সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার

গ্রীষ্মের আগুন লাগা গরমে, দিল ঠান্ডা আম কাঁঠালে !

rtttআতিকুর রহমান মানিক :

কক্সবাজার পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স এর মোটেল লাবনী সংলগ্ন কাস্তি রেস্তোঁরায় ২৩ মে (মঙ্গলবার)’র মনোরম বিকেল। রোদতপ্ত দিনশেষ হলেও তাপপ্রবাহের যেন শেষ নেই, তারওপর লোডশেডিং। রেস্তোঁরায় ঢুকতেই ভয়াবহ ব্যপার। পর্যটন শহরের সংবাদ জগতের রথী-মহারথীরা ধারালো বটি-দা, ছুরি হাতে ছুটাছুটি করছেন, ব্যস্ততার শেষ নেই।
কি মুশকিল, মহাযুদ্ধ আসন্ন নাকি ?
কিন্তু ব্যপারটা খোলাসা হল একটু পর, চারদিক দেখে। টাঙ্গানো ব্যানার দেখে বুঝলাম মহাযুদ্ধ নয়, ফলযুদ্ধ !

“গ্রীষ্মের আগুন লাগা গরমে, দিল ঠান্ডা আম কাঠালে”, এমনটিই ছিল শিরোনাম।

লম্বা কয়েকটি টেবিলজুড়ে মৌসূমী রকমারী ফলের সমারোহ। আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, তাল, কঁচি তালের শাঁস, লিচু, খেজুর, তরমুজ, গাব ও আরো কতকিছু থরে থরে সাজানো। আরো দুটি ফল ছিল, নামটাও আনকমন, “পাইন্না গোলা” ও “বত্তাগোলা”! ইসলাম মাহমুদের তত্ত্বাবধানে ছুরি হাতে নিয়ে ফলগুলো ড্রেসিংয়ে ব্যস্ত সাংবাদিকরা।

ড্রেসিং কাটা-ছেঁড়া শেষে কিছুক্ষন পর-পরই রেডি হয়ে টেবিলে উঠছিল এক এক ফলের এক একটি লোভনীয় ডিশ। কিন্তু আজ তেনারা কাগজ-কলম-ক্যামেরা ফেলে ফল-ছুরি-ডিশ কেন হাতে নিলেন ? ওহ শিট ভূলেই গিয়েছিলাম। সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র আয়োজনে মৌসূমী ফল উৎসব আজ। বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক, জাতীয় দৈনিক, টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও শুভাকাঙ্খীরা আসতে শুরু করেছেন।
dddমাসখানেক আগে বাংলা নববর্ষ বরন উপলক্ষে লুঙ্গি-গামছা পরে ব্যতিক্রমীwwe ফ্যাশন-শো’র আয়োজন করেছিলেন সাংবাদিকরা। সৈকতপাড়ের দুই ভেন্যুতে আলাদা দুটি আয়োজনে জমজমাট ছিল সেটি। মুখরোচক ডজনাধিক অাইটেমের রসনাবিলাসী ভরপেট লাঞ্চশেষে বিকালে ফলাহারের আয়োজন ছিল। সেদিনই প্রসববেদনা উঠেছিল আজকের মৌসূমী ফল উৎসবের। তখন থেকে বিভিন্নবার আলোচনাপর্ব, প্রস্তুতিপর্ব, কেনাকাটাপর্ব ও কাটাকুটিপর্বশেষে এখন ভক্ষনপর্ব সমাগত। মধুমাস জৈষ্ঠ্যে হরেকরকম মৌসূমী ফলের সামারোহে ভরে উঠে চারপাশ। আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের পথ ধরে বাংলাদেশীরা (বাঙ্গালী নয়) বাসতভিটার বিভিন্ন ফলজ গাছের মৌসূমী ফলে অপ্যায়িত করেন পাড়া-প্রতিবেশী আত্নীয়-স্বজনদের। তাই ঐতিহ্যের শিকড়সন্ধানী সাংবাদিকদের উদ্যোগে আজকের এ আয়োজন। প্রায় সবাই এসে গেছেন। এদিকে লোভনীয় বিভিন্ন ফলের ডিশ থেকে সুঘ্রান ছড়িয়ে পড়ছে, লোভ সামলানো দায়।
জিভের লালা গড়িয়ে পড়ার অবস্হা, সাজানো চেয়ারে বসে গেলেন সবাই। শুরু হলো খাওয়া। আল্লাহর নিয়ামত সবটিই বেজায় টেষ্টি, কোনটা ছেড়ে কোনটা যে খাই ? অর্ধশতাধিক ডিশ ক্রমশঃ খালি হতে লাগল।

