দোলে শিশু ইসলাম দোলে

mahfuz-e1444194134568মাহ্ফুজুল হক:
‘দেখ্ আমেনা মায়ের কোলে, দোলে শিশু ইসলাম দোলে’। অসাধারণ ও চমৎকার স্টাইলে জগদ্বাসীর ত্রাতার মহা আবির্ভাবের এই বাঙময় প্রকাশ প্রকৃতই সেই মনীষীর লিখনিতে মানায় যিনি মনের মাধুরি মিশিয়ে ঐকান্তিক সদিচ্ছায় পরম ভক্তির আতিশয্যে লিখে যান। তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মহানবী মুহাম্মদ মোস্তফা সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এবং ইসলাম এক ও একাকার। মহানবীর (সঃ) দীর্ঘ তেইশ বছরের নবুয়তি জীবন ছিলো ইসলামের পুরোপুরি বাস্তব রূপ। মা আয়েশা সিদ্দিকার (রাঃ) কাছে যখন রসুলুল্লাহ্র জীবন চরিত সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলো তখন তিনি প্রত্যুত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, কেন, তোমরা কোরআন পড়নি ? রসুলুল্লাহ্র জীবন ছিলো পবিত্র কোরআন শরিফের বাস্তব রূপ। পবিত্র কোরআন মজিদ হলো তত্ত্ব (থিউরি) আর আঁ হযরতের (সঃ) জীবন হলো তার বাস্তবায়ন (প্রেক্টিক্যাল)। প্রকৃতই তিনি ছিলেন বাস্তব ইসলাম, জীবন্ত ইসলাম। তিনি এই নশ্বর পৃথিবীতে তেষট্টিটি বছর কাটিয়েছেন। নবুয়ত পূর্ববর্তী চল্লিশটি বছরের মধ্যে তিনি কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের একটি অংশ কাটিয়েছেন মূলতঃ ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক সেবা সংঘের মাধ্যমে সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমে নিয়োজিত থেকে। রুজি-রোজগারের প্রয়োজনে কিছুটা সময় ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন, মেষ-উট চরিয়েছেন, বিবাহ-শাদী করে ঘর-সংসার করেছেন। অনাহুত যুদ্ধ-বিগ্রহ, ঝগড়া-ফাসাদ, মদ-জুয়া-ব্যভিচার-লুটতরাজ, বিবিধ সামাজিক অনাচার ইত্যাদি দেখে তিনি যারপরনাই ব্যথিত হয়েছেন। তা প্রতিরোধে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। শৈশব ও কৈশোর পেরিয়ে নবুয়ত পূর্ববর্তী তেইশ বছর তিনি হিলফুল ফুজুল সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে নানাবিধ সামাজিক অনাচার-দূরাচার-অবিচার-কুসংস্কারমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। আবার, নবুয়ত পরবর্তী তেইশ বছর মহাপ্রভূ আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালার সরাসরি তত্ত্বাবধানে সমাজ সংস্কার তথা দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করেছেন। প্রথম তেইশ বছরের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক যা তাঁকে সমাজে বিশ্বস্ততা ও হীতকারীর আসনে সমাসীন করেছে এবং পরবর্তী তেইশ বছরের ত্যাগী ও সংগ্রামী তৎপরতা তাঁকে সফল সমাজ সংস্কারক (রিফর্মার) আর মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের দিশারী বানিয়েছে। জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগের সকল বিষয়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ মৌখিক নির্দেশনা এবং বাস্তবে তা করে দেখানো তা-ও মাত্র তেইশ বছরে – এটি কল্পনাকেও হার মানায়। দুনিয়ায় প্রচলিত অপরাপর সকল ধর্ম কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের নিয়ম-কানুন, সৎকর্ম, সৎসঙ্গ ইত্যাদি সম্বলিত। কিন্তু ঘুম থেকে জাগা থেকে শুরু করে আবার ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত মানুষের যাবতীয় কর্ম তৎপরতা, পায়খানা-প্রশ্রাব থেকে শুরু করে সঙ্গীর সাথে মিলন পর্যন্ত সকল জৈবিক বিষয়-আশয়, জুতা সেলাই থেকে চন্ডি পাঠ অর্থাৎ বাজার-সদাই থেকে রাজনীতির সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিচার ব্যবস্থা, যুদ্ধ-সন্ধি, কূটনীতি ইত্যাদি সর্ববিষয়ে