত মেয়রদের সাথে কথা বলেছে বিবিসি।

তারা বলেছেন, তাদের আশংকা এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজের স্বাধীনতা ও পরিবেশ ব্যাহত হতে পারে।

নাম প্রকাশ করে বিবিসির কাছে মন্তব্য করতে চাননি তারা।

তারা বলছেন হঠাৎ কেন এমন একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার, তা নিয়ে তাদের মতামত নেয়া হয়নি।

পয়ঃনিষ্কাশনের মত অনেক কাজ করে পৌরসভা, জনপ্রতিনিধিদের আশংকা সেখানে তাদের কর্তৃত্ব খর্ব হতে পারে

কিন্তু সিনিয়র সচিব মি. আহমেদ বলছেন, বিষয়টি নতুন নয়, পৌরসভা আইন ২০০৯-এ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি বলা আছে।

তিনি বলেন, “এটি নতুন কিছু নয়, এটি পৌরসভা আইনে বলা আছে। জনবল সংকটের কারণে আমরা সেটা করতে পারিনি সব সময়। কিন্তু আইনে আছে সে কারণে পৌরসভার সার্বিক কাজে গতি আনার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”

জনপ্রতিনিধিদের আরেকটি অংশ চিন্তিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বেতন কোথা থেকে হবে সে নিয়ে।

নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরি বলছিলেন, “সরকারের উদ্যোগ সমর্থন করি আমি, কারণ ৯০ শতাংশ পৌরসভার কর্মীদের বেতন হয় না, বিদ্যুৎ বিল এবং খাজনা বকেয়া।

খারাপ অবস্থা, এগুলো ঠিক করা দরকার। কিন্তু এর মধ্যে যদি সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনটাও পৌরসভাকেই দিতে হয়, তাহলে আমাদের ওপর বোঝা বাড়বে।”

জনপ্রতিনিধিদের সাথে প্রশাসনের দ্বন্দ্বের আশংকা বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশে প্রায়শই উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে প্রশাসনের দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায়।

এখন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের আশংকা সে দ্বন্দ্ব সামনের দিনে পৌরসভার ক্ষেত্রেও ঘটতে দেখা যাবে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলছেন, “সরকার যদি পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ নেয়, তাহলে সেটি সফল হবার সম্ভাবনা কম।

কারণ সক্ষমতা বাড়াতে হয় ভেতর থেকেই। কিন্তু সরকার যদি এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেটি সম্ভব।”

তিনি এক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সাথে প্রশাসনের দ্বন্দ্বের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের দেশে যেটা দেখা যায় যে এখন উপজেলাগুলোতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারেরা চেয়ারম্যানদের ঠিক মানতে চান না।

আবার সরকার ইউএনওদের কথা শোনে, চেয়ারম্যানদের কথা শোনে না। ঠিক একই জিনিস পৌরসভাতেও হবে বলে আমার আশংকা।”


শেয়ার করুন