নেতাদের বিপদে না ফেলার কৌশল খালেদার

july-400x265
আমাদের সময়.কম:
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চান না তার দলের ও জোটের নেতারা যারা আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখছেন তারা এখনই গ্রেফতার হোক কিংবা আন্দোলনে ব্যর্থ হোক। তারা আন্দোলন সফল করার জন্য মাঠে থাকবেন সেটাই চাইছেন। এই জন্য তার অফিসেও তার সঙ্গে কোন নেতাকে দেখা করার জন্য অনুমতি দিচ্ছেন না। বরং নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন তার গুলশানের অফিসে এসে পুলিশের হাতে বন্দী না হন। মাঠেই থাকেন। আন্দোলনে সফল হওয়ার জন্য অহিংস ও গণতান্ত্রিক উপায়ে কর্মসূচি পালন করেন। তাদের ব্যাপারে তিনি অফিসে থেকেই খবর পাবেন। তার নির্দেশনা পেয়ে অনেক নেতাই মাঠে রয়েছেন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় তারা পিকেটিং করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে মিটিং, মিছিলও করছেন। আবার কোন কোন নেতা মাঠে না থাকলেও গোপনেই দলের জন্য কাজ করছেন। অনেক নেতা মাঠে নেই কারণ তারা সরকারের টার্গেটে রয়েছেন। তাদেরকে পেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করবে। এই আশঙ্কায় তাদেরকে গ্রেফতার না হয়ে কৌশলে আতœগোপনে থেকেই মাঠের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এই রকম নির্দেশ যেই সব নেতাকে দেওয়া হয়েছে তাদের তালিকাও রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। এছাড়াও তাদের হাতে আরো একটি তালিকা রয়েছে যারা আন্দোলনে সরকারের দমন নিপীড়ন ও নির্যাতনের আশঙ্কা থেকে আতœগোপনে রয়েছেন। তারা মাঠে নামতে পারছেন না। নামলেই গ্রেফতার হয়ে যাবেন এমন কথাও বলে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু ওই সব নেতাদের ব্যাপারে হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ রয়েছে তারা নিজেরাই স্বেচ্ছায় আতœগোপনে রয়েছেন। তারা সরকারের মন্ত্রীদের ও সরকারি দলের অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সেই জন্য সুবিধাও নিচ্ছেন। আন্দোলনে তাদের কোন ভূমিকা না থাকার কারণও বের করেছেন। ওই সব নেতাদেরও তালিকা রয়েছে। তাদের ব্যাপারে এখনই কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে আগামী দিনে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই ধরনের নেতারা আগে ভাগেই দলীয় কৌশল জেনে সরকারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর সেটা করার কারণে তাদের আন্দোলনে সাফল্য আসতে সময় লাগছে। সব মিলিয়ে দল ও জোটের ত্যাগী ও মাঠের নেতাদের বিপদে না ফেলার কৌশল নিয়েছেন খালেদা।
বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপির ভেতরে ও জোটের কোন কোন দলের নেতারা রয়েছেন যারা দলের কর্মসূচি আগাম এখন আর জানতে পারছেন না। এই কারণে তারা কিছুটা হতাশ। কারণ তারা নিজেরা সুবিধা পাওয়ার বিনিময়ে দলের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে দেওয়ার অভিযোগে তাদের সব কিছুই থেকেই বাইরে রাখা হয়েছে। কেবল বলা হয়েছে আন্দোলন সফল করার জন্য কাজ করতে। কিন্তু তারা মাঠে নেই।
এই ব্যাপারে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ওই সব সুবিধাভোগী নেতাদের কেউ কেউ নেতিবাচক প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তারা বলছেন বিএনপি চেয়ারপারসন শুক্রবার যে কর্মসূচি দিয়েছেন এটা দলের ও জোটের নেতারা জানতেন না। আর সেটা ছাড়াও তারেক রহমানের নির্দেশে আন্দোলন চলছে বলেও তারা প্রচার করছেন। তবে এটা তারা অপপ্রচার করলেও বাস্তবতা হচ্ছে জরুরি অবস্থার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন জোট নেতাদের সঙ্গে কোন আলোচনা করবেন না। এই ব্যাপারে জোটের সদস্য একটি দলের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সঙ্গে ম্যাডামের আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে কথা বলার খুব একটা প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা কে কখন কোথায় থাকতে পারবো সেটা জানি না। আন্দোলন শুরু হলে সরকার আমাদেরকে গ্রেফতার করতে পারে, আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় আন্দোলন শুরু করার আগেই আমরা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে জোট নেত্রীই সিদ্ধান্ত নিবেন। আমরা সবাই মিলে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করবো। সেই হিসাবে আগে থেকেই কাজ চলছে। এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে জোটের নেতাদের দেখা করার মত কোন পরিবেশ নেই। যে নেতা গুলশান কার্যালয়ে যাবেন দেখা যাবে তাকেই পুলিশ গ্রেফতার করবে। ম্যাডাম মনে করেন গ্রেফতার না হয়েই কাজ করতে হবে। এই কারণে এখন কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। সেখানে যেতেও বারণ আছে।
