চিকিৎসা খরচ জোগাতেই বছরে দরিদ্র ৬৪ লাখ মানুষ

2015_12_12_21_33_30_Yc4GRhnl125Mu76fg71M7MKO9ArMyM_originalবাংলাদেশের মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার একটি হলো চিকিৎসা। কিন্তু শুধুমাত্র এই একটি মৌলিক চাহিদার খরচ জোগাতে গিয়েই বছরে প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র্যতার শিকার হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এসব মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেতে গরিব থেকে আরো গরিব হয়ে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের আরো সৎ ও দায়িত্বশীল হতে হবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইউনিভার্সেল ‌হেলথ কাভারেজ‌‌‌’ ডে উপলক্ষে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজনে এক আলোচনা সভায় এসব বিষয় ওঠে আসে।

সভায় আইসিডিডিআরবির উপনির্বাহী পরিচালক ড. আব্বাস ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘সদ্য পাস করা ডাক্তাররা নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের চেয়ে টাকা উপার্জনের চিন্তা-ভাবনা বেশি করেন।’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তারদের উচিৎ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা।’ তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা আরো দৃঢ় করতে পারলে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যাবে বলেও মত প্রকাশ করেন আইসিডিডিআরবির এ উপনির্বাহী পরিচালক।

এদিকে, স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সরকারিভাবে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের রোগীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।

আলোচনায় তিনি বলেন, ‘উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য মফস্বলের রোগীরা ঢাকা মুখী হন। এতে রোগীর কষ্টের সঙ্গে চিকিৎসা ও আনুষাঙ্গিক ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়।’

তাই প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ক্যান্সার রোগীদের জন্য একটি স্পেশালাইজড হাসপাতাল তৈরি করার প্রস্তাব রেখে রাসকিন বলেন, ‘প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ লাখ ২০ হাজার করে ক্যান্সার রোগী বাড়ছে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা হাসপাতালে এতো রোগী সামলানোর মত জায়গা বা ডাক্তার নেই। তাই বিভাগীয় শহরগুলোতে হাসপাতাল তৈরি করলে ঢাকার ওপর চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। রোগীরাও সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যয়ভারে কিছুটা হলেও সংগতি ফিরে পাবে।’

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ডা. মো. এম ইসলাম বুলবুল জানান, পৃথিবীতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এবং প্রতিবছর ১৫ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবার খরচ মেটাতে গিয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় এবং গরিব থেকে আরো গরিব হয়ে যায়। আর বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করছে প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ যার মধ্যে প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ প্রতি বছর শুধু স্বাস্থ্যব্যয়ভার বহন করতে গিয়েই দরিদ্র্যতার শিকার হচ্ছে।

ডা. বুলবুল তার আলোচনায় ‘ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ’ সম্পর্কে নানা রকম তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরার পাশাপাশি এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেন। এ ক্ষেত্রে কোনো রকম অর্থনৈতিক বিপর্যয় বা অনটনে পতিত না হয়ে সামষ্টিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পূনর্বাসন সেবাসহ অত্যাবশ্যক এবং মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুল হালিম, আইসিডিডিআরবির প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান ডা. আফতাব উদ্দনি, আয়ুর্বেদ অ্যান্ড ন্যাচারোপ্যাথি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আয়ূনস)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. সমীর কুমার সাহা, ফেইথ বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেন্ডার স্পেশালিস্ট নিলুফার আহমেদ করিম, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবান প্রমুখ।


শেয়ার করুন