নারী-পুরুষের অনলাইন চ্যাটিং হারাম !

আমাদের সময়.কম:
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ। ব্যবহারে সমান সমান নারী-পুরুষ। ফেসবুক টুইটারসহ অনলাইনের বিভিন্ন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে নারী-পুরুষের অবাধ ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট প্রেরণ, বন্ধু বাড়ানোর উৎসব আর নীবিড় চ্যাট। সম্প্রতি মিশরে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নারী-পুরুষের অনলাইন চ্যাটিংকে হারাম ঘোষণা করেছে। আল ইতফা নামের এক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অনলাইনে অপরিচিত নারী-পুরুষের মধ্যে চ্যাট এবং ফেসবুকে মেয়েদের ছবি বিনিময় করাকে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছে। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি হচ্ছে, অপরিচিত লোকদের সঙ্গে এসব আলাপচারিতা এবং ছবি বিনিময় নারীর মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। এছাড়া অনাত্মীয় পুরুষরা নারীদের এসব ছবি, তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তাই নারীদের চ্যাট করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
মিশরের আল আজহারের বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেম আবদুল হামিদ আল আতরাশ একে সমর্থন করে বলেন,‘ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে গেলে এই ফতোয়া জায়েজ। একজন অপরিচিত নারী ও পুরুষের মধ্যে আলাপ করা ইসলাম সমর্থন করে না। কেননা এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এর ফলে নানা ধরণের সামাজিক সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হয়। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা
এদিকে সৌদি দৈনিক আল ইকিতিসাদিয়ার বরাতে আল আরাবিয়া অনলাইন জানিয়েছে, সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতা ও সৌদি কমিটি অব সিনিয়র স্কলার-এর একজন সদস্য শেখ আবদুল্লাহ আল মুতলাক, অনলাইনে নারী-পুরুষের চ্যাটিং হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সামাজিক সাইটগুলোতে অনলাইনে নারী-পুরুষ চ্যাটিং ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ এবং এর কারণে তারা পাপে লিপ্ত হতে পারেন। এটা হারাম। শেখ আবদুল্লাহ বলেন, অনলাইনে সামাজিক সাইটে নারী-পুরুষ চ্যাটিং (খুলওয়া) হারাম ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তিনি নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেনো পুরুষদের সঙ্গে কথা না বলেন। কেননা, মেয়েরা যখন ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে, সেখানে শয়তান উপস্থিত থাকে।
মিশর,সৌদিরপর নারী-পুরুষের অনলাইন চ্যাটিং বিষয়ে বাংলাদেশি আলেমদের কণ্ঠেও অভিন্ন সুর। নারী-পুরুষের অনলাইন চ্যাটিং সমাজবিজ্ঞানী আলেম, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী আমাদের সময় ডট কম কে বলেন, সামনা সামনি যা বৈধ; চ্যাটেও তা বৈধ। চ্যাটিংটা সাক্ষাতের মতোই। চ্যাটিংকালে আলাপ-গল্প,ভাববিনিময়,হাসিখুশি ইত্যাদির অনুভূতি সাক্ষাতে অন্যায় অপরাধের মতো। কারণ এতোটা নীরবে নৈশব্দে আলাপ-আলোচনা হয় যেখানে সব খুলে বলা যায়। কোনো কিছু গোপন থাকে না। এমন কি ভিডিও কলের মাধ্যমে পরস্পর জঘন্য পাপ কাজও সম্পাদিত হয়। সংসার ভেঙে যাচ্ছে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।পাপ-মহাপাপের সূচনা হয় এই চ্যাটিং-এর মাধ্যমে তাই পাপ-বা কবিরাগুনা যেমন হারাম; চ্যাটও হারাম। তবে নিকট আত্মীয় বা পাত্রপাত্রির জন্য যা সরাসরির বলার অনুমতি আছে ততটুকু বলতে পারবে। চ্যাটিং পদ্ধতিটা হারাম নয়; ব্যবহারটি দেখার বিষয়!
এ বিষয়ে চট্রগ্রাম ওমরগণি ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, হজরত ওসমান রা. জামে মসজিদের খতিব, ড. মাওলানা আ ফ ম খালেম হোসেন বলেন, কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। বাস্তবতা হলো, অনলাইনে চ্যাটিং-এর মাধ্যমে এমন সব আলাপ হয় যা সরাসরি বলা যায় না। সাক্ষাতে এমন আচরণ বা বলা লজ্জাজনক মনে হয় কিন্তু চ্যাটে তা সম্ভব হয়ে ওঠে। এতোটা অন্তরঙ হয়ে ওঠা বহু পাপের জন্ম দেয়। সমাজ নষ্ট হওয়ার জন্য এই অন্তরঙ চ্যাট ভয়াবহ ক্ষতিকর। আমরা সৌদি মিশরের আলেমদের সঙ্গে সহমত পোষন করে বলবো, বাংলাদেশের অনলাইন ব্যবহারকারীরা যেন এই অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকেন।


শেয়ার করুন