কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মেগা বীচ কার্নিভাল

পর্যটক বরণে প্রস্তুত পর্যটন নগরী

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিশেষ প্রতিবেদক: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে প্রথম বারের মত আন্তর্জাতিক বীচ কার্ণিভালের আয়োজন করা হচ্ছে। দেশের প্রথম বীচ কার্ণিভালের পর্দা উঠবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। জমজমাট এই অনুষ্ঠান শেষ হবে পর্যটন বর্ষের দ্বিতীয় দিন ২ জানুয়ারি। তিন দিনব্যাপী এই কার্ণিভাল অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজার সৈকতে। বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে এই কার্নিভাল। থার্টিফাস্ট নাইট ও কক্সবাজারে এবার প্রথম বৃহৎ আয়োজন স্বপ্নের মেগা বীচ কার্নিভালকে সামনে রেখে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনসহ পর্যটন স্পট গুলো।
যদিও থার্টি ফাস্ট নাইট ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সকল প্রকার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নিদের্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত ২৭ ডিসেম্বর বিকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় জানানো হয় উপরের নির্দেশে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত। তবে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান বন্ধ থাকলে পর্যটকদের বিনোদনে কোন প্রকার ঘাটতি থাকবে না বলে আয়োজক সূত্রে জানাগেছে। তারা জানান, সন্ধ্যার পরে যে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল তা বিকালের মধ্যেই কিভাবে শেষ করা যায় এ ব্যপারে আমরা সিদ্ধন্ত নিচ্ছি। আমরা আশা করছি বীচ কার্নিভালের সকল আয়োজনই সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, গেল বছর আয়োজক কমিটির উদাসীনতার কারনে এই বীচ কার্নিভাল অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার আরো নতুনভাবে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের কক্সবাজারে আগমন ঘটবে। এই মুহুর্তে অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটক বরণের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে বলে জানান পর্যটন হোটেল-মোটেল জোনের ব্যবসায়ীরা। এবার শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, রামুর দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ পুরাকৃত্তি এলাকা, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির ও রাখাইন পল্লী, ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, ইনানী পাথুরে বীচ, হিমছড়ির অপরূপ ঝর্ণা, দরিয়ানগরসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট। বিশেষ করে থার্টিফাস্ট নাইট এর আগের দিন থেকে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়বে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজার। সৈকতের বালিয়াড়ীতে দাঁড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্ত অবলোকন, হাজার হাজার নারী-পুরুষের মহামিলন এবং সব বয়সের মানুষের উচ্ছ্বাস রাঙ্গিয়ে তুলবে সাগরকন্যা কক্সবাজারকে। এবার স্থানীয় এবং বাইরের সবমিলিয়ে ৫ লক্ষাধিক পর্যটক সমাগমের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার। তিনি বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশের ও কক্সবাজারের পরিবেশ পরিস্থিতি অনেকটা ভাল। ইতিমধ্যে বিভিন্ন আবাসিক আবাসিক হোটেল গুলো বুকিং হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল, গেষ্ট হাউস ও কটেজগুলোর অধিকাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এতে করে অন্যান্য বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। এবারে দেশী পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকের সমাগমও হবে বলে আশা করছেন হোটেল ব্যবসায়ীদের এই নেতা। জিয়া গেস্ট ইন এর স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব শফিকুর রহমান বলেন-ছোট-বড় মিলিয়ে তিনশতাধিক হোটেল-মোটেল, গেষ্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। এবার দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকেরও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি। তার মালিকানাধীন জিয়া গেষ্ট ইন ইতোমধ্যে অর্ধেকেরও বেশী রুম অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন বলে জানান। তবে তিনি অভিযোগ করেন-হোটেল-মোটেল জোন এলাকার যেসব বস্তি ও ঝুপড়ি এলাকা রয়েছে সেখানে বিভিন্ন ধরণের মাদক বিকিকিনি হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলোর বন্ধের জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান তিনি। এ দিকে পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে হোটেল-মোটেলগুলো সংষ্কার, সাগর পাড়ের কীটকট চেয়ারে রং লাগানোসহ অপরুপ সাজে সাজানো হচ্ছে দর্শনীয় পর্যটন স্পট গুলোকে। সাগরে গোসল করতে নেমে অপ্রত্যাশিত প্রাণহানি এড়াতে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সবমিলিয়ে সাগরকন্যা কক্সবাজারে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর মেগা বীচ কার্নিভাল উপলক্ষে গত ১৯ ডিসেম্বর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের উন্মুক্ত মδে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মেগা বীচ কার্নিভালের তিন দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রয়েছে দেশিয় ও আন্তর্জাতিকমানের নানা আয়োজন। এছাড়া দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে তিনদিনই ওপেন কনসার্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অনুষ্ঠেয় মিউজিক্যাল কনসার্টটি সরাসরি সম্প্রচার করবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্যাটালাইট চ্যানেল এসএ টিভি। যেখানে গাইবেন নগর বাউল জেম্স, ব্যান্ড লালন, কার্নিয়া, টিনা, ঐশী, নদী ও বাংলাদেশি আইডলের মং, আরিফ, মন্টিসহ সেরা ৬ শিল্পী। এছাড়া বাকি দুই দিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য তারকা শিল্পী গান পরিবেশনের কথা রয়েছে। কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, পর্যটক বরণে ট্যুরিস্ট পুলিশের সমন্বয়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানী রোধ ও তাদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স কাজ করবে। পাশাপাশি থাকবে মোবাইল টীম ও সাদা পোষাকে পুলিশ। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছে। পর্যটন বর্ষকে সামনে নিয়েই কক্সবাজারের পর্যটনকে প্রসার করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই প্রথম মেগা বীচ কার্নিভাল আয়োজন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, কিছুদিন আগে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে কার্নিভালের স্বপ্ন আরো একধাপ এগিয়ে গেলো। কার্নিভাল আয়োজনের সফলতা নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও গ্রে কর্তৃপক্ষ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।


শেয়ার করুন