এদিকে শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন যৌক্তিক পর্যায়ে না পেছানো পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন করে কোন কর্মসূচি দেননি। তবে আগেরটি চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন সরকারের সঙ্গে সমঝোতারও কথা বলেছেন। লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য দলের সকল স্তরের নেতা কর্মীদেরও দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন। এখনও পর্যন্ত তেমনভাবে সেটা সফল হচ্ছে না। তার সংবাদ সম্মেলনের পর রোববার থেকে এই পর্যন্ত হরতাল চলছে। অবরোধও রয়েছে। তা হলেও হরতালে জনগণের তেমন সাড়া নেই। নেতারাও মাঠে নেই। কেউ কেউ বলছেন, তিনি আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া মিলছে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তিন শতাধিক নেতার মধ্যে বেশির ভাগ নেতা মাঠে নেই। যুবদল, ছাত্রদলসহ দলের অনান্য অঙ্গসংগঠনের গুটি কয়েক নেতা ছাড়া বাকিরা মাঠের বাইরে। এই অবস্থায় আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে দলের একশ্রেনীর নেতারাই সংশয় প্রকাশ করে মাঠ পর্যায়ে হতাশা তৈরি করার চেষ্টা করছেন। বিএনপির ছাড়া জোটের অন্যান্য দলের নেতারাও তেমন মাঠে নেই। তাদের মধ্যে শঙ্কা বিএনপি বড় দল তার দলের নেতারাই নেই। আর জোটের নেতা হিসাবে তারা নেমে কি করবেন। তাছাড়া কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় তারা আন্দোলনের মধ্যে সমন্বয় করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু জোটের সদস্য এটি দলের প্রধান বলেন, আমাদের মধ্যে যোগাযোগ নেই বলে যারা কথা বলছেন সেটা ভুল। কারণ আমাদের মধ্যে যোগাযোগ কোন না কোন ভাবে রয়েছে। সেটা প্রকাশ করা যাবে না। যারা ঢালাও ভাবে বলছেন এটা ঠিক না। সব সময় স্বশরীরে ম্যাডামের অফিসে থাকতে হবে, সেখানে গিয়ে কথা বলতে হবে এমনও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যারা এমনটি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য আন্দোলন সফল করা নয় বরং ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করা আর আর্শীবাদ পাওয়া। ম্যাডামতো জানেনই কে মাঠে আছেন আর কে নেই। সেই জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে হবে কেন। বরং দূরে থেকেই আমাদেরকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে জয় পেতে হবে।
সূত্র জানায়, কোন কোন নেতা আগাম দলের কোন কর্মসূচি না জানার কারণেও হতাশ। তারা তারেক রহমানের উপরও দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। বলে থাকেন তারেক রহমানের নির্দেশে দল চলছে ও আন্দোলন চলছে। এই ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কেউ কেউ ইচ্ছে করে প্রপাগান্ডা চালানোর চেষ্টা করে। যার সত্যতা নেই। বাস্তবততা হচ্ছে তারেক রহমান ম্যাডামের ছেলে এটা যেমন সত্য তেমনি এটাও সত্য তিনি বিএনপির সেকেন্ড ইন কমান্ড অর্থাৎ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। ম্যাডাম যখন কোন কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না তখন তিনিই সব দায়িত্ব পালন করবেন ম্যাডামের হয়ে। এখন ম্যাডাম অনেকটা আটক অবস্থায় রয়েছেন, কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। বৈঠকও করতে পারছেন না। নেটওয়ার্কও বন্ধ। তাই বলে কি যোগাযোগ হবে না, কাজ হবে না। অবশ্যই হবে। আর সেটা তারেক রহমানই করবেন। কারণ ম্যাডামের কাজগুলো তিনি করবেন। ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন। আর না পারলেও যেটা ভাল সেটাই করবেন।
