নতুন পদ্ধতিতে জীবনযাপনে প্রস্তুত হতে হবে, স্বাস্থ্য সংস্থার হুশিঁয়ারি

বিদেশ ডেস্কঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকেশি কাসাই বলেছেন, ‘সুদূর ভবিষ্যত পর্যন্ত আমাদের অবশ্যই নতুন পদ্ধতিতে জীবনযাপনের জন্য প্রস্তত হতে হবে। যেভাবে জীবনযাপনে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে থাকতে পারবে সমাজকে তার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সরকারকেও ভাইরাস মোকাবিলার কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে যত দিন যাবে আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং সংক্রমণ ঠেকানোর প্রচেষ্টাকে মহামারীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অব্যাহতভাবে পরিবর্তিত ও বিবর্তিত হতে হবে। অন্ততপক্ষে টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত তা করতেই হবে। এই প্রক্রিয়াকেই আমাদের নতুন স্বাভাবিক জীবন হিসেবে গড়ে তোলা দরকার হবে।

২১ এপ্রিল, মঙ্গলবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এমন হুঁশিয়ারি দেন তাকেশি কাসাই।

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন। এতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ায় কিছু দেশ লকডাউন তুলে নিতে তড়িঘড়ি করছে। কিন্তু এতে করে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির সংক্রমণ ভয়াবাহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

তিনি মনে করেন, ‘নাগরিকদের নতুন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরো সময় দেয়া উচিত।’

তাকেশি বলেন, ‘করোনার কার্যকর টিকা আবিষ্কারের আগে কোনভাবেই অসতর্ক হওয়া যাবে না।’

করোনায় প্রাণহানি চলতে থাকার মধ্যে সম্প্রতি ইউরোপের কয়েকটি দেশ লকডাউন শিথিল করেছে। মে মাসের ৩ তারিখের পর বেশিরভাগ দেশ যখন পুরোপুরি লকডাউন তুলে নেয়ার পরিকল্পনা করছে, তখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে এমন সতর্কবার্তা এলো।

এর আগে সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আসতে এখনও বাকি বলে মন্তব্য করেছেন। পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

এক্ষেত্রে ১৯১৮ সালে স্প্যানিস ফ্লুতে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যুর প্রসঙ্গও তোলেন গেব্রেয়েসুস। জেনেভার এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস তার চেয়েও ভয়ংকর। এখনো অনেকে বুঝতে পারছেন না কতটা সাংঘাতিক এই ভাইরাস। আমাদের আরো সাবধান ও কৌশলী হতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমাদের প্রযুক্তি উন্নত। আমরা এই বিপর্যয়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। আমাদের সে ক্ষমতা এখন আছে। বিশ্বাস করুন। কিন্তু পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।’

পৃথিবীবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলছেন, ‘আমাদের আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা বাকি আছে। তাই এটা আমাদের আটকাতে হবে।’

উল্লেখ্য, চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে এক ব্যক্তির শরীরে রহস্যজনক ভাইরাস শনাক্ত হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই শহরটিতে হাজারো মানুষের শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ে। জানুয়ারির ১২ তারিখে এতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা দেয় চীন। পরে নভেল করোনাভাইরাসের গোত্রের হিসেবে শনাক্ত হয় ভাইরাসটি। এটির নামকরণ করা হয় কোভিড-১৯।

দ্রুত বিশ্বের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে এর প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এখন গোটা বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য মতে, আজ ২১ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৩ জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯৪ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৫১ জন। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৮ জন, যাদের মধ্যে ৫৭ হাজার ৩৩৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।


শেয়ার করুন