“দূর্গম জনপদের মাধ্যমিক শিক্ষার একমাত্র বাহন”বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয়

deeeeমুফিজুর রহমান, বাইশারী (নাইক্ষ্যংছড়ি)।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জনবহুল অধ্যুষিত ও দূর্গম জনপদের এক মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে শ্রেনিকক্ষ, বিজ্ঞানাগার, গ্রস্থাগার ও আবাসন সহ নানাবিধ সমস্য রয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতা সত্বেও প্রতিবছর বিদ্যালয়টি ভালো ফলাফল করে আসছে।
সুত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ইং সালে তৎকালিন চেয়ারম্যান নুরুল হক বাইশারী সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন বাবু সূর্য্য কুমার ধর। মাষ্টার ছালেহ আহমদ ও ফিরোজ আহমদ সহকারী শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং নুরুল আমিন, মংহ্লাচিং, আলী হোছন, নুরুল ইসলাম, লায়লা বেগম, রশিদ আহমদ, মোঃ ইউসুফ ও লাউ চাক এই ৮ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে এ বিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯৭০ সালে বাবু সূর্য্য কুমার স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করে ভারতে চলে যাওয়ায় প্রধান শিক্ষক হিসাবে বজল আহমদ ও মোজাফ্ফর আহমদ যোগদান করেন। তারাও অন্যত্র চলে গেলে ১৯৭৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসাবে মোহাম্মদ ইসহাক বি,এ, বি,এড দায়িত্বভার গ্রহন করার পর বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে মাষ্টার সোলেমান সিকদার ১ একর জমি ও বাবু ছাদু কারবারী ৪০ শতক জমি দান করেন। ১৯৮৭ সালে এই বিদ্যালয়কে উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয় এবং এম,পিও ভূক্তি হয়।
বর্তমানে বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ শাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচিত চার সদস্য মাষ্টার হাছান, মোঃ আলী হোসাইন, মোঃ নুরুল আলম, ইয়াহিয়া চৌধুরীর একনিষ্ট প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে অত্র বিদ্যালয়টি। নির্বাচিত সদস্যদের নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, অত্র বিদ্যালয়টি দূর্গম জনপদ বাইশারীর প্রানকেন্দ্র, দূর্গম জনপদের শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম হিসাবে এই বিদ্যালয়কে আমরা আদর্শ বিদ্যালয় রূপে গড়ে তুলতে চাই। যাতে বাইশারী ইউনিয়নকে নিরক্ষরমুক্ত করা যায়, এই প্রচেষ্টায় আমরা নিবেদিত।
বিদ্যালয়টিতে পাহাড়ী বাঙ্গালী মিলে বর্তমানে হাজারের উপর রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। প্রতি বছর বাড়ছে ছাত্র-ছাত্রী। কিন্তু শিক্ষক সংকট সহ নানা সমস্যায় রয়েছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে প্রধান শিক্ষক শ্রীবাস চন্দ্র বলেন, ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আরো কয়েকটি শ্রেনিকক্ষ দরকার। এমন অপরিসর কক্ষে অত্যন্ত গাদাগাদি করে ছাত্র-ছাত্রীদের বসতে হয়। কমনরুম এবং বড় গ্রন্থগার প্রয়োজন। গ্রন্থাগারের আলাদা কক্ষ নেই বলে তিনি জানান। এদিকে বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা চেয়েছেন এলাকাবাসী সহ স্কুলের শিক্ষকরা।
শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মচারীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন সুযোগ নেই। পরিবহন সূবিধা না থাকায় দূরের শিক্ষার্থীরা সময় মত ক্লাস করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, বাসভবন না থাকায় প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা বাইরে ভাড়া বাসায় থাকেন। সীমানা প্রাচীর নেই বিদ্যালয়ের পূরো এলাকায়। এ ছাড়া একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ না থাকার কারনে বিজ্ঞান বিভাগে ল্যাবরটরী, কম্পিউটার শিক্ষা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টি বর্তমানে দ্বিতল ভবন হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের বসার সমস্যা নিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের।
গতকাল এই প্রতিবেদক সরজমিনে গেলে প্রধান শিক্ষক শ্রীবাস চন্দ্র বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি আছেন। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশী হওয়ায় শ্রেনীকক্ষ সহ ছাত্রীদের আলাদা বসার স্থান নিয়ে তিনি গভীর উদ্বোগের কথা জানান। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট দূূর্গম এলাকার ছেলে-মেয়েদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, চতুর্পাশ্বে বাউন্ডারী নির্মাণ ও আরো একটি দ্বিতল ভবনের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে সরকারের নিকট অনেক কিছু পেয়েছেন। এখনও তিনি আরো পাওয়ার আশায় রয়েছেন। বাকী সমস্যার জন্য তিনি পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রি বাবু বীর বাহাদুরের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
ছবি আছে ঃ


শেয়ার করুন