এই ব্যাপারে সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন দলের কর্মসূচি সফল করার জন্য দেশে থাকা কোন একক নেতার উপর দায়িত্ব দিতে পারছেন না। কারণ যাকেই দায়িত্ব দিচ্ছেন তাকেই সরকার গ্রেফতার করছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শমসের মুবীন চৌধুরী, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপর চালিয়ে নিচ্ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু গত সপ্তাহে সালাউদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে গেছে কে বা কারা। এখনও তার হদিস মিলছে না। তার স্ত্রীর অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে গেছে। সূত্র জানায়, কোন নেতাকে পুরোপুরি দায়িত্ব দিলে তাদেরকে পুলিশ নিয়ে যাবে এই আশঙ্কায় কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে বরং তাদেরকে আন্দোলন সফল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা সেইভাবে মাঠে থেকে কাজ করবেন। তারেক রহমান দূরে থাকলেও সেখানে বসে পরিকল্পনা করে সেটা ম্যাডামকে শুনিয়ে ও তাকে দেখিয়ে এরপর কার্যকর করার জন্য সারাদেশের নেতাদের সঙ্গে তিনি নিজেও অন্যান্য মারফতে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন। বিএনপির পাঁচ স্তরের নেতারা দায়িত্ব পালন করছেন। সেটা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারেক রহমান। তার এই আধিপত্যের বিষয়টি দলের প্রায় সবাই মেনে নিলেও সিনিয়র কয়েকজন নেতা তারেক রহমানকে আগামী দিনের নেতা হিসাবে মানতে চান না। তারা তারেক রহমানের নানা রকম সমলোচনা তার আগোচরে করেন। সেটা তিনি নিজেও জানেন। বেগম খালেদা জিয়াও জানেন। তিনিও মনে করেন তারেক রহমানকে দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে মানতে হবে নেতাদের।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সরকার গ্রেফতার করলেও যাতে তারেক রহমান আন্দোলন বিদেশ বসে থেকে চালিয়ে নিতে পারেন সেই জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। কি কি করতে হবে সেটাও আগেই বলে রেখেছেন। বাকিটা প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন। কারণ তিনি কে দায়িত্ব পালন করলো সেটার চেয়েও বড় করে দেখছেন কেমন করে আন্দোলনের কৌশল ফাঁস হবে না। কর্মসূচিও আগে ফাঁস হবে না। এবং সফল হবে সেটাই দেখছেন। আর এই সব নানা কৌশল তিনি করলেও জোটের নেতাদের কেউ কেউ এনিয়ে সমালোচনা করার চেষ্টা করেন।
সূত্র জানায়, শুক্রবার খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিবেন সেটা আগেভাগে কেউ জানতেন না বলে জোটের ও দলের কোন কোন নেতা বলার চেষ্টা করছেন ভিন্নভাবে। তাদের যুক্তি তারা এখন আর আগের মতো সব কথা জানতে পারেন না। তাদের সঙ্গে পরামর্শও করা হচ্ছে না। গুটিয়ে কয়েক নেতা আবার টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির বিষয়ে দ্বি^মত পোষণ করেন। এরপরও তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হয় না বলে তারা নাখোশ। এই ব্যাপারে সূত্র জানায়, বিএনপির ভেতরে এমন কয়েকজন নেতা রয়েছেন যারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আগাম খবর ফাঁস করেছেন। এই কারণেই তাদেরকে আগে ভাগে কিছুই জানানো হয় না। আবার যাদেরকে জানানো দরকার তারা সবাই জানছেন। তাদের সঙ্গে তারেক রহমান যোগাযোগ করে পরামর্শও করছেন। তবে সেটা অন্য কেউ জানতে পারছেন না। তারেক রহমান যেই সব নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন ওই সব নেতারাও বিষয়টি গোপন রাখছেন। এটাও তাদের একটি কৌশল। কারণ তারেক রহমানের আশঙ্কা তারা কথা বলেন, আন্দোলন সফল করছেন এটা জানাজানি হলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে। ফলে আন্দোলনের চেইন ভেঙ্গে পড়বে। খালেদা জিয়াও বিশ্বস্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, অনেকেই জোট ও দলের সিনিয়র নেতাদের বৈঠক হচ্ছে না বলে কথা বলার চেষ্টা করেন। এটা তাদের একটা অপকৌশল ও সরকারের পাতানো ফাঁদ হতে পারে। কারণ যখনই ওই সব নেতারা তার সঙ্গে বৈঠক করতে যাবেন, এরপরই তাদেরকে বাইরে বের হলে গ্রেফতার করা হবে সেটা করা হলে আন্দোলনেও এর প্রভাব পড়বে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, এখন যে অবস্থা চলছে এই অবস্থায় সব সময় জোটের নেতা ও দলের স্থায়ী কমিটির নেতা কিংবা অন্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার মতো কোন সুযোগ ও পরিবেশ নেই। এই কারণে বসছেন না। সব কথা আগে বলতে হবে এটারও কোন মানে নেই। ম্যাডাম সময় সময় নির্দেশ দিবেন আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করবো। প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবো।