জাতীয়তাবাদ ও ইসলাম

মাহমুদ জাবির

আমাদের অনেকেরই সেক্যুলারিজম ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব রয়েছে। এর মূল কারণ চিন্তার গভীরতার অভাব। সেক্যুলারিজম এর মূল কথাই হলো ইহজাগতিকতা যা পার্থিব জীবন কাঠামোতে সীমাবদ্ধ। ইসলাম এর মূল বক্তব্য সৃষ্টির উৎস হিসেবে আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস এবং ইহজীবনকে উন্নতর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পরকাল ও বিচার দিবসে নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করা। ‘জাতীয়তাবাদ’ কখনো আল্লাহ্‌ ও পরকাল নিয়ে আলোচনা করে না বরং ইহজাগতিকতার সাথে মিলে মিশে চলে। সে কারণে জাতীয়তাবাদ ইহজাগতিক জীবনদর্শন।

ইসলাম এমন কোনো ধর্ম নয় যে, অন্যান্য মতবাদ থেকে ধ্যানধারণা ধার করে চলতে হবে। ইসলাম তাত্ত্বিকভাবেই পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, সন্ন্যাসবাদ, ফ্যাসিবাদ এমনকি জাতীয়তাবাদের বিরোধী। এ বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলাম সম্পর্কে সুষ্ঠ গবেষণা প্রয়োজন। খ্রিস্টীয় ক্যাথলিকবাদ আর ইসলাম এক বিষয় নয়। খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মীয় নৈতিকতার বিধান থাকলেও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধি বিধানের অনুপস্থিতি রয়েছে। সে কারণে পাশ্চাত্য সমাজ খ্রিস্টীয় মতাদর্শকে জীবন উপযোগী মনে করে নি।

খ্রিস্টান ধর্মের তাত্ত্বিক দুর্বলতা ও গির্জার অনৈতিক অবস্থানের ফলে পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ ইসলাম তাত্ত্বিকভাবেই নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিধিমালায় সমৃদ্ধ। সে কারণে ইসলামকে ঐ সকল মতবাদের দারস্থ হতে হয় না।

আমরা যদি ইসলামকে জাতীয়তাবাদের সমর্থক মনে করি তাতে কিন্তু প্রকারান্তরে ইসলামেরই অবমাননা হয়। কেননা জাতীয়তাবাদ একদিকে শাসকবর্গের শাসনক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার যেমন হাতিয়ার তেমনি পরাশক্তির শাসনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে উদ্ভূত সেক্যুলার পদ্ধতি যা একটি জাতিকে সাময়িকভাবে একত্র করতে সক্ষম।

জাতীয়তাবাদ একদিকে সাম্রাজ্য বিস্তারের হাতিয়ার অন্যদিকে প্রতিক্রিয়াশীল মতবাদ । জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচার করে হিটলার পেয়েছে জার্মান জাতির ব্যাপক সমর্থন, হিটলার হত্যা করতে পেরেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ । হিটলার তার বই মেইন ক্যাম্প-এ উল্লেখ করেন, আমরা যুদ্ধ করেছি জাতির মঙ্গলের ও নিরাপত্তার খাতিরে, জাতির সম্মানের জন্য। তার বক্তব্য-‘যতদিন পর্যন্ত জার্মান জাতির অস্তিত্ব থাকবে, তারা এইভাবে গর্ববোধ করবে যে এরা তাদের পূর্বপুরুষের সন্তান। … জার্মান, প্রিয় জার্মান দেশ । আমরা সবচেয়ে উপরে, পৃথিবীর সমস্ত দেশের ঊর্ধ্বে।’

