চার জল্লাদ প্রস্তুত, যেকোনো সময় ফাঁসি

দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়েছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর স্বজনরা। মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। প্রস্তুত রয়েছেন চার জল্লাদ। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই দণ্ড কার্যকর করবেন তারা।

রীতি অনুযায়ী স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পরই দণ্ড কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জামায়াত নেতার ৩৫ স্বজন ছয়টি মাইক্রোবাসে করে কাশিমপুরে আসেন। কারাগারের ভেতরে মীর কাসেমের সঙ্গে দেখা করা শেষে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন।

কাসেমপত্নী খন্দকার আয়েশা খাতুন এরপর সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, তার স্বামী বলেছেন, তিনি মৃত্যু ভয়ে ভীত নন।

কাসেমপত্নী জানান তার স্বামী বলেছেন, তাকে যে কারণে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে সে উদ্দেশ্য সফল হবে না। এই দেশে একদিন ইসলাম বিজয়ী হবে।

কাসেমের স্বজনদের এই সাক্ষাতের পর দণ্ড কার্যকরে আর বেশিক্ষণ সময় লাগবে না বলেই জানিয়েছেন কাশিমপুর কারাগারের কর্মকর্তারা।

শাহজাহানের নেতৃত্বে চার জল্লাদ

তারা জানান মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের নেতৃত্বে থাকবেন জল্লাদ শাহজাহান। প্রায় ৫০টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তিনি এরই মধ্যে আলোচিত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এর আগেও একাধিক জামায়াত নেতার দণ্ড কার্যকর করেছিলেন তিনি।

এই দণ্ড কার্যকরে তার সহযোগী থাকবেন তিন জন। তারা হলেন, দীন ইসলাম, রিপন, শাহীন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা সাতটার দিকে কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন কাশিমপুর কারাগারে ঢুকেন। মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের আগে আগে জেলা ম্যাজিস্ট্রের এস এম আলম, সিভিল সার্জন হায়দার আলী খান ও পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ কারাগারের ভেতরে ঢুকবেন। তারা যে কোনো সময় কারাগারে আসবেন।

দণ্ড কার্যকরের আগে মীর কাসেমকে তওবা পড়াবেন কারাগারের মসজিদের পেশ ইমাম হেলাল উদ্দিন।

সন্ধ্যা সাতটার পর ফাঁসি কার্যকরে নির্বাহী আদেশ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

আরও কঠোর হয়েছে নিরাপত্তা

সকাল থেকেই কারাগারের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় দর্শণার্থী প্রবেশ। বিকাল থেকে এই নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তা আর গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া সবাইকেই কারা ফটকের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেমকে ২০১৪ সালের নভেম্বরে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে গত ৮ মার্চ সে দণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এই রায় পর্যালোচনা করতে একাত্তরে আলবদর নেতার আবেদন নাকচ করা হয় গত মঙ্গলবার। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ থাকলেও মীর কাসেম তা নেননি। শুক্রবার কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করার পরই এই দণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় ছিল কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম সপ্তম ব্যক্তি যার দণ্ড কার্যকর হচ্ছে। এর আগে ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ডও শুরু হয়েছে।

এর আগে পাঁচ মানবতাবিরোধীর ফাঁসিই কার্যকর হয়েছে পুরান ঢাকায় নাজিমউদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে কারগারটি কেরানিগঞ্জে স্থানান্তরের কারণে প্রথমবারের মত একাত্তরের অপরাধের দায়ে কোনো অপরাধীর সাজা কার্যকর হচ্ছে কাশিমপুরে।

—-ঢাকাটাইমস


শেয়ার করুন