জনসম্মুখে আসছে ‘প্রাচীনতম’ কুরআন

Oldest-Quran-thereport24 জনসম্মুখে আনা হচ্ছে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধান পাওয়া ‘প্রাচীনতম’ কুরআনের খণ্ডাংশ। আগামী ২ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত কুরআনের ওই পৃষ্ঠাগুলো প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। খবর এএফপির।
এর আগে গত বুধবার প্রাচীনতম কুরআনের খণ্ডাংশের সন্ধান পাওয়ার দাবি করে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির লাইব্রেরিতে সম্প্রতি তা পাওয়া যায়। ভেড়া বা ছাগলের চামড়ার ওপর লেখা ওই পান্ডুলিপিটি অন্তত ১৩৭০ বছর আগের বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওকার্বন এক্সলেটর ইউনিটে পাণ্ডুলিপিটি পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর গবেষকরা বলেছেন, লেখার উপযোগী করে গড়ে তোলা পাণ্ডুলিপির ওই চামড়াটি ৫৬৮ থেকে ৬৪৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ের।
এই পরীক্ষার পর গবেষকরা এটি প্রাচীনতম কুরআনের খণ্ডাংশ বলে নিশ্চিত হন। পরীক্ষার ফলাফল ৯৫ শতাংশ সঠিক বলেও দাবি করা হয়েছে।
রাসূল (সা.) ৬১০ খ্রীষ্টাব্দে নবুয়ত প্রাপ্ত হন এবং ৬৩২-৩৩ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। গবেষকদের ধারণা, পাণ্ডুলিপিটি মহানবী (সা.) এর জীবদ্দশায়ই লেখা হয় এবং কোনো একজন সাহাবী তা লিখেছিলেন।
কুরআনের পৃষ্ঠাগুলো ‘হিজাজি হস্তলিপি’র হওয়ায় এটাকে প্রাচীনত্বের ক্ষেত্রে আরেকটা প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছেন গবেষকরা। কারণ, তৃতীয় খলীফা উসমান (রা.) এর যুগে পূর্ণ কুরআন সংকলনের আগে ওই লিপিতেই কুরআনের আয়াত লিখে রাখা হতো।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির মধ্যপ্রাচ্যের বইয়ের সংগ্রহশালায় কুরআনের এই খণ্ডাংশটি আবিষ্কৃত হয়। একজন পিএইচডি গবেষক এই পৃষ্ঠাগুলো দেখে এগুলো বেশ পুরাতন বলে সন্দেহ করেন। এরপর তা রেডিওকার্বন বিভাগে পাঠানো হলে এর প্রাচীনত্বের বিষয়টি আবিষ্কৃত হয়।
তবে এগুলো যে এত বছরের পুরনো গবেষকরা তা ভাবতেও পারেননি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সংগ্রহশালার পরিচালক সুসান ওরাল।
এ ব্যাপারে ব্রিটিশ লাইব্রেরিগুলোর পাণ্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা করা ড. মুহাম্মদ ঈসা ওয়ালে বলেছেন, বিস্ময়কর এই আবিষ্কারটি মুসলিমদের আনন্দিত করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির খ্রীষ্টানত্ব ও ইসলাম বিষয়ের অধ্যাপক ডেভিড থমাস বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী, নবী মুহাম্মদ (সা.) ৬১০ থেকে ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দ সময়কাল জুড়ে কুরআনের বাণী প্রাপ্ত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যিনি এই পাণ্ডুলিপিটি লিখেছেন তিনি সম্ভবত নবী (সা.) এর মুখ থেকেই তা শুনেছেন।’
মহানবী (সা.) এর সময়ে পশুর চামড়া, পাথর, গাছের ছাল ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত লিখে রাখা হতো। এটি সে সময়েরই লেখা বলে দাবি করেছেন থমাস।
তিনি আরও বলেন, ৬৫০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে ইসলামের তৃতীয় খলীফা উসমান (রা.) এর সময়ে কুরআনের লিপিগুলোকে একত্রিত করে বই আকারে তৈরি করা হয়। এর আগে ‘হিজাজি হস্তলিপিতে’ কুরআন লেখা হতো। আবিষ্কৃত খণ্ডাংশটিও ‘হিজাজি হস্তলিপি’র বলে উল্লেখ করেছেন থমাস।
ইসলামের প্রথম খলীফা আবু বকর (রা.) এর যুগ থেকে কুরআন লিপিবদ্ধ করার কাজ শুরু হয়। এরপর উমর (রা.) এর যুগেও তা অব্যাহত থাকে। সবশেষে উসমান (রা.) এর সময়ে পুরো কুরআনকে বই আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়।


শেয়ার করুন