আজকের যুগেও দেখি বারাক ওবামা তার বইয়ে গর্ব করে বলছে- ‘সারা বিশ্বে শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার যোগ্যতা একমাত্র আমেরিকারই আছে।’ জনগণ তাতে সমর্থন দেয়  জাতীয়তাবাদী চেতনায়। এতে স্পষ্ট যে জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদের সহায়ক শক্তি। সারাবিশ্বে এক দেশের সাথে অন্য দেশের যুদ্ধে শাসক যখন অন্যায়ভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তখনই ঐ দেশের জনগণ কেন স্বৈরাচারী  শাসককে সমর্থন দেয়? এর মূল কারণ জাতীয়তাবাদ। ফ্রান্সের নেপোলিয়ন যখন অন্যায়ভাবে বিভিন্ন দেশ দখলে মেতে ছিল তখন তার মাথায় মুকুট পরিয়ে দেয় প্রধান পোপ, লাল গালিচা সংবর্ধনা পেয়ে নেপোলিয়ন হয় রাষ্ট্রপ্রধান, জনগণ তাকে সমর্থন দেয়। অস্ত্রের বলে নেপোলিয়ন সাম্রাজ্য বিস্তার করেলও জাতীয়তাবাদী চেতনায় জনগণ তার ক্ষমতার শীর্ষ আরোহণকে সমর্থন জানায়। সে জন্য বারট্রান্ড রাসেল তার ‘শিক্ষা ও সমাজ কাঠামো’ বইয়ে জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমকে গণমূর্ছা হিসেবে চিহ্নিত করে একে মাতলামি ও মাদকসেবনের চেয়েও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, ‘জাতীয়তাবাদ পরদেশ লুণ্ঠনকে স্বাগত জানায়। বারট্রান্ড রাসেল একে ধ্বংসাত্মক শক্তি বলে অভিহিত করে বলেন- “আমাদের সভ্যতা যে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলছে তার পেছনে প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করছে জাতীয়তাবাদ।’’

এ থেকে বোঝা যায়- সমরবাদী জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদের আপন ভাই। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদ পরাশক্তির শাসন থেকে রক্ষার জন্য সেক্যুলার পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদ সমরবাদী জাতীয়তাবাদে রূপায়িত হতে পারে। এক সময় নেপোলিয়নের সাম্রাজিক শাসন থেকে রক্ষার জন্য ইতালি ও জার্মানি প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদী চেতনায় প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলে। জাতীয়তাবাদী শক্তিতে তারা পায় স্বাধীন ইতালি ও স্বাধীন জার্মানি। এক পর্যায়ে সেই ইতালি ও জার্মানি সমরবাদী জাতীয়তাবাদী চেতনা গ্রহণ করে। এক সময় আমেরিকা ব্রিটেনের কলোনিয়াল শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে জাতীয়তাবাদী চেতনায়। আজ আমেরিকা সমরবাদী জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে চলছে।

জার্মানির হিটলার, ইতালির মুসোলিনী আর আজকের যুগে আমেরিকার বুশ-ওবামা সমরবাদী জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়ক। প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদী চেতনায় ইহুদীবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখল করে একত্রে বসবাস করে। সেই যায়নবাদী ইসরাইল সমরবাদী জাতীয়তাবাদী ইহুদী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ফিলিস্তিনী মুসলমানদের হত্যা করে চলছে । ইসরাইলের জনগণই শিমন পেরেজ, নেতানিয়াহুদের নির্বাচিত করে। প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদী চেতনা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নকে চ্যালেঞ্জ করা তো দূরের কথা উল্টো নিজেই সমরবাদী জাতীয়তাবাদী চেতনায় চলতে চেষ্টা চালায়। এর মূল কারণ জাতীয়তাবাদ ধর্মের সাথে চলে না, চলে সেক্যুলারিজমের সাথে। জাতীয়তাবাদ অন্য জাতি, গোষ্ঠী বা বর্ণের মানুষদের বন্ধুত্বের আসনে বসায় না। কেননা জাতীয়তাবাদ এক ধরণের গোষ্ঠীবাদ- যেখানে নিজ জাতি বা গোষ্ঠীর প্রতি সরল ও অন্ধ সমর্থন সৃষ্টি হয়। জাতীয়তাবাদে নিজ জাতি বা গোষ্ঠীর প্রতি দুর্বলতা থাকে। সেখানে ন্যায়-অন্যায় বোধ হারিয়ে যায়। এটি একটি সঙ্কীর্ণ মতবাদ যা গোষ্ঠীবাদ ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব সৃষ্টি করে। বিখ্যাত দার্শনিক মুর্তজা মোতাহহারী বলেন,  “ জাতীয়তাবাদ জাতীয় আবেগ ও অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কোনো যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির ভিত্তিতে নয়।”

