পর্দা নামল ৪ দিনব্যাপী পর্যটন মেলার

Parjatan

পর্যটন ডেস্ক : রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে আয়োজিত চার দিনব্যাপী পর্যটন মেলা শেষ হয়েছে। সোমবার (১১ এপ্রিল) রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ মেলার পর্দা নামে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মেলায় ৮৪টি স্টল ও ৫টি প্যাভিলিয়নে ৪ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। সেজন্য এবারের মেলাকে সফল বলে মনে করছে আয়োজক কমিটি।

ভ্রমণ বিষয়ক পাক্ষিক ‘দ্য বাংলাদেশ মনিটর’ ১৩তম বারের মতো এ মেলার আয়োজন করে। মেলার টাইটেল স্পন্সর হিসেবে ছিল বেসরকারি বিমান সংস্থা ‘নভোএয়ার’। এতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মালেশিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের কিছু প্রতিষ্ঠানও অংশ নেয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন ‘দ্য বাংলাদেশ মনিটর’র সম্পাদক কাজী ওয়াহীদুল আলম।

তিনি জানান, এবারের মেলায় দশনার্থীদের আগমন ও ব্যবসা, দুই মিলিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।

ওয়াহীদুল আলম বলেন, চার দিনব্যাপী এ মেলায় ১২ হাজার দশনার্থী এসেছেন। গত বছর ৮ হাজার দশনার্থী ছিল। মেলায় অনেক বিদেশি ভিজিটরও আসেন।

পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে দেশের পর্যটন খাতের প্রতি মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলেই মেলায় সেল হয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি। আগের বছর হয়েছিলো ২ কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একাই ব্যবসা হয়েছে ১ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন মো. মফিজুর রহমান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার হাসান সোসাইন কাজীসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

‘দ্য বাংলাদেশ মনিটর’র জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ আলমগীর হায়দার বলেন, সরকারের ‘ভিজিট বাংলাদেশ’ কর্মসূচিকে সামনে রেখে আমাদের এই মেলার আয়োজন। এ মেলার প্রধান লক্ষ্য পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিয়ে দশনার্থীদের পর্যটনে উদ্বুদ্ধ করা। অথাৎ পর্যটন খাতের সবাইকে এ ছাতার নিচে আনা।

তবে, সমাপনী অনুষ্ঠানে এমন সাফল্যের কথা তুলে ধরা হলেও দ্বিমত পোষণ করেন স্টল মালিকরা। তারা জানান, চার দিনব্যাপী এই মেলায় গত বছরের তুলনায় দশনার্থী আগমন ও ব্যবসা অর্ধেক হয়েছে। তার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আগের মেলাগুলো বৃস্পতিবার শুরু হয়ে শেষ হতো শনিবার ফলে ছুটির দিনে দশনার্থীদের উপস্থিতি থাকতো ব্যাপক। কিন্তু এবার তার উল্টো চিত্র ছিলো।

স্টল নিয়ে বসা ‘হানিমুন টুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’র কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, এবারের মেলা পুরোই ফ্লপ। গত বছর ব্যবসা ও ভিজিটের উপস্থিতি বেশি। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। গত চার দিনে আগের বছরের অর্ধেকও ব্যবসা হয়নি।

ঠিক একই সুরে বলেন ‘মালিন্দো এয়ার’ মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ অফিসার গোলাম মো. সাকলাইন সেলিম। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, গতবছর মেলায় তিনশ’ জনের অর্ডার নিয়েছি। এবার পেয়েছি মাত্র ১০ জনের। মালেশিয়ায় ভিসা জটিলতার কারণে আমাদের ব্যবসায় ধস।

‘ইনোভা সার্ভিসেস লিমিটেড’র কর্মকর্তা সাইফ আনোয়ার রকি জানান, এবারের মেলা হতাশাজনক। নেই দশনার্থী, নেই ব্যবসা। তার প্রধান কারণ দেশি পর্যটনের প্রতি সাধারণ ম‍ানুষের আগ্রহ কম থাকা।

‘মাউন্টেইন ক্লাব টুরস’র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাহিরুল ইসলাম জানান, দেশের পর্যটনের প্রতি মানুষের আস্থা না থাকায় প্রতিবছর ২০ শতাংশ লোক বিদেশে বেড়াতে যায়।

‘রিজেন্ট এয়ারওয়েজ’র দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. শাওন উজ জামান অলিন বলেন, চার দিনব্যাপী মেলার শেষ দু‘দিন দশনার্থীদের উপস্থিতি কম ছিলো। এর কারণে ইনস্ট্যান্ট সেল অর্ডারও কম হয়েছে। তবে দশনার্থীদের মধ্যে প্রচারণা বেড়েছে। এ মেলায় বিশেষ অফার হিসেবে ঢাকা-পাতায়া-ঢাকার বিশেষ প্যাকেজে সাড়া পড়েছে।

‘সিএম ইন্টারন্যশনাল ইমিগ্রেশন সার্ভিস’র জেনারেল ম্যানেজার কামরুল আমিন জানান, দেশের পর্যটন শিল্পকে উপস্থাপন করতে এই মেলার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হলেও এখানে ‍আসলে সেই পর্যটন স্পটগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে আকৃষ্ট করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

এদিকে, র‌্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে মেলার ১৮ দর্শনার্থীকে পুরস্কার দিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-ইয়াঙ্গুন-ঢাকা একটি এয়ার টিকিট। দ্বিতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা এয়ার টিকিট।


শেয়ার করুন