পাহাড়, পাহাড় ধস এবং মৃত্যুর মিছিল

মাহ্ফুজুল হক :

পাহাড় – প্রচুর মাটি বা পাথরের বিশালাকার ঢিবি সাধারণতঃ লম্বালম্বীভাবে অবস্থান করে, এবড়ো থেবড়ো, কোথাও নিচু কোথাও উঁচু, পর্যায়ক্রমে উঁচু হয়, এক চূড়া থেকে আর এক চূড়া মাঝখানে গভীর খাদ, ক্ষেত্র বিশেষে বেশ চওড়া উপত্যকা। একই শ্রেণির লম্বালম্বী এক প্রান্তে একেবারে নিচু – মনে হয় যেন উঁচু মাটির ঢিবি আর অপর প্রান্ত বা মাঝামাঝি আকাশচুম্বী পর্বত। সচরাচর এক পাহাড়ের সাথে অপর পাহাড় অথবা পাহাড় শ্রেণির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের মিল খুব বেশী হয় না। স্থলভাগের মাটি যেরূপ বিভিন্ন প্রকারের তদ্রƒপ পাহাড়-পর্বতেও রয়েছে নানা প্রকার মাটির স্তর – কাদা, দোআঁশ, বালি বা জমাট পাথর। মরুভূমিতে বালির পাহাড়ও (গড়ঁহফ) দৃষ্টিগোচর হয়। সমুদ্র তলদেশে রয়েছে বিশালাকৃতির পাহাড় পর্বত। লোহিত সাগরের তলদেশে অনেক পাথরের পাহাড় রয়েছে যেগুলোতে আটকে ও ধাক্কা খেয়ে জাহাজ ডুবে বহু রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটেছে বলেই এর নাম হয়েছে লোহিত সাগর বা রক্ত সাগর। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণী হলো – হিমালয় পর্বতমালা, হিন্দুকুশ পর্বতমালা, আন্দিজ পর্বতমালা, রকি পর্বতমালা, উরাল পর্বতমালা ইত্যাদি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এর কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি যা হিমালয়ের সর্বোচ্চ চূড়া এবং এটির অবস্থান নেপালে। যদিও সাধারণতঃ পাহাড় শ্রেণি আকারে (ঝবৎরবং ড়ভ সড়ঁহঃধরহং) অবস্থান করে, তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। যেমন ইংল্যান্ড, জাপান, মাদাগাস্কার প্রভৃতি দ্বীপদেশের পার্বত্যাঞ্চল। আমাদের মহেশখালি দ্বীপেও উত্তর দক্ষিণ আড়াআড়ি লম্বা পাহাড় আছে। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে লম্বালম্বী পাহাড়-পর্বতের অবস্থান বহু স্থানে দৃষ্টিগোচর হয়। যেমন- দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালা ও উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতমালা প্রশান্ত মহাসাগর উপকূল জুড়ে দুই মহাদেশ ব্যাপী অবস্থিত। এমনকি আমাদের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে দীর্ঘ পাহাড়ের সারি আমরা দেখি। সর্বোচ্চ উচ্চতার পর্বত শৃঙ্গ দেখে মনে হয় যেন আকাশ ছুঁয়েছে। পাহাড় আর মেঘের মিতালী দেখে আমরা ছোট বেলায় ভাবতাম – পাহাড় চূড়ায় চড়ে বসলে মেঘ ছোঁয়া যেতো। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গেয়েছেন, ’আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ।’ পাহাড় স্থিরতা, সৌম্য আর প্রশান্তির প্রতীক।

পার্বত্যাঞ্চলে ঘন গাছপালা থাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আবার তুন্দ্রা, মেরু অঞ্চলে পাহাড় গাত্র বরফে আচ্ছাদিত থাকে। বৃষ্টির পানি ও বরফ গলা পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয় নদ নদী, হ্রদ ইত্যাদি। দেখা যায়, পৃথিবীর বড় বড় নদীগুলোর উৎস পার্বত্যাঞ্চল। পাহাড়-পর্বত থাকলেই বৃষ্টিপাত হতে হবে এমন কোন কথা নাই। মরু অঞ্চলে উঁচু উচুঁ পর্বত থাকলেও সেখানে খুব একটা বৃষ্টিপাত হয় না। তবে পর্বত গাত্র ও চূড়ায় একপ্রকার শীতল আবহাওয়া সচরাচর বিরাজ করে। মাটির পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর গাছ পালা জন্মালেও পাথুরে পাহাড়ি এলাকায় কোন উদ্ভিদই জন্মায় না, একেবারেই ন্যাড়া কতগুলো জমাট পাথরের বিশাল স্তুপ যেন। বনাঞ্চল যেমন বিভিন্ন জাতের পশু পাখির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র সেরূপ পার্বত্যাঞ্চলেও প্রচুর গাছ পালা থাকায় সেখানে পশু পাখি অবাধে বিচরণ করে।

