তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন

চিকিৎসক খাইরুন্নেছা মুন্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ

downloadঅাব্দুল আলীম নোবেল
রোগি ও রোগির স্বজনের সাথে অশ্লীল আচরণ করায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের চিকিৎসক খাইরুন্নেছা মুন্নির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে খোদ সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার তিন সদস্য কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
রোববার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আবদুর রহমান লিখিত এই অভিযোগ দিয়েছেন সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবরে। আর লিখিত অভিযোগ পেয়েই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার কথা জানিয়েছে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব) ডাক্তার রফিকুল হাসান।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, জরায়ু রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয় শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার খতিজা বেগম। মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও একবারের জন্যও রোগি খতিজাকে দেখেনি কর্তব্যরত চিকিৎসক খাইরুন্নেছা মুন্নি। এসময় অন্য রোগিদের দেখে চলে যায়। এর পর রাত ১১ টার দিকে রোগির অবস্থা গুরুতর হলে রোগির স্বজন মীর মোহাম্মদ কাশেম বিষয়টি অবগত করেন চিকিৎসক খাইরুন্নেছাকে। এসময় তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগের সূত্রে আরও জানা গেছে, রোবরার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯ টার দিকে চিকিৎসক মুন্নি ওয়ার্ডে এসে রোগি খতিজাকে উদ্দেশ্য করে ‘তোমাকে কে ভর্তি করিয়েছে, কেন তার অনুমতি ছাড়া ভর্তি করা হয়েছে, যে ভর্তি করেছে তাকে চিকিৎসা করতে বল’ ইত্যাদি বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত ফাইল ছুড়ে ফেলে দেয়। রোগি খতিজা বেগমের ভাই ও অভিযোগকারি সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আবদুর রহমান জানান, তার বোনের সাথে চিকিৎসকের করা দুর্ব্যবহার নিয়ে তাৎক্ষণিক মৌখিকভাবে অবগত করা হয়েছে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার রতন চৌধুরীকে। কিন্তু এসময় রতন চৌধুরী বলেন, ডাক্তার খাইরুন্নেছা মুন্নি তার কথ্য অমান্য কওে এবং এবিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অপরাগতা জানায়।
আবদুর রহমান আরও জানান, রোগির সাথে খারাপ আচরণ ও চিকিৎসা না দেয়ার কারণে ডাক্তার খাইরুন্নেছা মুন্নির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এমনকি উক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এদিকে চিকিৎসক খাইরুন্নেছা মুন্নির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে জামায়াতের নিকটাত্মীয় ও জামায়াতের অর্থপৃষ্ঠপোষকতাকারি বলেও লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রোববার রাত ৯ টায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের চিকিৎসক খাইরুন্নেছা মুন্নি বলেন, ‘আমি এখন অপারেশনে ব্যবস্থা রয়েছি, আপনি পরে ফোন দেন।’
এবিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার রতন চৌধরী বলেন, ‘বোরবার দুপুরে চিকিৎসক খাইরুন্নেছা মুন্নির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে আমি ছুটিতে থাকায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানবেন ভারপ্রাপ্ত তত্ত্ববধায়ক। তাছাড়া চিকিৎসক মুন্নি আমার কথা অমান্য করার বিষয়টি সঠিক নয়।’
হাসপাতালেল ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার রফিকুল হাসান বলেন, ‘রোববার বিকালের দিকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বৈঠক করে সভার মতামতের ভিত্তিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন কর হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পর সংশ্লিষ্ট দফতরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। এতে আমাদের করার কিছুই নেই।’
এদিকে চিকিৎসক খাইরুন্নেছা মুন্নির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের কপি পাওয়ার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুলতান আহমদ সিরাজী বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর এসব বিষয়ে বলা যাবে, এখন কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা বলা যাবে না’।


শেয়ার করুন