ঢাকার পর ডেঙ্গুর হটস্পট কক্সবাজার

ডেস্ক নিউজঃ

কক্সবাজারে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ঢাকার পর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হটস্পটে পরিণত হয়েছে দেশের সর্বদক্ষিণের এই জেলা। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দ্রুত ছড়াচ্ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। গত ৯ মাসে জেলায় ২৭ রোহিঙ্গাসহ মারা গেছেন ৩৩ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৮৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশক নিধনে পৌরসভার কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া ও যত্রতত্র প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসে সদর হাসপাতালে ৪৯ জন ও উপজেলার স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে ৩২৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আক্রান্তরা সেখানকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুল রহমান বলেন, ‌‘যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলায় এডিস মশার উৎস বাড়ছে। মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’ প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু মশার উৎপাত বেড়েছে ভয়াবহ আকারে। গেলো ৯ মাসে জেলায় মৃত ৩৩ জনের মধ্যে ২৭ জনই রোহিঙ্গা। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২২ জন, ক্যাম্পের হাসপাতালে ১০ ও বসতবাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের কেউ বেডে, কেউ মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতালেও মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ তারা। জ্বর, মাথা ব্যথাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। পরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে তাদের।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮৬ জন।

এদিকে, জেলায় ডেঙ্গুর স্পট হিসেবে জেলার কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো—বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, কুতুবদিয়াপাড়া, টেকপাড়া, সমিতিপাড়া, নুনিয়ারছড়া ও টেকনাফ উপজেলার কয়েকটি এলাকা।

এছাড়া উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প-৪, ক্যাম্প-৩, ক্যাম্প ১/ইস্ট, ক্যাম্প-২৪, ২৬ ও ১১। এসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ হিসেবে যত্রতত্র প্লাস্টিক ব্যবহারকে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

শহরের সমিতিপাড়ার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক ফরিদুল আলম বলেন, ‘শহরের নালা-নর্দমায় জমে থাকা পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে এডিস মশার লার্ভা থাকলেও সেগুলো ধ্বংসের উদ্যোগ নেই পৌরসভার। যে কারণে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে।’

একই এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুদিন ধরে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে জ্বর উঠেছিল। স্বাভাবিক মনে হওয়ায় গুরুত্ব দিইনি। যখন জ্বর বেড়ে যায় তখন চিকিৎসকের কাছে আসি। এরপর পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।’

শহরের মুদি দোকানি রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজ শেষ করে প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরি। মশার কামড়ে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হই। একপর্যায়ে বাসায় থাকতে না পেরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। গত চার দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

টেকপাড়ার বাসিন্দা মাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমিসহ পরিবারের চার জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। সবার চিকিৎসা চলছে। এডিস মশা নিধনে কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।’

সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জমানো পানির পরিমাণ বেশি। সেখানকার মানুষজন এডিস মশা নিয়ে সচেতন নন। এছাড়া পরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার না হওয়ায় ডেঙ্গু ছড়ানোর প্রধান কারণ। ফলে পানি জমছে প্লাস্টিকে। সেখান থেকে এডিস মশার জন্ম হচ্ছে।’

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তোহা বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসছে। রোহিঙ্গাদের সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংসে কাজ করছি আমরা। খুব শিগগিরই ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে।’

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এত সংখ্যক মানুষের একসঙ্গে বসবাস। তার চেয়ে বড় কথা হলো অতিরিক্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার। ফলে পানি জমছে। সেখান থেকে মশার উৎপাত বাড়ছে। এসব এলাকা চিহ্নিত করে সচেতনতা বাড়াতে কাজ চলছে। আশা করা যায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।’

পৌরসভার প্রধান নির্বাহী একেএম তারিকুল আলম জানিয়েছেন, দেশের অন্যান্য পৌরসভার চেয়ে কক্সবাজার পৌর শহর অনেক পরিচ্ছন্ন। প্রতিদিন টন-টন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে নালা-নর্দমা। প্রতিদিন শহরে মশা নিধনে স্প্রে করা হচ্ছে। আমাদের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।


শেয়ার করুন