জাতীয়তাবাদ জাতীয় অনুভূতি ও জাতীয় অধিকারকে গুরুত্ব দিলেও অন্য জাতির অধিকার ও অনুভূতির প্রতি সদয় হতে বলে না। এ কারণে ম্যাকিয়াভেলি তার তত্ত্বে শাসককে ধর্ম ও নৈতিকতা থেকে সরে এসে জাতীয়তাবাদকে গুরুত্ব দিয়ে শাসন পরিচালনার কথা বলেন। ম্যাকিয়াভেলি তত্ত্বে জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজম একই সাথে অবস্থান করে। কেননা তার মতে, ধর্ম ও নৈতিকতাকে শাসন প্রণালীর নীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থে সিংহের মত সাহসী আর শিয়ালের মত ধূর্ততার নীতিতে শাসন পরিচালনা করতে হবে। এরই নাম জাতীয়তাবাদ।

তবে জাতীয়তাবাদে কিছু ইতিবাচক দিক আছে– যেমন জাতিগত বন্ধন ও ঐক্য এবং জাতিগত পরিচয় সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে বিজাতীয় নীতি ও সংস্কৃতি থেকে জাতিকে রক্ষার শপথ লালন করা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, জাতীয়তাবাদ ইসলামসমর্থিত। জাতীয়তাবাদের ইতিবাচক দিক আছে, তেমনি আছে বহু নেতিবাচক দিক। এর নেতিবাচক দিকের পাল্লা ইতিবাচক দিকের চেয়ে অনেকগুণ ভারী। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের কিছু ইতিবাচক দিক আছে তাই বলে মতবাদদ্বয় ইসলাম সমর্থন করতে পারে না । কেননা ইসলাম এমন এক জীবন বিধান যার শুধু ইতিবাচক দিক আছে কোন নেতিবাচক দিক নেই ।  নেতিবাচকতার কারণে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র যেমন সভ্যতার বিকাশে বাধা, তেমনি জাতীয়তাবাদ। মদের কিছু ইতিবাচক দিক আছে, কিন্তু ইসলাম মদপান হারাম ঘোষণা করেছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে- মদের ভালো দিকের চাইতে ক্ষতির মাত্রা বেশি।

জাতীয়তাবাদের ভালো দিকের চাইতে নেতিবাচক দিক বেশি বলে ইসলাম জাতীয়তাবাদকে কিছুতেই সমর্থন করতে পারে না।
অনেকে হয়তো বলবেন, স্বজাতিপ্রেম তো প্রাকৃতিক ব্যাপার। স্বজাতিপ্রেম এবং দেশপ্রেম কিছুতেই জাতীয়তাবাদের সমার্থক হতে পারে না। স্বজাতিপ্রেম ও দেশপ্রেম মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার যা জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করে।

জাতীয়তাবোধ আর জাতীয়তাবাদ এক বিষয় নয়। জাতীয়তাবোধে স্বজাতি ও স্বদেশের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা থাকবে, কিন্তু জাতীয়তাবাদ মতাদর্শিক ব্যাপার যা নিজ দেশ ও জাতির স্বার্থ ও অধিকার ছাড়া অন্য জাতি সম্পর্কে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে না। ইসলাম সেক্ষেত্রে সকল জাতির প্রতি দায়িত্বশীল হতে নির্দেশ দেয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-“ তোমরা শ্রেষ্ঠজাতি, তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে, অসৎকাজে বাঁধা দিবে ।” (৩:১১০)

শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি কোন বংশ, রক্ত, বর্ণ নয়, ভৌগোলিক সীমারেখাও নয়। বংশ- রক্ত- বর্ণ ও জাতের ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদী চেতনা সৃষ্টি হয় তা মানুষকে বৈশ্বিক করে তোলে না। এতে মানুষ গোষ্ঠীবাদী হয়ে পড়ে। এটা এক ধরণের পশুপ্রবৃত্তিগত আচরণ। পিঁপড়া, মৌমাছি, পাখিসব স্ব স্ব জাত অনুযায়ী দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। মৌমাছির চাকে ঢিল মারলে দলবদ্ধভাবে মৌমাছিদল আক্রমণ করবে। কাক আক্রান্ত হলে দলবদ্ধভাবে কাকদল চিৎকার করে। মানুষ স্ব স্ব জাত অনুযায়ী দলবদ্ধভাবে সংহতি প্রকাশ করলে এবং ভিন্ন জাতের বিরুদ্ধভাবাপন্ন হলে তা জীবসুলভ সঙ্কীর্ণ গোষ্ঠীবাদী চরিত্রকে প্রকাশ করে। এতে স্বজাতির স্বার্থ রক্ষিত হলেও জাতিগত সংঘাত তীব্রতর হয়। ওয়ালারস্টেইন বলেন- ‘ Ethnic struggles are more pervasive and salient than class struggles ‘ ( The  Capitalist World Economy)
পিএস ঘোষ ‘Nationalism Versus Ethnicity’ বইয়ে বলেন –“ Since nationalism and democracy are majoritarian, it is a constant challenge for the existence of minorities”

এ থেকে স্পষ্ট জাতিগত সংঘাত আর সংখ্যালঘুর অস্তিত্ব সংকটের মূলে কাজ করে জাতীয়তাবাদ। এ কারণে ইসলাম এ সকল সমস্যা উত্তরণে জাতি- রক্ত- বংশ- বর্ণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণের যে কুসংস্কার তা বাতিল করে সুকৃতির প্রতিষ্ঠা ও দুষ্কৃতির মূলোচ্ছেদের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন- “ আরব অনারবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখে না তাকওয়া ব্যতীত ।”
অন্য জাতির প্রতি প্রেম ও দায়িত্ববোধ জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করতে পারে না, ইসলাম ছাড়া। কেননা জাতীয়তাবাদ ইসলাম ধর্মীয় বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিহত করতে চায়। রাষ্ট্র থেকে ধর্মের পৃথকীকরণ নীতি একই সাথে সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদের নীতি। রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনৈতিক কর্মপন্থায় ইসলাম ধর্মকে নিষিদ্ধ করতে সেক্যুলার পদ্ধতিতে জাতীয়তাবাদ নামক মতাদর্শের আবির্ভাব, জাতীয়তাবাদ সেক্যুলারিজমের সাথে একসাথে অবস্থান করে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
ড. আলী মুহম্মদ নাকাভী তার ‘Islam and Nationalism’ বইয়ে উল্লেখ করেন – “ Natinalism is closely linked with secularism, in view of the necessity of separation between government and religion and politics from creed. One of the basic principles of nationalism is a rejection of religious bonds and an acceptance of a secularistic order.  …… Secularism is the twin brother of natinalism .”
জাতীয়তাবাদ সেক্যুলারিজমের আপন ভাই, উপনিবেশবাদ ও পুঁজিবাদের জ্বালানি, সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার, ফ্যাসিবাদের শক্তি, স্বৈরাচারের অস্ত্র আর আদর্শহীন বঞ্চিতদের দীর্ঘশ্বাস।

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক


শেয়ার করুন