পাহাড় কাটা প্রতিরোধে ইসলাম

Md.Alamgir- ctnমাওলানা মুহাম্মদ আলমগীর :
আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা মানব পাচার, মাদক, ইয়াবা, দুর্নীতি, যানজট, জলজট, নারী-নির্যাতন, যৌতুকসহ কতিপয় সমস্যার অন্যতম হচ্ছে পাহাড়কাটা। পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পাহাড়-পর্বত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বারবার পাহাড় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “পাহাড়কে আমি জমিনের জন্য পেরেক হিসেবে সৃষ্টি করেছি” (সূরা নাবা, আয়াত ৭) এবং তিনি পৃথিবীর উপর বোঝা রেখেছেন যাতে কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও” (সূরা নাহল ১৫নং আয়াত)
তিনি আরো বলেন, “আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে জমিনবাসীকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি যাতে তারা পথপ্রাপ্ত হয়” (সূরা আম্বিয়া ৩১)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন- জমিনের মধ্যে গেড়ে দিয়েছেন পর্বতমালার পেরেক আর পানির দুটি ভান্ডারের মাঝখানে অন্তরাল সৃষ্টি করে দিয়েছেন। (সূরা আন নহল ৬১নং আয়াত)।
আর আমি জমিনে স্থাপন করেছি মজবুত উঁচু পাহাড় আর পান করিয়েছি সুপেয় পানি (সুরা আল মুরসালাত ২৭ আয়াত)
এই পাহাড় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এমনি সৃষ্টি করেননি। পাহাড় আল্লাহর এক বৈচিত্র সৃষ্টি। পাহাড়ের সৌন্দর্য মানুষের মন প্রাণ কেড়ে নেয়। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে পাহাড়ের ওজন স্থাপন করে দুনিয়ার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। যাতে পৃথিবী অস্থিরভাবে নড়াচড়া করতে না পারে। পৃথিবী নড়াছড়া করলে পৃথিবীর বুকে বসবাসকারীদের সীমাহীন অসুবিধা হত। জমিনকে স্থির রাখার জন্য, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও ভূমিকম্প রোধ করার জন্য পাহাড়ের হেফাজত করাই হচ্ছে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের নির্দেশ” পৃথিবীর যেখানে যতটুকু পাহাড় দরকার সে এলাকায় তিনি ততটুকু পাহাড় সৃষ্টি করেছেন। অযথা এগুলো তিনি সৃষ্টি করেননি। মানব জাতির কল্যাণের জন্য আল্লাহপাক পাহাড়গুলোকে স্থঅপন করেছেন আর এই পাহাড় অন্যায়ভাবে কেউ কাটতে পারবেনা। অন্যায়ভাবে পাহাড় কাটা হবে আল্লাহর সৃষ্টির সীমা লংঘন যা আল্লাহ দ্রোহিতার শামিল। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির জন্য পাহাড় কর্তন করা হলেও তা মানব জাতির স্বার্থের পরিপন্থি। কোটি কোটি মানুষকে, বিপদে ফেলে দুই একজন ব্যক্তি বিশেষ উপকৃত হবে এটি ইসলাম নয়। পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থ বা সংবিধান ও বৈধ হতে পারেনা। বাংলাদেশ সরকার পাহাড় কাটাকে নিষেধ করেছেন। আমরা দেখতে পাই যে, সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িসহ পাহাড়ী জেলাসমূহে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে বারবার ভূমিকম্প অনুভব হচ্ছে। বলতে গেলে প্রতি মাসে আমরা একবার দুবার মৃদু ভুমিকম্প টের পাই এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এটা নির্ণয় করা যায়। এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো পাহাড়ের যথেচ্ছ কর্তন। পাহাড় সম্পদকে আমরা নষ্ট করে ফেলছি। যথেচ্ছ পাহাড় কর্তন হচ্ছে। নানা জায়গায় আল্লাহ পাহাড় স্থাপন করেছেন প্রয়োজন মাফিক। অনেক অসাধু ব্যক্তি চুরি করে রাতের আঁধারে পাহাড় কাটে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আঁতাত করে মাটি বিক্রি করে, প্লট জমি তৈরী করে পাহাড়কে জমি হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায়, অসত্য কাজ ও হারাম। ইট তৈরীর করার জন্যও পাহাড় নষ্ট করা হচ্ছে। জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে ব্যক্তির কল্যাণে। ব্যক্তির কল্যাণে চুরি করে পাহাড় কাটা ইসলামের দৃষ্টিতে মহা অন্যায়। আমরা কলা চোর ও মুরগী চুরি করলে তাকে চোর বলি কিন্তু জাতীয় সম্পদ নষ্টকারী পাহাড়খেকো ভুমি দস্যু এতো বড় চোর এবং জাতির জঘন্যতম শত্র“কে চোর বলিনা কারণ সে সমাজে ভাললোক হিসাবে পরিচিত। এই ভদ্র ভাল মানুষটিই আল্লাহর সৃষ্টির সীমালংগন করে পাহাড় কাটে, কোটি কোটি মানব সন্তানকে বিপদের দিকে ঢেলে দিয়ে পাহাড় কেটে নিজে কোটিপতি হয় এবং রাতের আঁধারে চুরি করে পাহাড় কেটে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। দ্রুত পাহাড় কাটা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া জরুরী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা, ভুমিকম্প রোধ করা এবং পৃথিবীর স্থিতি ঠিক রাখার জন্য পাহাড় রক্ষার বিকল্প নেই।

লেখক: গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদ, মোবাইলঃ ০১৮১৯-৮২১৭৭০


শেয়ার করুন