নাশকতাকারীকে ধরিয়ে দিলে ১ লাখ টাকা পুরস্কার

নাশকতাকারীকে ধরিয়ে দিলে ১ লাখ টাকা পুরস্কার

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক :

নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বিশেষ সভায় বুধবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘দুষ্কৃতকারী ও নাশকতাকারীদের অন দ্য স্পটে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলো। সাধারণ মানুষ যারা ধরিয়ে দেবেন তারা এ পুরস্কার পাবেন।’

আমির হোসেন আমু বলেন, ‘ডিসি (জেলা প্রশাসক), এসপিসহ (পুলিশ সুপার) বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা কমিটি রয়েছে। সকল নির্বাচিত প্রতিনিধি, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের সকল পক্ষকে যুক্ত করে এ কমিটি আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে শান্তি স্থাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘সভায় পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনা করে আমরা মোটামুটি সন্তোষ প্রকাশ করার মতো একটি অবস্থায় এসেছি। কারণ ওনাদের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আজ আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি লক্ষ্য করছি।’

‘খালেদা জিয়া বলেন, তারা কোনো নাশকতামূলক কাজে জড়িত নন। কিন্তু আজ পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাতে আমরা বলছি, তার তথ্য সঠিক নয়। তিনি যে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চান- এটাই আমরা প্রমাণ করে দিচ্ছি’ বলেন আমির হোসেন আমু।

নাশকতার আশঙ্কায় অবরোধের মধ্যে সারাদেশে সাত হাজার ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৫৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির ১২৫ জন, জামায়াত-শিবিরের ২৭ ও অন্য দলের দুজন রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা রেঞ্জে বিএনপির ১৩৪ জন, জামায়াত-শিবিরের ১৮ জন, চট্টগ্রাম রেঞ্জে বিএনপির ১২০ জন, জামায়াত-শিবিরের ২৮ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন।

রাজশাহী রেঞ্জে বিএনপির ৭৬ জন ও জামায়াত-শিবিরের ৩৩ জন, রংপুর রেঞ্জে বিএনপির ৩৮ জন ও জামায়াত-শিবিরের ৬০ জন, খুলনা রেঞ্জে বিএনপির ১১৭ জন ও জামায়াত-শিবিরের ৩৫ জন এবং বরিশাল রেঞ্জে বিএনপির ২২ জন ও জামায়াত-শিবিরের একজন, সিলেট রেঞ্জে বিএনপির ৩৫ জন ও জামায়াত-শিবিরের ১৩ জন, রেলওয়ে রেঞ্জে বিএনপির তিনজন ও জামায়াত-শিবিরের তিন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। হাইওয়েতে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকা অবস্থায় স্পট এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী।

‘সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে’ দাবি করে আমির হোসেন আমু ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন জেলার যান চলাচলের সার্বিক চিত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এ সময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬৬ হাজার গাড়ি (বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, অয়েল ট্যাঙ্কার, জিপ) হাইওয়ে দিয়ে ঢাকায় এসেছে এবং ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশের সকল মানুষের কাছে প্রশ্ন, দেশে আদৌ রাজনীতি থাকবে কী থাকবে না। রাজনীতিকে দেশের অঙ্গন থেকে আমরা বিদায় দিচ্ছি কীনা। কারণ আমরা দেখেছি, দেশে কোনো রাজনৈতিক এ্যাকটিভিটিস (কার্মকাণ্ড) নেই।’

‘১৯৭২ সালে আমরা দেখেছি, একটি ব্যাংক ডাকাতি করলে বা ফাঁড়ি লুট করলে সর্বহারার নামে একটা স্লোগান হতো। আজ যারা পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে তারা কিন্তু অবরোধের স্লোগান দেয় না। নীরবে-নিভৃতে তারা পেট্রোলবোমা মেরে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে হয় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, না হয় ধরা পড়ে। কিন্তু আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া দাবি করেন, এটা অবরোধ।’

কমিটির প্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কি মনে নেই আমরা অবরোধ করেছিলাম, তখন ইয়াজউদ্দিনের বঙ্গভবন থেকে শুরু করে হাইওয়ে, জেলা-উপজেলার সড়কে লাখ লাখ লোক বসে অবরোধ করেছিল। ওটা হলো অবরোধ। এখন যারা পেট্রোলবোমায় মানুষ মেরে অবরোধ করে, তারা দেশ থেকে রাজনীতি বিদায় করতে চায়। নকশাল বাড়ির মতো একটা দল তারা গঠন করতে চায়।’

সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য বিএনপি মানুষের কাছে ‘পরিত্যক্ত’ দাবি করে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘মানুষের ধারণা তাদের রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাদের রাজনীতি মানুষ গ্রহণ করছে না। তাই মানুষের প্রতি আস্থা হারিয়ে তারা প্রতিহিংসামূলক হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।’

তিনি বলেন, দেশে রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখা ও পুনরুজ্জীবিত করার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এ কমিটিসহ সবাইকে কঠিনহস্তে এ অপসংস্কৃতির রাজনীতি দমন করতে হবে। আজ যদি এরা প্রাধান্য পায়, সামনে আসে, তবে ভবিষ্যৎ কি হবে? কেউ তা হলে কষ্ট করে রাজনীতি করবে না। কেউ সংগঠন করবে না। পেট্রোলবোমা মেরে যদি দাবি আদায় করা যায় তবে ভবিষ্যতে আর রাজনীতি করার প্রয়োজন থাকবে না।

‘মানুষ হত্যা করার এ রাজনীতি সফল হতে পারে না, পারে না, পারে না। এটা আজ আমরা অনুধাবন করেছি। সেভাবেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে’ বলেন আমু।

সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি, কোস্টগার্ড ও আনসারের প্রধানসহ কমিটির সংশ্লিষ্টরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 


শেয়ার করুন