পর্যটকের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে কক্সবাজার

fr0314সিটিএন ডেস্ক : 

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামেনি এমন হয়নি আগে কখনো। গেল কয়েক বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ছুটি কাটাতে সৈকত নগরীতে এসেছিল লাখো পর্যটক। কিন্তু এবারের চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে, এবারের ঈদে পর্যটক আগমনের হার অনেকটা কম হবে বলে জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা।

বৈরি আবহাওয়া, রাস্তাঘাটের বেহালদশা, আর ঈদের ছুটি কম থাকা এর মূল কারণ বলে দাবি করছেন তারা। তারপরও ঈদ পরবর্তী কয়েকদিনের মধ্যে পর্যটক আগমনের হার বাড়াতে পারে। অনিশ্চতার মধ্যেও এখানকার চার শতাধিক হোটেল মোটেল প্রস্তুত রয়েছে পর্যটকদের জন্য। প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসনও।

হোটেল দি কক্সটুডের রুম ডিভিশন ম্যানেজার আবু তালেব শাহ্ বাংলানিউজকে জানান, ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে খুব বেশি বুকিং হয়নি। অনেকে বুকিং দিয়েছেন, কিন্তু টাকা পরিশোধ করেনি। ফলে বলা যাচ্ছে না তারা আসবে কিনা। তবে সব কিছু ঠিক থাকলেও ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ওই হোটেলে অবস্থান করবেন প্রায় ১৫০ জনের মতো পর্যটক। যদিও এখানে ৫৯২ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে সমুদ্রসৈকতসহ কক্সবাজারের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়। গেল ঈদ উল ফিতরের ছুটিতেও এসব স্থানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয়। কিন্তু হঠাৎ টানা বর্ষণের কারণে ফিরে যেতে হয়েছে পর্যটকদের।তবে হোটেল, মোটেল আর বাংলোর বুকিং হলেও তা পর্যাপ্ত না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যটকদের বরণ করতে সৈকতনগরীর চার শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস প্রস্তুত। এবারের ঈদের ছুটি দিয়েই কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুমও শুরু করার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন হোটেল-মোটেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এবার অগ্রিম বুকিং সংখ্যা খুবই কম।

হোটেল সি প্যালেসের ম্যানেজার তানভীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গতবারের তুলনায় এবার পর্যটক সাড়া নেই বললেই চলে। মূলত রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে পর্যটকরা আসছেন না।

হোটেল ওশান প্যারাডাইসের রুম ডিভিশন ম্যানেজার মজিদুল আলম  জানান, ঈদ উপলক্ষে তাদের রয়েছে বিশেষ আয়োজন। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ছাদে তারা সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এছাড়া রয়েছে বিচিত্রা অনুষ্ঠান।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান  জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিটি ট্যুর অপারেটরের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়।

আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাকদ আবুল কাশেম সিকদার জানান, বিভিন্ন কারণে ক্রমশ কক্সবাজার ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে পর্যটকরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় আসন্ন ঈদে খুব কম সংখ্যক পর্যটক আসবে কক্সবাজারে। ঢাকা বা অন্যান্য স্থানে যোগাযোগ করছি। তারাও ভাল সাড়া পাচ্ছেন না।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় মানুষ এখন কক্সবাজারে বেড়াতে না এসে ভারতে ভ্রমণ করছে। ৭ হাজার টাকা দিয়ে বিমানে করে কোলকাতা যাওয়া যাচ্ছে। সেই তুলনায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বিমানে আসতে ৭, ৮ বা ৯ হাজার টাকা বিমান ভাড়া লাগছে। তাই পর্যটকরা এখন কক্সবাজার বিমুখ হয়ে বিদেশ ভ্রমণ করছেন।

তিনি জানান, তাদের কাছে খবর রয়েছে ঈদের ২য় দিন থেকে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক যাচ্ছেন ভারতে। ঢাকা-কক্সবাজারের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতা মুক্ত রাখা, আইন শৃঙ্খলার যথাযথ ব্যবহার, সমুদ্র সৈকতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা সহ বিভিন্ন দিকের উন্নয়ন করলেই কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম হবে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পর্যটক সংখ্যা যতই হোক আমরা প্রস্তুত রয়েছি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চত করার জন্য। ঈদ উল আজহা উপলক্ষে চালু হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের অবজারভেশন টাওয়ার। এছাড়াও সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। চালু হয়েছে হটলাইন নাম্বারও।

এছাড়াও কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, দরিয়ানগর, হিমছড়ি ও ইনানী পর্যন্ত বিশেষ জোনে ভাগ করে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করা হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ২০০ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত থাকবে।


শেয়ার করুন