সৃষ্টির প্রারম্ভে এই পৃথিবী ছিলো পানিতে ভর্তি (গলিত লাভা, উত্তপ্ত পানি ইত্যাদি তরল পদার্থ)। টলটলায়মান অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে মজবুত ভিত দেবার লক্ষ্যে স্থাপিত হয় পাহাড়-পর্বত পেরেক পোঁতার মতো করে। বহু হাজার বছরের ব্যবধানে পৃথিবী হয় স্থির, উত্তপ্ত অবস্থা ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসে। স্থিতাবস্থা আসার পর পর্যায়ক্রমে গাছ পালা, পশু পাখি, মানুষ ইত্যাদি অস্তিত্ব লাভ করে। এছাড়া আরও বহুবিধ প্রয়োজনে পাহাড় পর্বত সৃষ্টি করা হয়। মহান আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, ’আর যমীনকে আমি বি¯তৃত করেছি এবং তাতে সুদৃঢ় পাহাড় স্থাপন করেছি।’ ’আর যমীনে তিনি স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা যাতে তোমাদের নিয়ে যমীন হেলে না যায় এবং নদ নদী ও পথসমুহ যাতে তোমরা পথপ্রাপ্ত হও।’

আর সাগর চির কল-কোলাহলময়, অশান্ত আর বিশালতার প্রতিবিম্ব। সাগর আর পাহাড়ের দীর্ঘ মিতালীই কক্সবাজারকে দিয়েছে অপরূপ সাজ, অনন্য সাধারণ পরিচিতি। স্বল্প দ্রষ্টা, স্বল্প আয়ু আর স্বল্প চিন্তুক মানুষ যখন স্বীয় স্বার্থে মহাশক্তিধর বিশ্ব স্রষ্টার Ñ যাঁর মুষ্ঠিতে তাবৎ সৃষ্টি ভাঁজ করা অবস্থায় থাকে – প্রতিষ্ঠিত প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উপর অবৈধ, অযাচিত, অপরিণামদর্শী হস্তক্ষেপ করে তার দীর্ঘমেয়াদী ফল স্বরূপ দেশে দেশে ঘটে বিপর্যয়। যে পাহাড়-পর্বতকে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ’আর আমি যমীনে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত যেন তা একদিকে হেলে না পড়ে।’ অবাধে পাহাড় কর্তন, গাছ-পালা নিধন, নদী ও সাগরের গতিপথ পরিবর্তন বা গতিপথে প্রতিবন্ধক স্থাপন, জলাধার ভরাট, ভূ-গর্ভ খনন, ভূ-গর্ভস্থ জৈবিক, রাসায়নিক ও খনিজ দ্রব্যাদির মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন, ক্ষতিকর গ্যাসের অবাধ ব্যবহার, উত্তোলিত ভু-গর্ভস্থিত তেল সাগরে নিক্ষেপ, পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ইত্যাকার অপকর্মগুলো মানুষ নিত্য করে চলেছে নিজেদের হীন ও কোটারি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। আমরা দেখি – পাহাড় কর্তনের ফলে মাটির গঠন প্রকৃতি বিনষ্ট হয়, মাটি ঝরঝরে হয়ে যায়, তার উপর বৃষ্টির পানি পড়লে সেই ঝরা মাটি পানির সাথে গড়িয়ে যায়, পানি চলার গতিপথ পাহাড়ি মাটি দ্বারা ভরাট হয়ে যায়, শহর বা জনপদের নালা-নর্দমা চলমান পানি ধারণ করতে না পেরে উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জনপদ ভাসিয়ে দেয়, কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়, মানুষের দুর্গতির একশেষ হয়, জান মালের অশেষ ক্ষতি সাধিত হয়। সেই মাটি মিশ্রিত পানি শহর জনপদ ভাসিয়ে নদীতে গিয়ে পড়ে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। নদী প্রয়োজনীয় পানি ধারণ করতে না পেরে দুকূল ভাসিয়ে দেয়। ফলতঃ বিরাট এলাকা প্লাবিত হয়ে মানুষ, গবাদি পশু, ক্ষেতের ফসল, ঘর বাড়ি বিনষ্ট হয়। আবার ওই মাটি মিশ্রিত নদী ও কূল ভাসানো পানি গিয়ে পড়ে সাগরে। যার ফলে নদীর মোহনা, সমুদ্র উপকূল ইত্যাদি ভরাট হয়ে নৌ চলাচলে মারাতœক বিঘœ ঘটায়, বন্দরের পোতাশ্রয় বিনষ্ট হয়, নদী ও নৌ পথগুলো নাব্যতা হারায়, উপকূলবাসী অশেষ কষ্টের শিকার হয়। উঁচু পাহাড় কেটে ফেলার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, বায়ু চলাচলের পথ পরিবর্তিত হয়, সামুদ্রিক ঝড় থেকে জনপদকে রক্ষা করতো যে পাহাড় তার অস্তিত্ব না থাকায় ঝড় সরাসরি জনপদে আঘাত হানে, প্রবল বাতাস ও জলোচ্ছ্বাস নিমিষে সবকিছু তছনছ করে দেয়।

