জাতীয় কবি কাজী নজরুলের মৃত্যু বার্ষিকী আজ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের ২৭শে আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তৎকালীন পিজি হাসপাতাল (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)-এ ইন্তেকাল করেন তিনি। ৭৭ বছর বয়সে পৃথিবীর বাঁধন ছেড়ে চিরতরে চলে যান বাংলা সাহিত্যের অনন্য দিকপাল কবি নজরুল। কিন্তু সৃষ্টির মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন যুগ থেকে যুগান্তরে।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে গেছেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আজীবন গভীর নিমগ্ন এক স্রষ্টা।

দারিদ্র্যের মাঝে বেড়ে ওঠা দুখু মিয়া সৃষ্টির মাঝে খুঁজে পেয়েছেন জীবনের আনন্দ। হাসি, গান, বিদ্রোহ আর তাঁর প্রেম প্রেয়সী মন, যেন একাকার হয়ে তাঁর সৃষ্টি থেকে উপচে পড়েছে। যে অর্থে তিনি বিদ্রোহী সেই সমঅর্থে তিনি প্রেমিকও বটে। কবিতার মানুষ, ছন্দের মানুষ দ্রোহের সুরের সঙ্গে প্রেম-বিরহের রসের সম্মিলন ঘটিয়ে যে সংগীত সৃষ্টি করলেন, তা নিছক সংগীত নয়, এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক, রাজনীতিক উন্মীলন। নজরুলের জীবন নানা সংকটে কেটেছে, তাইতো তিনি জানতেন সংকট উত্তরণের মূলমন্ত্র। দু:খ-কষ্ট চিরসাথী ছিলো বলেই হয়তো জীবনভর উচ্চকণ্ঠে বলে গেছেন শোষিত-নিপীড়িত মানুষের কথা। অন্ধকারে দেখিয়েছেন আলোর পথ, গেয়েছেন জাগরণের গান।

অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় কবির কলমে উঠে আসে কালজয়ী ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। ধূমকেতু, নবযুগ, লাঙ্গল-এর পাতায় পাতায় তাঁর আগুন ঝরা লেখনী সন্ত্রস্ত করে ইংরেজদের। রাজদ্রোহের অপরাধে জোটে কারাবাস। আবার কখনো এই দ্রোহের মাঝেই কবিমনে গভীর হয়ে ধরা দেয় প্রেম আর বিরহ।

তবে হঠাৎ করেই যেন স্তব্ধ হয়ে যান চির বিদ্রোহী, চির অনির্বাণ, চির উদ্যোমী কবি নজরুল। জীবনের শেষ সময়টুকু কাটে এদেশেই। কবির ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে হয় শেষ শয্যা।সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি ।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধু।

এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে সকালে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কবির স্মৃতিজড়িত কুমিল্লায় নজরুল পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ই জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।


শেয়ার করুন