ক্রিকেটে বাংলাদেশের কেমন বন্ধু ভারত?

সিটিএন ডেস্ক:

rr_109247সদ্য শেষ হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপ কভার করতে গিয়েছিলেন একঝাক বাংলাদেশি সাংবাদিক, যাদের অত্যন্ত তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যতে কোন টুর্নামেন্ট কাভার করতে ভারতে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে।

সবচেয়ে বেশি ঝামালে পোহাতে হয়েছে মুম্বাইয়ে। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের হোটেল থেকে হোটেলে হন্নে হয়ে ঘুরতে হয়েছে সিটের জন্য।‘ ও, বাংলাদেশ থেকে এসেছেন? কিন্তু বাংলাদেশি পাসপোর্ট যে গ্রহণযোগ্য নয়’। অথবা ‘উপরের নির্দেশ রয়েছে বাংলাদেশিদের সিট না দেওয়ার জন্য’-এসব বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের।অনেক কষ্ট করে শেষমেষ সিট ম্যানেজ করা গেছে বটে, কিন্তু সেটা মুসলিম এরিয়ার মুসলিম মালিকাধীন হোটেলে!

‘সীমিত সংখ্যক আসন’ এই অজুহাত দেখিয়ে ইডেন ফাইনালে ম্যাচ টিকেট দেওয়া হয়নি বাংলাদেশি সাংবাদিকদের। পরে তদ্বীর করে দুই চারজন প্রেস বক্সে ঢুকতে পারলেও, তাদের বসতে হয়েছে টেবিল ছাড়া আসনে!

সুপার টেন পর্বে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। চিরশত্রুতার ঐতিহ্য রক্ষা করে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ দলকেই সবসময় সমর্থন করে থাকে ভারতীয়রা।মনে করা হয়েছিল, পাকিস্তান ম্যাচে গ্যালারি গলা ফাঁটাবে টাইগারদের জন্য। কিন্তু হলো তার ঠিক উল্টো। বাঙালিত্বের বন্ধন উপক্ষো করে গ্যালারির ৯০ ভাগ সমর্থন গেল পাকিস্তানের পক্ষে! আফ্রিদি, ওয়াকার, আমিররা বিস্মিত। তারা বলেই ফেললেন, ‘মনে হয়েছে ম্যাচটা আমরা গাদ্দাফি স্টেডিয়ামেই খেলেছি।’

টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ওমানের বিপক্ষে না জিতলেই নয় বাংলাদেশের। ম্যাচের দিন সকালে ভারতীয় তারকা অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন বির্তকিত এক টুইট করে বসলেন, যেটা আহত করলো বাংলাদেশি সমর্থকদের,‘ ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতলে একটা দেশ খুশি হবে। আর ওমান জিতলে আনন্দে ভাসবে পুরো ক্রিকেট দুনিয়া।’ আসলেই কি তাই? ওমান জিতলে পুরো ক্রিকেট দুনিয়া আনন্দে ভাসবে কোন যুক্তিতে?

সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ভারত হেরে যাওয়ার পর নিচের টুইট দুটি নিয়ে পুরো ভারতীয় মিডিয়া মুশফিকের মণ্ডুপাত করেছিল ( ‘এটাই হল সুখ…!!! হাহাহা…!!! ভারত সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছে।’এটাই হল সুখ… এখন অনেক ভাল ভাবে ঘুমোতে পারব। উ’ইন্ডিজ দুর্দান্ত’!!!)। মুশফিকের এই টুইট নিয়ে বিসিবি কর্মকর্তাদের উপর প্রেসার ক্রিয়েটও করেছিল তারা। বিসিবি থেকে মুশফিককে ধমক দেওয়া হয়েছিল।ফলে দ্রুত টুইট তুলে নিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন মুশফিক।

বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ভারতীয় মিডিয়ায় বলেছিলেন,‘ মুশফিক ক্রিকেটের স্পিরিটের ক্ষতি করেছেন। বিসিবি সভপতি নাজমুল হাসান পাপনও মুশফিকদের হুশিয়ার করে দেন এ ব্যাপারে। কথা হলো, মুশফিক ক্রিকেটের স্পিরিট নষ্ট করলে অশ্বিন- রায়নারা কি করেছেন? তাদের দেওয়া টুইট প্রত্যাহার করতে বলবে কে? বাংলাদেশের মিডিয়া তো তো অশ্বিনের টুইট নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যায়নি।

দিন ক’য়েক আগে ভারতীয় বোর্ডের ধারাভাষ্যকারের চাকরি হারাতে হয়েছে হার্শা ভোগলকে।টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত- বাংলাদেশ ম্যাচে তিনি নাকি নিজেদের খেলোয়াড়দের চেয়ে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের বেশি প্রশংসা করেছিলেন। অন্য অনেক ভারতীয়’র মতো ব্যাপারটা ভাল লাগেনি বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের। তিনি এ নিয়ে একটা টুইট করেছিলেন।যেটা ধোনিরাও প্রচণ্ডভাবে সমর্থন করেছিলেন। ফলে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ দিনের চাকরিটাই চলে যায় ভোগলের।

আইপিএলের মতো বাংলাদেশের ঘরোয়া টি-২০ লিগ- বিপিএলও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু বিপিএলের উপর কেন যেন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করে আসছে ভারতীয় বোর্ড। বিশ্বের সব দেশের খেলোয়াড়রা এখানে খেললেও, ব্যতিক্রম কেবল ভারতীয় ক্রিকেটাররা। তাদের এখানে খেলার অনুমতি দেয় না ভারতীয় বোর্ড। এমনকি ভারতীয় ধারাভাষ্যকাররা বিপিএলে কাজ করুক, সেটাও চায় না বিসিসিআই। অথচ নিজেদের ঘরোয়া লিগ উপেক্ষা করে আইপিএল খেলতে গেছেন সাকিব- মুশফিকরা। বিসিবি তাদের চোখ বন্ধ করে ছাগপত্র দিয়ে দিয়েছে!

ভারত হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি রাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গেই তো সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার জন্য ভারতে যেতে পারেনি বাংলাদেশ দল। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো অভিজাত রাষ্ট্র বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানালেও বছরের পর বছর চেষ্টা করেও ভারতের মাটিতে খেলার অনুমতি মিলছে না।

অনেক দেন দরবারের পর আগস্টে ভারত যাওয়ার একটা মৌখিক আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল।টি-২০ বিশ্বকাপ চলার সময় সিডিউল চূড়ান্ত হওয়ার কথা থাকলেও, তা হয়নি। কবে নাগাদ হবে তারও কোন নিশ্চয়তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, ভারত নাকি মাত্র একটা টেস্ট খেলতে চায়। বিসিবি এরসঙ্গে ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচও যোগ করতে চাইছে। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের সম্মতি মিলছে না।

আগস্টে কেন অদূর ভবিষ্যতে টাইগাররা ভারত সফরে যেতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিসিবির একজন সাবেক পরিচালক(প্রকাশ না শর্তে )। তার মতে, দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্কটা অনেকটাই একতরফা।


শেয়ার করুন