পাহাড়ে বসতি গড়া নতুন নয় বরং বেশ পুরনো। পাহাড়িরা তো পাহাড়কেই তাদের বসতির জন্য বেছে নিয়েছে বংশ পরম্পরায়। সৌদি আরবে দেখেছি পাহাড় গাত্র থেকে আরম্ভ করে চূড়া পর্যন্ত বাড়ি-ঘরে ঠাসা। ওরা বেশিরভাগই বার্মার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। পার্থক্য হলো, সেখানকার পাহাড়গুলো জমাট পাথরের আর আমাদেরগুলো ঝরঝরে মাটির। পাথুরে পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে না। পাহাড়ি বলুন আর বাঙালি বলুন, যারা পাহাড় দখল করে বসতি গড়েন তারা বেশিরভাগই অবৈধ। অতি চালাকেরা মসজিদ, মন্দির, ক্যায়াং, চার্চ ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন ওই পাহাড়ি জমিতেই। উদ্দেশ্য যতো না ধর্মীয় তার চেয়ে বেশি পাহাড় দখলকে পোক্ত করা। কিন্তু দখলদারদের জানা উচিত, ইসলাম একটি পূতঃপবিত্র জীবন ব্যবস্থার নাম। যে ঘরে মহাপ্রভু আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম স্মরণ করা হবে তা কখনো অপরের মালিকানাধীন জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অপরের জমি, হোক তার মালিক সরকার বা অন্য কেউ, জবরদস্তি দখল করে তার উপর মসজিদ নির্মাণ করতঃ তাতে ইবাদাত করা হলে তা কবুল হওয়ার প্রশ্নই আসে না। ইসলামের মসজিদ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এই কয়টি কথা সংক্ষেপে বললাম। অপরাপর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যাপারেও নিশ্চয় জমির মালিকানা সংক্রান্ত স্বচ্ছতার বিষয়টি থাকবে।

শুধু পাহাড় খেকোদেরইবা দোষ দেই কেন। এক্ষেত্রে সরকার বাহাদুরও কম যায় না। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন রাস্তা-ঘাট তৈরি, স্থাপনা নির্মাণ, এমনকি কর্তাব্যক্তিদের আবাসন তৈরি প্রভৃতি কাজেও আমরা পাহাড় কাটতে দেখি। পাবলিক পাহাড় কাটলে হয় অপরাধ আর সরকার কাটলে হয় উন্নয়ন ! পাবলিক পাহাড় কাটে চুপিসারে, ছোট্ট পরিসরে। আর সরকার কাটে প্রকাশ্য দিবালোকে, বৃহৎ পরিসরে আর মহা ধুমধাম করে। স্মরণ রাখা দরকার, উভয় ক্ষেত্রেই কিন্তু পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে, মহান আল্লাহ্ তায়ালা প্রদত্ত প্রাকৃতিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হচ্ছে। পাবলিকের বেলায় কিছুটা মাতামাতি করলেও সরকারের বেলায় টু শব্দটি করে না পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে ক্ষত-বিক্ষত করার প্রতিশোধ নিতে প্রকৃতিও কিন্তু পিছ পা হয় না। বছর কয়েক আগে হিমছড়িতে কাটা পাহাড়ের পাশে শেড তৈরি করে অবস্থান করা মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত বেশ কিছু সৈনিকের পাহাড় ধসে মৃত্যুর খবর আমরা পড়েছি।

