নির্বাচন, না কৌশল

5223843e8e934-Untitled-3আবুল খায়ের ভূঁইয়া

দেশে চলছে সহিংস রাজনীতি। বিপর্যস্ত জনজীবন। পরিবহন সেক্টরে চলছে অরাজকতা। শিক্ষা খাতের বেহাল দশা। ধ্বংসের মুখে রয়েছে পরিবহন খাতসহ গার্মেন্ট সেক্টর। দেশের সার্বিক অর্থনীতি চরম হুমকির মুখে। এভাবে চলতে থাকলে গোটা দেশই একসময় ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সরকার যেভাবে ২০ দলীয় জোটকে জঙ্গি সংগঠন বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে জোটের চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে দেশের। সরকার বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে; ব্যর্থ হয়েছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে।
অনেক কৌশলই প্রয়োগ করেছে সরকার বিরোধীদের ঠেকাতে। এবার ডিসিসি নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে। আসলেই কি নির্বাচন হবে, নাকি সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে একটা কৌশল হিসেবে নির্বাচনকে ব্যবহার করা হবে? তবে ডিসিসি নির্বাচন হোক বা না হোক, সাধারণ জনগণ চায় দেশে শান্তি ফিরে আসুক। সংলাপ, ডিসিসি নির্বাচন অথবা জাতীয় নির্বাচন যেটাই হোক, মানুষ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবসান চায়।
রাজধানী ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। মাঝিবিহীন নৌকার যেমন অবস্থা, জনপ্রতিনিধিবিহীন রাজধানীবাসীর একই অবস্থা। অনেক বছর পার হয়ে গেছে, ডিসিসি নির্বাচন হচ্ছে না। তাই জনগণও তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। অসম উন্নয়ন যেন না হয়, জনগণ যেন কাক্সিক্ষত সেবা পায়, নাগরিক সেবা যেন নিশ্চিত হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই মূলত ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। অথচ বিভক্ত সিটি করপোরেশনের অধিবাসীরা নাগরিক সুবিধা থেকে হয়েছে বঞ্চিত।
ঢাকা সিটি করপোরেশন জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত না হওয়ায় রাজধানীবাসী এর বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই পারেন স্থানীয় সরকার থেকে জনগণের প্রতি সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে। এদিক থেকে ডিসিসি নির্বাচন যত শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে, ঢাকাবাসী তত দ্রুত সেবা পাবে। অযথা ডিসিসি নির্বাচন ঝুলিয়ে রেখে ঢাকাবাসীকে আর ভোগাবেন না। এতে কোনো যৌক্তিকতাও নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামে রাজধানীকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হলেও সীমানা জটিলতার কারণে বিভক্ত ওই দুই সিটি করপোরেশনে আজ অবধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই রাজধানীবাসী কোনো জনপ্রতিনিধিও পায়নি।
কিন্তু এখন সব বাধা দূর হয়ে গেছে। সীমানা নিয়ে জটিলতার সমাধান হয়ে গেছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দীর্ঘদিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে না। তাই জনগণ নাগরিক সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এ ব্যাপারে যাবতীয় উদ্যোগ নিতে বলেছেন। ১৭ ফেব্র“য়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে জানা যায়। ফলে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো আইনি বাধা রইল না। এখন দেখার বিষয়, ডিসিসি নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে এবং তা যদি অনুষ্ঠিত হয়, তবে সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট অংশগ্রহণ করবে কিনা?
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় দেশের রাজনীতি, অর্থনীত, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসনসহ সবকিছুই ঢাকাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। আয়তনের দিক থেকে ঢাকা এমন কোনো বড় শহর না হলেও জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান নগরী এবং জঞ্জালময় ও অপরিকল্পিত নগরী হিসেবে রাজধানী ঢাকা বেশ আলোচিত। কা-ারিবিহীন নৌকার গতি যেমন ঠিক থাকে না, তেমনি জনপ্রতিনিধিবিহীন রাজধানীর উন্নয়নও সম্ভব নয়।
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হলেও আগের মতো রাজার ভাব আর এখন নেই। সমস্যার অন্ত নেই রাজধানী ঢাকায়। আবাসন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। জীবনের নিরাপত্তা নেই। মোটকথা, ঢাকার সমস্যার শেষ নেই। সমস্যার পর সমস্যা পাড়ি দিয়ে ঢাকাবাসীর দিন-রাত যায় আর আসে। রয়েছে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ও অজ্ঞান পার্টি আর মলম পার্টির দৌরাত্ম্য। জননিরাপত্তা প্রতি পদে পদে বিঘ্নিত হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। বলতে গেলে ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা বিদ্যমান নেই বর্তমান ঢাকা শহরে। মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীবাসী। সব মিলিয়ে ঢাকা এখন ঢাকা নেই- খানাখন্দে ভরা ঢাকা যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হলো অন্যতম প্রধান উপাদান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অন্যরকম। নির্বাচনও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। দেশব্যাপী বিরাজমান সহিংসতা ও রাজনৈতিক সঙ্কটের মূল কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। সাধারণ জনগণের কাছে নির্বাচন একটি উৎসব হলেও অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা, সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
চাকরিজীবী, হাজীপাড়া, ঢাকা। আলোকিত বাংলাদেশ


শেয়ার করুন