একজন মাত্র মানুষ মুহাম্মদ (সঃ) সুস্পষ্ট ও পরিপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয় তা করেও দেখিয়েছেন। এ এক মহা বিস্ময় অথচ একেবারেই বাস্তব। ইসলাম এমন একটি বিধানের নাম যেখানে ধর্মাচার ও জীবনাচার অঙ্গাঙ্গি, ওতপ্রোত, একাকার। একটি থেকে অপরটিকে আলাদা করা যায় না। একটি উদাহরণই আশা করি বিষয়টিকে স্পষ্ট করবে। প্রিয় নবীজী (সঃ) একাধারে নামাযে ইমাম, যুদ্ধে সেনাধ্যক্ষ, রাষ্ট্রীয় কাজে রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রের যিনি প্রধান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিরও তিনিই প্রধান। এখানে ‘পোপ’ বা ‘ইমাম’ বা ‘ব্রাহ্মণ’ বা ‘ঠাকুরের’ আলাদা কোন অস্তিত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নেই। শুধুমাত্র নবীজীর (সঃ) কথাইবা বলি কেন ? তাঁর পরবর্তী খলিফাবৃন্দ আবু বকর সিদ্দিক, ওমর ফারুক, ওসমান গণি, আলী হায়দর (রাঃ) সবাই ছিলেন একাধারে ধর্মীয় নেতা, যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ও রাষ্ট্রপ্রধান। এখন বলুন তো, কীভাবে ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করবেন ? প্রচলিত অন্যান্য ধর্মে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেই ধর্ম পালন হয়ে যায়। তাই সেখানে ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ সম্ভব। কিন্তু ইসলামের বেলায় তা ভিন্ন। এখানে ‘ইবাদাত’ মানে নামায-রোজা-যাকাত-হজ্জ্ব পালনকে বুঝায় না। নামায একটি ইবাদাত বটে কিন্তু দিবসের তিনটি সময়ে নামায না পড়াটাই ইবাদাত। তদ্রুপ রমযান মাসে রোজা রাখা ইবাদাত বটে কিন্তু ঈদের দিন রোজা না রাখাটাই ইবাদাত। মোদ্দা কথা, মহাপ্রভূ আল্লাহ্ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নামই ইবাদাত। আর তা পালন করতে হয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে, সর্বসময়ে ও সর্ববিষয়ে। একজন মুসলমান এক মুহুর্তের তরেও ইসলামের বিধি-বিধানের বাইরে থাকতে পারেন না। একজন মুসলমান টানা তিনদিন মসজিদে নামাযে গরহাজির থাকবেন তা কল্পনাতীত।
সর্বপ্রথম মানব ও নবী হযরত আদম (আঃ) সহ পৃথিবীতে প্রেরিত সকল নবী-রাসুলগন মুসলমান ছিলেন। তবে তাঁদের কর্মতৎপরতা সীমাবদ্ধ ছিলো বিশেষ বিশেষ জাতির সংশোধন কাজে। আর আমাদের প্রিয় নবীজী (সঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন সমগ্র মানব জাতির জন্য এবং তাঁর আনীত জীবন বিধান দুনিয়া ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। একটি পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার উপস্থিতিতে অন্য কোন ব্যবস্থা বা বিধানের আদৌ প্রয়োজন আছে কি ? নবীজীর (সঃ) বিদায় হজ্জ্বের সময় নাযিলকৃত আয়াত, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থ) হিসাবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।’ মহাপ্রভূর একমাত্র মনোনীত, পছন্দ করা জীবন বিধান হলো ইসলাম এবং পৃথিবীর বুকে তা বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়ে গেছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ (সঃ)। বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে তাঁর জন্মবার্ষিকী। আজকের দিনটি আবার যীশু খ্রীস্ট তথা ইসলামেরই আর একজন নবী ও রাসূল হযরত ঈসা (আঃ) এরও জন্মবার্ষিকী। খ্রীস্টান সম্পদায়ের ভাষায় বড়দিন বা খ্রীস্টমাস ডে। আজকের এই শুভক্ষণে তাবৎ দুনিয়াবাসীর ত্রাণকর্তা, রহ্মাতুল লিল আ’লামীন, জীবন্ত ও বাস্তব ইসলাম মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লামের প্রতি জানাই অজস্র দরূদ ও সালাম।
সেল নম্বর : ০১৮৬৯ ৮৬৬৯০০ [email protected]


শেয়ার করুন