পাহাড় ধসে প্রতি বছর বহু মানুষ হতাহত হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমেই চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জেলায় দেড় শতাধিক মানুষ পাহাড় ধস ও পাহাড় চাপা পড়ে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে সংঘটিত এই সংখ্যাটি বাংলাদেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় পাহাড় ধস জনিত মৃত্যুর ঘটনা। আমরা তাদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। খাড়াভাবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের মাটি কেটে ঝরঝরে করে রাখা, জুম চাষের জন্য পাহাড়কে ন্যাড়া করা, যে শিকড় ও লতা-গুল্ম দ্বারা পাহাড়ের মাটি ঠাসাভাবে ধরা থাকে তা কেটে ফেলা অথবা অতিবৃষ্টি ইত্যাদি কারণে পাহাড়ের একাংশ হঠাৎ ধসে পড়ে। ধসে পড়া বিরাটকায় মাটির নিচে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট যাই থাকুক তা তাৎক্ষণিক মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, হাউজিং সোসাইটির নামে সরকারের পাহাড়ি জমি দীর্ঘমেয়াদে লীজ নিয়ে বিশাল এলাকাব্যাপী পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা, পাহাড়ের মাটি বর্ষার পূর্বে কেটে আলগা করে রাখা যাতে তা বর্ষার পানিতে ধুয়ে যায় ইত্যাদি অপকর্মগুলো শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ের অপরাধ নয় বরং বিশাল জনগোষ্ঠী ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে কৃত অপরাধ যার অসহায় শিকার এক দুইজন নয় বরঞ্চ শত শত কখনোবা হাজার হাজার। একজন লোককে কেউ হত্যা করলে আমরা তাকে খুনি বলি। যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিগন পাহাড় কেটে প্রকারান্তরে শত শত মানুষ হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত তাদের আমরা কি নামে আখ্যায়িত করবো? এদের শাস্তি হওয়া উচিত দৃষ্টান্তমূলক ও কঠোর। কেননা, এদের অপরাধ দিগন্তব্যাপী, মানুষ, পশু-পাখি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক গঠন প্রক্রিয়া ধ্বংস করার মতো সুদূরপ্রসারী, দীর্ঘমেয়াদী।

বাংলাদেশে অপরাপর দুর্যোগের সাথে পাহাড় ধসে (খধহফংষরফব) জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি একটি নতুন দুর্যোগ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এর আশু অবসান দরকার। মানুষ মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ (গধহ-সধফব ফরংধংঃবৎ) থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে পারে। তার জন্য দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা, পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানরতদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা, পাহাড় কাটা বন্ধে আইনের কঠোর ও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত, ভূমিদস্যু ও বনদস্যুদের হাত থেকে পাহাড় ও বনভূমি রক্ষা করা, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের বেলায় প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে বিকৃত না করা। পরিবেশবাদী সংগঠনের আরো উচ্চকন্ঠ হওয়া এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর যথাযথ, নিরপেক্ষ ও কার্যকরী পদক্ষেপ এক্ষেত্রে অতীব জরুরি। পাহাড় কর্তন শুধু ভূমি ধস নয় বরং বিরাট আকারে ভূমিকম্প ও ঝড় জলোচ্ছ্বাসেরও কারণ হতে পারে যার ফলে বিশালাকার ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে মানবগোষ্ঠী।

বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন, দুর্যোগ নাকি দুই প্রকার : প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট। কিন্তু ভূমন্ডলীয় ইতিহাস পর্যালোচনান্তে- ভূপ্রকৃতির উপর মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপ, প্রাকৃতিক কাঠামোর পরিবর্তন ইত্যাদির দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়ার কারণেই সমস্ত দুর্যোগগুলো সংঘটিত হচ্ছে যদি বলা হয় তবে কি বেশি বলা হবে? মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ’মানুষের কৃতকর্মের দরুণ স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ঘটে। যার ফলে আল্লাহ্ কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ তারপরও যদি মানুষ ধ্বংসাতœক পথ থেকে ফিরে না আসে তাহলে এই মৃত্যুর মিছিল আরো দীর্ঘতর হবে নিঃসন্দেহে।

সেল : ০১৮৬৯ ৮৬৬৯০০ তারিখ : ২১.০৬.২০১০ কক্সবাজার এডিটেড, রিভাইস্ড এন্ড রিপাবলিশ্ড ২৫.০৭.২০১৭


শেয়ার করুন