জানুয়ারিতে ভাসছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী


বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে বুকিংয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী সাগরে ভাসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিনল্যান্ড।

গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর ইউরোপীয় দেশ ফিনল্যান্ডের দক্ষিণপশ্চিম উপকূলে তুরকু শিপইয়ার্ডে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী সাগরে ভাসানোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে আছে। এতে আরও বলা হয়, রয়েল ক্যারিবিয়ানের নতুন প্রমোদতরী ‘আইকন অব দ্য সিস’র কাজ শেষের দিকে। আগামী জানুয়ারিতে এর প্রথম যাত্রা শুরু হবে।

টাইটানিকের চেয়ে ৫ গুণ বড়

জাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেয়ের তুরকুর প্রধান নির্বাহী টিম মেয়ের সংবাদ সংস্থাটিকে বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি, এখন পর্যন্ত এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী।’

প্রতিবেদন অনুসারে, বিশালত্বের কারণে এটি দেখে যতটা না প্রমোদতরী মনে হতে পারে তার চেয়ে বরং একটি গ্রাম মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।

২০তলা আয়তনের এই জাহাজে প্রায় ১০ হাজার মানুষ থাকতে পারবেন। এতে বেশ কয়েকটি ওয়াটারপার্ক থাকছে। আরও থাকছে ৭টি সুইমিং পুল, একটি পার্ক, শপিং সেন্টার ও আইস স্কেটিংয়ের ব্যবস্থা।

২০২১ সালে প্রমোদতরীটি তৈরির কাজ শুরুর পর গত জুনে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সাগরে নামানো হয়।

মহামারির কারণে প্রমোদতরীশিল্প বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই শিল্প আবার কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। এখন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভ্রমণপিয়াসীরা ফিরে আসছেন।

টিম মেয়ের আরও বলেন, ‘করোনার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এই শিল্প বেশ জোরালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন ওজনের এই জাহাজটি আয়তনের দিক থেকে প্রবাদপ্রতীম টাইটানিকের চেয়ে ৫ গুণ বড়।

ব্যবসা বড় হওয়ার লক্ষণ

জাহাজনির্মাণ প্রতিষ্ঠান মেয়ের তুরকু এমন আয়তনের আরও ২টি জাহাজ তৈরির অর্ডার পেয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জার্মানির ব্রেমারহেফেন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপলাইড সায়েন্সেসের ক্রুজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্সিস পাপাথানাসিস বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘গত কয়েক দশক থেকে দেখছি প্রমোদতরীগুলোর আয়তন ক্রমাগত বড় হচ্ছে।’

তার মতে, এটি ব্যবসা বড় হওয়ার লক্ষণ। এ ছাড়া, জাহাজ বড় হওয়ায় যাত্রীদের খরচ কমছে।

তবে দুর্ঘটনার সময় এমন বিশালাকৃতির জাহাজে উদ্ধার কাজ চালানো খুবই চ্যালেঞ্জিং বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক পাপাথানাসিস।

জলবায়ুর ওপর প্রভাব

অনেকে আবার জলবায়ুর ওপর এ ধরনের বড় জাহাজের প্রভাব নিয়েও কথা বলছেন। কারো মতে, ছোট ছোট জাহাজের তুলনায় বড় জাহাজে দুষণ কম। অনেকে আবার এ মতের বিরোধিতাও করছেন।

বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এনভারনমেন্টের (টিঅ্যান্ডই) শিপিং ক্যাম্পেইনার কন্সতান্স দিজকাস্ত্রা জানান, এসব জাহাজে জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার করা হলেও মনে রাখতে হবে এলএনজি থেকে ক্ষতিকারক মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হয়।

মিথেন গ্যাস কার্বনডাই অক্সাইডের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

‘জাহাজে এলএনজি ব্যবহার করা হলে এ ধরনের গ্যাসশিল্পের বিকাশকে উৎসাহ দেওয়া হবে,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।


শেয়ার করুন