চলছে ফলোৎসব, সে সাথে ননস্টপ হাসি-ঠাট্টা। সাংবাদিক ইউনিয়ন সেক্রেটারী হাসান ভাই আবার গাব’র কোন অংশ খাওয়া যায় তা জানেননা, আমাকে জিজ্ঞেস করলে খোসা খাওয়ার পরামর্শ দিলাম। সহজ-সরল হাসান ভাই গাবের কষযুক্ত খোসা খেতে গিয়ে অবস্হা টাইট ! (মিনিকাঠাল) বত্তাগোলা ভেঙ্গে একটুকরা খাওয়ার পর প্রবীন সাংবাদিক কামাল হোসেন আজাদের প্রতিক্রিয়া “প্রচুর খরঅ” (টক) ! সিবিএন এর সদাব্যস্ত বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইর মিষ্টি কাঠাল একটু বেশী খেয়ে (স্হানাভাবে) অন্য কয়েকটি আইটেম থেকে বঞ্চিত হলেন।

বাংলাদেশ সংবাদপত্র এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক হাশেম ভাইয়ের অান্তরিক নির্দেশনা ”এন্ডিল্যা আয়োজন ঘন ঘন গরঅ”। সিনিয়র সাংবাদিক মমতাজ yyউদ্দীন বাহারী উপস্হিত আনম্যারেড সাংবাদিকদের “শুভষ্য শীঘ্রম” করার তাগিদ দিলেন। বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক এম আর মাহবুবের বাগান থেকে সরবরাহ করা কাঠালের ব্যপারে ভাবী সাহেবার সদয় সম্মতি ছিল কিনা, এ নিয়েও একপ্রস্হ আলোচনা চলল।

একদিনে এতগুলো ফল খেয়ে ফেললে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে কিনা এ ব্যপারে gbhhgপরিবেশ সচেতন সাংবাদিক ইব্রাহীম খলিল মামুনের মতামত চাইলেন অনেকে। সিনিয়র সাংবাদিক আনছার হোসেন’র বক্তব্যের পর আসন্ন ঈদে প্রবীন সাংবাদিক নূরুল ইসলাম হেলালীর সৌজন্যে সবাইকে লুঙ্গি-পাঞ্জাবী উপহার দেয়ার ঘোষনাকে আতিকুর রহমান মানিক

স্বাগত জানালেন সবাই। দৈনিক আমাদের কক্সবাজার’র মফঃস্বল সম্পাদক আজিজ রাসেল ড্রেসিংয়ের সময়ই একটু একটু খেয়ে ওভারলোড, তাই এখন খাওয়ার তেমন দরকার নেই বলেই মনে হল। ডিএসএলআর এ ছবি তুলবে নাকি খাবে এ নিয়ে মহা-ঝামেলায় ছৈয়দ আলম। ততক্ষনে বাইরে ঘনিয়ে আসছে সন্ধ্যা, সামনের বিস্তৃত মাঠে লাইটগুলো একের পর এক জ্বলে উঠছে। সবশেষে বিভিন্ন রেফারেন্স দিaaaয়ে দিকনির্দেশনামূলক জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দিলেন বিদগ্ধ সিনিয়র সাংবাদিক জিএম আশেক উল্লাহ। এভাবে হাসি-ঠাট্টা, আড্ডা, পারস্পরিক ভাববিনিময় ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির মাধ্যমে শেষ হল ব্যতিক্রমী ফল উৎসব।

ব্যস্ততার জীবনে মাঝে-মধ্যে একটু অবসর, সামান্য বিনোদন যেন রিচার্জের মতই কাজ করে। তাই আবারো আমরা মিলিত হব অন্যকোন দিনে, ভিন্ন উপলক্ষে, মেতে উঠব অনাবিল আনন্দে।


শেয়ার করুন