ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা দিতে সরকার ব্যর্থ: দুদু

আরটিএনএন
ঢাকা: বর্তমান সরকার ঈদ উদযাপনে মানুষের ন্যূনতম ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাসুজ্জামান দুদু।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশ বাঁও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু। ১৯৭১ সালে যুদ্ধে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অর্জনে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে। তেমনি এদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা বিপন্ন করতে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত সহযোগিতা করেছে। শুধূ তাই নয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারত সীমান্তে এদেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে চলেছে। তাই আজকে যদি দেশে নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকার থাকতো তাহলে আমরা যেমন তিস্তার পানি পেতাম তেমনি সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে তীব্র প্রতিবাদ করতে পারতাম। আমরা ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে এই সকল সমস্যা সমাধান চাই।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বর্তমান সরকার ঈদ উদযাপনে দেশে মানুষের ন্যূনতম ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। চাঁদাবাজী স্মরণকালে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এরা শুধু মানুষ খুন করাই নয়, মানুষের সুস্থতাও কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার শুধু নিজ ও দল ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না।

বর্তমান সরকারকে নতজানু সরকার আখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার গণবিরোধী সরকার। ভারতের মানুষ সীমান্তে মানুষ হত্যা করে আর এরা গণতান্ত্রিক কর্মীদের হত্যা করে। দুই হত্যাকারীর কবলে বাংলাদেশ। এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ।

দুদু বলেন, দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিত করে সহায়ক সরকারের মধ্যে দিয়ে একটি নির্বাচন আদায় করে শুধু মাত্র এই সরকার নয়, ভারতকেও উপযুক্ত জবাব দিতে পারি। ভারতকে যদি জবাব দিতে হয় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে মানুষের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর সেজন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠায় যে আন্দোলন করছেন সেই আন্দোলনে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, রাত পেরোলেই ঈদ অথচ আমাদের সেতুমন্ত্রী গতকালও বলেছে কোথাও যানজট নাই। পুলিশের আইজিপি বলেছেন তিনি কোথাও যানজট দেখেননি। কিন্তু গণমাধ্যমের কল্যাণে দেখতে পারছি ভিন্ন চিত্র। কোথাও কোথাও ৩০ থেকে ৫০ মাইল দীর্ঘ এলাকা জুড়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অচল অবস্থায় মানুষ বসে আছে ঘন্টার পর ঘন্টা।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। অথচ লজ্জার ব্যাপার হচ্ছে আঘাতপ্রাপ্তদের মামলা নেয়া হয় না, মামলা নেয়া হয় আক্রমণকারীদের। তাই একটি কথা স্পষ্ট করে বলছি, ঈদের পর জবাব দেয়া হবে। অনেক রক্ত দিয়েছি, রক্তে কেনা বাংলাদেশ। রক্তে কেনা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা। আর রক্ত দিয়েই আমরা আমাদের দায়মুক্তি আমাদের অর্জিত গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো।

সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান তামান্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপি সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা বাবু সরঞ্জন ঘোষ প্রমুখ।

ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী দুই কিশোরকে হত্যার মাধ্যমে ভারত আবারো প্রমান করলো তারা বাংলাদেশের বন্ধু নয়। তাদের এই অব্যাহত আগ্রাসন বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, অনুনয়-বিনয় করে কখনো সীমান্তে হত্যা ও ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ হবে না। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারত বিরোধীতা কিংবা ভারত তোষন নয়, প্রয়োজন সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা।

তিনি আরো বলেন, ভারতের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সীমান্তে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা ও আগ্রাসন বন্ধ সম্ভব নয়। এই হত্যাকাণ্ড ও আগ্রাসন বন্ধ করতে হলে দেশে একটি সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যারা মেরুদণ্ড সোজা করে সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে।


শেয়ার করুন