মহেশখালীর

চালিয়াতলী-মাতারবাড়ী ভাঙা সড়ক জোড়া লাগবে কবে?

moheskhil pic-01.08.16এ.এম হোবাইব সজীব :

মাঝখান থেকে সড়কের এক কিলোমিটার মতো বিলীন। তাতে এমপি আশেক উল্লাহ’র রফিকের সহযোগিতায় স্থানিয় আওয়ামীলীগ নেতারা ভাঙা সড়কে বস্তা ফেলে কিছুটা চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। আরও কিছু দূর এগিয়ে দেখা যায় সড়কের অর্ধেক অংশ নেই। আবার দেখলে মনে হবে যেন এটি একটি সড়ক নয় মৃত্যুকোপ। এক পাশ দিয়ে কোনো রকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে লোকজন। এই চিত্র কক্সবাজারের মহেশখালীর চালিয়াতলী-মাতারবাড়ি সড়কের । এ সড়কের আধা কিলোমিটার অংশ এক মাসের বেশি সময় হলেও সংস্কার হয়নি। ফলে ভাঙা সড়কে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ।
সিঙ্গাপুরের স্বপ্ন দেখানে মানুষ গুলো চাই যোগাযোগ ব্যবস্থার অমূল্য পরিবর্তন ও টেকসই বেড়িবাঁধ! কিন্তু হচ্ছেনা! অসংখ্যা খানাখন্দে ভরা চালিয়াতলী-মাতারবাড়ি সংযোগ সড়কে দীর্ঘদিন থেকে অনেকটা জোঁড়াতালি দিয়ে কোন রকম যানবাহন চলাচল করলেও গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সড়কটি ভেঙ্গে যায়। সড়কের চারটি অংশে বড় ধরনের ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় দূর্ভোগে পড়েছে মাতারবাড়ি ধলঘাটার মানুষ। এখনো জোয়ার ভাটা চলতে থাকায় ক্রমেই বাড়ছে ভাঙ্গনের পরিধি। মেরামতের ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে বাড়বে মাত্রাতিরিক্ত নির্মান ব্যয় এমনই জানান মাতারবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার মো. উল্লাহ।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চার কিলোমিটার সড়কের এক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় হেঁটে যেতে হচ্ছে। স্থানিয় লোকজন জানান, মাতারবাড়ী চেয়ারম্যান মোঃ উল্লাহ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বসে নেই যেখানে ইউনিয়নবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সে খানে মানুষের কষ্ট লাগবে প্রাণ প্রণে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। সড়কটি দ্রত সংস্কারের জন্য তিনি সাংবাদিকদের দৃষ্টি আর্কষণ করে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করতে অনুরোধ জানানোর পর দেশের গন্যমাধ্যমে তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশ হলে নড়ে চড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম আবু হায়দার বলেন, উপজেলা সদরসহ চকরিয়ার বদরখালী যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম চালিয়াতলী-মাতারবাড়ী সড়কটি। ঈদুল ফিতরের সময় ঘরমূখী মানুষের দুর্ভোগ লাগাবে এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় মাতারবাড়ী ইউনিয় আ.লীগের উদ্যেগে যে মেরামত হয়েছিল সে টুকু দিয়ে কোন মতো পথচারী লোকজন চলাচল করে আসতেছে । অথচ এক মাসের ও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সড়ক সংস্কারের কোনে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াদুল কুদ্দুস বলেন, ভাঙা সড়কটি সংস্কারের জন্য স্থানিয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ভাঙাটি বড় হওয়ায় বরাদ্দা না পাওয়ায় সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছেনা।
মহেশখালী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. আবুল কালাম বলেন, এককোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সড়কটির ভাঙার পরিধি বড় হওয়ায় বরাদ্দ বেশি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ হাতে আসলে শিঘ্রই উক্ত সড়কের কাজ শুরু হবে। অপরদিকে সড়ক ছাড়া ও
মাতারবাড়ী ইউনিয়টি বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও দূর্যোগের তোপের মূখে থাকে এ এলাকাটি। প্রতিটি দূর্যোগে বিশেষ করে উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্ত হয়। স্থায়িভাবে শক্ত ব্ল-ক দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার না করার কারণে বার বার ক্ষতির সম্মুখীন হয় উপকূলের এই ইউনিয়ন। এদিকে মাতারবাড়ীবাসীর বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবী দীর্ঘদিনের হলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে কাজের কোন প্রকার অগ্রগতি হয়নি। ফলে অতীতে উপকূলের লাখো মানুষ অকালেই প্রাণ হারায় সর্বনাশা বঙ্গোপসাগারের বিশাল জলরাশিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার পরিবার।
আসমা খাতুন নামে এক মহিলা জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বসে ব্যাপক ক্ষতি হয় মাতারবাড়ী। এখনোও ঘুরে দাঁড়াতে পারি নাই অনেক অসহায় পরিবার। ঘুমানোর জন্য নেই কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা। কিন্তু এ নিয়ে খুব বেশি আক্ষেপ নেই তাঁদের। ত্রাণ চাই না সবার আগে স্থায়ি বেড়িবাঁধ চান তারা। মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধের আধাঁ কিলোমিটার এলাকা নতুন করে সাগরে বিলীন হতে চলেছে। গত এক মাসে অমাবস্যা আর পূর্ণিমার জোয়ারের এবং সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বেড়িবাঁধের এই ক্ষতি হয়। এ নিয়ে এক বছরের মধ্যে মাতারবাড়ির তিন কিলোমিটার পাকা বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটারই ধসে গেছে।
পাকা বেড়িবাঁধের বড় অংশ ধসে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে মাতারবাড়ির ৮০ হাজার বাসিন্দার। বেড়িবাঁধের বাকি এক কিলোমিটার অংশও যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। তেমনটা হলে পুরো ইউনিয়ন সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে বলে এলাকার মানুষ মনে করে।
ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে বন্যা ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকির মধ্যে আছে ২৫টি গ্রামের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ। সরেজমিনে দেখা যায়, মাতারবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিমে সাইরার ডেইল ও ষাইটপাড়ার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ সাগরের তীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ভাঙছে ঝাউগাছের লাগোয়া বেলাভূমি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার মো. উল্লাহ দৈনিক আমাদের কক্সবাজারকে বলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ এসেছে বলে তারা তাকে জানিয়েছেন। শিগগিরই ভাঙা বাঁধ মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তাকে আশ্বাস্তও করেছেন।


শেয়ার করুন