নানা চাপেও নির্বাচন পেছাবে না ইসি

images60সিটিএন ডেস্ক:

পৌর নির্বাচন বিষয়ে চাপে থাকলেও শেষমেষ নির্বাচন পেছালো না ইসি। আগামী ৩০ ডিসেম্বরই অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন পৌর নির্বাচন। আর নির্বাচনী প্রচারোণা চালাতে পারবেন না এমপিরাও।
আজ সোমবার দুপুরে এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তবে নির্বাচন পেছানোর নানা যুক্তিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে আসছে।
ইসির আজকের এই সিদ্ধান্তের আগে নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইসিকে নানা ইস্যুতে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও প্রথমবারের মতো সংসদের বাইরে থাকা অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি সংশোধিত নতুন বিধিমালায় ফের সংশোধনের দাবি তুলেছে।
বিএনপির দাবি ভোটের সময় আরো ১৫ দিন পেছানোর। আওয়ামী লীগ ও জাপা তাদের এ প্রস্তাবে সহমতই প্রকাশ করেছে। তবে তারা চায় বিধিমালায় মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ রাখা। অবশ্য জাপা আরো একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে মনোনয়ন দাখিলের সময় বাড়ানোরও দাবি তুলেছে।
এদিকে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে না এমন অভিযোগ এনে ইসির দিকে আঙ্গুল তুলেছে বড় দুটি দলই। দল দুটির নেতারা ইসিকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে আখ্যায়িত করে প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে বেশি সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ তুলেছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের সব নেতারাই নির্বাচনী প্রচারনার সুযোগ পাচ্ছেন। আর ক্ষমতাসীনদের দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা তো নয়ই দলের কোনো মন্ত্রী-এমপি এমনকি মেয়রদেরও প্রচারণার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকছে না।
আর বিএনপি বলছে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানির মাধ্যমে তাদের নির্বাচনমুখী হতে দেয়া হচ্ছে না। এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কী করে হয়। ইসি অবশ্য এসব অভিযোগে কর্ণপাত করছে না।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দলগুলোর অভিযোগের জবাব দেয়া কিংবা তাদের দেয়া প্রস্তাব কোনোটিই এখন আর ইসির পক্ষে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এটি করতে গেলে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালায় সংশোধনী আনতে হবে।
যা একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তারা বলছেন সময়ের স্বল্পতা। ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে বিধিমালা তৈরি ও তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রেও কালক্ষেপণ করা যায়নি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে নির্বাচনমুখী হবে বলেই মনে করছেন তারা।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন দল থেকে কোনো না কোনো ইস্যুতে প্রায় প্রতিদিনই ইসিতে প্রস্তাবনা আসছে। সর্বশেষ গতকাল রোববার প্রধান তিনটি দলই তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইসির কাছে প্রস্তাবনা পাঠায়। বিশেষ করে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি নিয়ে কথা উঠছে সব মহল থেকে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের সব নেতাই নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন।
আর ক্ষমতাসীনদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তো নয়ই দলের কোনো মন্ত্রী-এমপি এমনকি মেয়রদেরও প্রচারণার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকছে না।
এ বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, পৌর নির্বাচনের প্রচারণায় মন্ত্রীরা না গেলেও এমপিদের যাওয়ার সুযোগ রাখা দরকার ছিল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যে সুযোগ পাবেন, আমরা কেন সেটি পাব না?
এ বিষয়ে সবার সমান সুযোগ রাখা দরকার ছিল। নির্বাচন কমিশন এটি ঠিক করেনি।
রোববার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফও একই সুরে কথা বলেন। তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়ার দাবি জানান। বৈঠক শেষে হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, পৌর নির্বাচনের বিদ্যমান আচরণবিধিতে প্রার্থীদের পক্ষে এমপিদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের ‘অবলিগেশন’ তুলে ধরা হয়েছে। এমপিরা কোনো এক্সিকিউটিভ পাওয়ার হোল্ড করেন না, সরকারের সুবিধা ভোগ করেন না। দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণায় যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। এজন্য বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা রহিত করে প্রচারণার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে।
একই কথা বলছে জাতীয় পার্টিও।
রোববার ইসি সচিবালয়ে গিয়ে একই দাবিতে আবেদন করেন দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য ১০ দিন সময় বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছেন। কমিশন থেকে বেরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিক। ইসিকে মনোনয়নপত্র সাবমিট করার সময়টা বাড়িয়ে দেয়া এবং এমপিদের প্রচারণার সুযোগ রাখার কথা বলেছি। ইসি কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
নির্বাচন পেছানোর দাবি নিয়ে গতকাল বিএনপির প্রতিনিধি দলও ইসিতে যায়। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম ওসমান ফারুকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিইসি কাজী রকীবউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ওসমান ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণায় সুযোগ না রাখার দাবি জানানো হয়েছে। বন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তি না দিলে নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না জানিয়ে পৌর নির্বাচন ১৫ দিন পেছানোসহ গ্রেফতার দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে বিএনপির নির্বাচন দাবির পক্ষে সহমত প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন দল। দলটির শীর্ষ এক নেতা গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় খেলার মাঠে প্রস্তুত রয়েছে। বিএনপি এগোলেও আছে, পেছালেও আছে। এ বিষয়ে গতকাল দলটির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। নির্বাচন পেছানোর বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসি চাইলে তা কনসিডার করতে পারে।
পৌরনির্বাচনকে ঘিরে দলগুলোর এমন অবস্থানে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে ইসি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পর বিধিমালা পরিবর্তন প্রথাবিরোধী। এছাড়া প্রচারণায় সুবিধাভোগীদের সুযোগ রেখেই খসড়া বিধিমালা আইন-মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিল ইসি।
কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ই সে বিষয়টি বাদ দেয়ার পক্ষ নিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় দফায় সুবিধাভোগীদের সুবিধা বাদ রেখে খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়। এটিতে মন্ত্রণালয় সম্মতিও দিয়েছে। এখন দলগুলো চাইলেও তা এ সময়ে আর বাদ দেয়া যাবে না। এছাড়া নির্বাচন পেছানোরও কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা বা আচরণ বিধিমালা পরিবর্তন ছাড়া কিছুই করা যাবে না। আর সেটি করার এখন কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তারা।


শেয়ার করুন