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যাকে যাকে দায়িত্ব দেওয়া দরকার সেটা দিয়েছেন। এরমধ্যে কুটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন ড. আব্দুল মঈন খান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ। ওসমান ফারুক, সাদেক হোসেন খোকা কাজ করছেন আমেরিকায়। মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন এহসানুল হক মিলন। আরো বেশ কয়েকটি দেশে রয়েছেন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তরিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দিতে চাইলেও তিনি অসুস্থ হওয়ায় তেমনভাবে কাজ করতে পারছেন না। ড. আর এ গনি কাজ করছেন। নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান রয়েছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কার্যালয়ের ভেতরেই। সেখান থেকে বিভিন্ন দিকে যোগাযোগও রাখছেন। এছাড়াও এখন বরকত উল্লাহ বুলু কাজ করছেন দলের মুখপাত্র হিসাবে। সূত্র জানায়, দলের ওই সব নেতাকেই এখন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে যারা ঝুঁকি নিতে পারবেন এবং সাহসী ভূমিকা রাখতে পারবেন। যারা কোন ধরনের তথ্য আগাম ফাঁস করে দিবেন না।
বিএনপির সূত্র জানায়, সরকার আন্দোলন দমনে জিরো টলারেন্সে রয়েছে। তারা কোন ভাবেই বিএনপিকে ছাড় দিতে চাইছে না। এই জন্য আন্দোলন আরো অনেক দিন চালিয়ে নিতে হতে পারে বলে মনে করছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। সেই হিসাবে তারা পরের স্তরের নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। মোট পাঁচ স্তরে নেতারা কাজ করছেন। আর জোটের নেতাদের বেশ কয়েকজন বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে তারা প্রকাশ্যে নয় কৌশলেই।
সূত্র জানায়, খালেদা ও তারেকের পরিকল্পনা ছিল ঢাকাকে সুসংগঠিত করেই আন্দোলন শুরু করবেন কিন্তু সরকার তাদেরকে এর আগেই আন্দোলনে যেতে বাধ্য করে। এরপরও ঢাকার নেতারাও তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। সেটা না পারায় এবার আর ঢাকায় ব্যর্থ হতে পারে এমন কোন কর্মসূচি দিতে চাইছে না। ঢাকার নেতাদের ভূমিকা নিয়ে তারাও কিছুটা নাখোশ। তারা চাইছেন ঢাকায় সরকারের সফল বাঁধা উপেক্ষা করে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে। সেটা তারা পারছেন না। ২০১৩ সালেও ঢাকার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এবারও হচ্ছে না। এনিয়ে তারা দুইজনই চিন্তিত। আর তৃনমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও এনিয়ে কিছুটা হতাশা রয়েছে। সেই হতাশা তারাও কাটানোর চেষ্টা করছেন। আবার অনেক নেতার নামে মামলা রয়েছে তারাও রয়েছে আতœগোপনে ওই সব নেতারা তেমন কিছুই করতে পারছেন না।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এখন সফল আন্দোলন করতে চাইছেন। সেই জন্য যা যা দরকার সেটাই করছেন। বাদ বাকি সমস্যা তারা মোকাবিলা করছেন। এই জন্য নানা কৌশল নিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কাজ চলছে। এনিয়ে দলের কোন কোন নেতা সমালোচনা করতে পারেন। সেটাকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং তারা ইচ্ছে করেই বেশ কয়েকজন নেতাদের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। ওই সব নেতারা সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। সরকার আন্দোলন দমনে কি করবে সেটা আগেই বলে দিচেছ। এছাড়াও তাদের আরো অনেক কৌশল রয়েছে। তারেক রহমানের কাছে তৃণমূল নেতাদের অনেকেই কেন্দ্রের নেতাদের না পাওয়া ও তাদের ভূমিকা নিয়েও নানা অভিযোগ করেছেন। ওই সব নেতাদের ব্যাপারে ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন। এই রকম একজন নেতা বলেন, আমরা আন্দোলন করবো। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন, মাঠে নামছেন না আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও মন্ত্রী পদ দখল করবেন। সেটা এবার আমরা হতে দেব না। এবার ওই সব নেতাদের বাদ দিতেই হবে এটাই আমাদের দাবি। সেটা আমরা বলেছিও। ঢাকার নেতা আরাম আয়েশে থাকবেন আর ঢাকার বাইরের নেতা আন্দোলন সফল করার জন্য মাঠে থাকবেন এরপরও তারা কোন ভূমিকা রাখবেন না সেটা হবে না। এইভাবে চলবে না। তারা এই বিষয়টিও গুরুত্ব দিচ্ছেন।


শেয়ার করুন