কোরআনে পরমাণু বোমা প্রতিরোধের উপায় আছে?

আহমদ গিয়াসঃ
অবশ্যই আছে: প্রমাণ ভূ-রাসায়নিক সূত্রে, আছে কোরআনেও!
পরামাণু বোমা প্রতিরোধের উপায় আছে? এমন প্রশ্ন শুনলে প্রায় সকলেই সাথে সাথে উত্তর দেবেন- অসম্ভব। অনেকেই হয়ত: আগ বাড়িয়ে বলবেন, আমেরিকার মত শক্তি যেখানে ইরানের মত দেশের ব্যালাস্টিক মিসাইল থামাতে পারে না; সেখানে পরমাণু বোমা প্রতিরোধ? কল্পনার বাইরে! কিন্তু আমি আজকে আপনাদেরকে ভূ-রাসায়নিক সূত্র এবং পবিত্র কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যার মাধ্যমে সেই সম্ভাবনার কথাই শুনাতে চাই।

প্রসঙ্গত, পাবনার রূপপুরে ২৫৪ একর জমির উপর দেশের প্রথম ও একমাত্র পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১২শ মেগাওয়াট করে মোট ২৪শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ইউনিট রয়েছে। এগুলো ২০২৩ ও ২০২৪ সালে উৎপাদনে যাবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ২৯ মে এক সভায় দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ কোন দ্বীপে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে দেশে প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই চালু হয়েছে নিউক্লিয়ার সাইন্স বা পরমাণুবিদ্যার উপর পড়ালেখার সুযোগ। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রথম ব্যাচের ক্লাশ শুরু হয়। এখান থেকে কোর্স সম্পন্নকারী গ্র্যাজুয়েটদের রূপপুরের পারমানিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়োগ দেয়া হবে।
আপনারা সকলেই জানেন যে, পারিমানিক চুল্লীর জ্বালানী হল ইউরেনিয়াম। আবার ইউরেনিয়ামের বাই প্রোডাক্ট প্লুটোনিয়াম থেকে পারমানবিক বোমা তৈরি করা যায়। আর একেকটি পারমানবিক বোমার ধ্বংস ক্ষমতা অনেক-বিশাল। প্রায় একই উপাদান দিয়ে আরো ধ্বংসাত্মক বোমা তৈরি করা যায়, যার নাম হাইড্রোজেন বোমা। আমরা দেখছি, দিন দিন অপ্রতিরোধ্য ধ্বংসাত্মক অস্ত্রই তৈরি হচ্ছে; তাকে অকার্যকর বা নিস্ক্রীয় করার কোন কৌশল তৈরি হচ্ছে না। অথচ পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে যে, লা জিন লা কাজাদিখ লাখ- অর্থাৎ আল্লাহ একটি ফোর্স, দল, বল বা শক্তির উপর আরেকটি শক্তির ভারসাম্য তৈরি করেন। তাহলে নিউক্লিয়ার ফোর্সের ভারসাম্য তৈরিকারী এন্টি ফোর্স কি?

আমরা জানি যে, আমাদের দেশের সমুদ্র সৈকত ও নদীতীরের খনিজ বালিতে থাকা মোনাজাইটে পাওয়া যায় পরমাণু চুল্লী বা বোমার জ্বালানী ইউরেনিয়াম। ইউরেনিয়ামের জ্বালানী শক্তি কয়লা বা তেলের তুলনায় ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ গুণ বেশি। এ কারণে ধ্বংসাত্মক শক্তিও ভয়াবহ। কিন্তু এই ভয়াবহ শক্তির কাছাকাছি বা একটু উপরের শক্তি দিয়ে কীভাবে আল্লাহ এই শক্তির ভারসাম্য তৈরি করেছেন?
আমরা ওই ইউরেনিয়ামের আকর মোনাজাইটে থাকা অন্যান্য সিরিজের দিকে একটু খেয়াল করি, আল্লাহ কীভাবে ব্যালেন্স করেন।
আমরা জানি যে, সাধারণত: মোনাজাইটের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে থাকে ল্যান্থানাইড সিরিজ; যে সিরিজে রয়েছে ১৫টি পৃথিবীর বিরল খনিজ পদার্থ। এই বিরল খনিজ পদার্থগুলোর চরিত্র বিশ্লেষন করলেই জানা যাবে কয়েকটি পদার্থের কথা, যেগুলো পরমাণু চুল্লীর দূর্ঘটনা রোধে ব্যবহৃত হয়। যেমন গ্যাডোলিনিয়াম ধাতু লবণ হিসাবে নিউট্রন শোষণ করে বলে পারমাণবিক চুল্লিগুলোকে রক্ষা করার জন্য এটি নিউট্রন রেডিওগ্রাফি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ডিসপ্রোসিয়াম উচ্চ তাপীয় নিউট্রন শোষণ ক্রস-বিভাগের জন্য পারমাণবিক চুল্লিগুলিতে নিয়ন্ত্রণ রড তৈরির কাজে, ডেটা স্টোরেজ অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে উচ্চ চৌম্বকীয় সংবেদনশীলতার জন্য এবং টেরেফেনল-ডি (একটি চৌম্বকীয় উপাদান) এর উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের মত ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়তা শোষনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য রক্ষা করে স্যামারিয়াম। স্যামারিয়াম-১৫৩ ক্যান্সার চিকিৎসায় এবং স্যামারিয়াম-১৪৯ নিউট্রন শোষক হিসাবে পারমানবিক চুল্লী নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কোন পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা নির্ণয়েও ব্যবহৃত হয় পদার্থটি।
বিশ্বব্যাপী পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে। আর তাই বিশ্বের উন্নত জাতিগুলো নিউক্লিয়ার সিকিউরিটি ও সেফগার্ডের জন্য কার্যকর কৌশলের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদেরকেও সেপথে যেতে হবে। আমরা এ ক্ষেত্রে নিউট্রন শোষক পদার্থগুলোকে যেমন কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারি, একইভাবে উচ্চ বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় শক্তিকে। সম্ভাব্য যত কৌশল আছে, তা নিয়ে আমাদের গবেষণা চালাতে হবে। কারণ আল্লাহ কখনও মিথ্যা বলেন না। তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান যিনি আল্লাহর কথা বিশ্বাস করে এবং সে অনুযায়ী কর্মপন্থা-গবেষণা নির্ধারণ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে দেশের ৫৫০ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে চালানো ভূ-তাত্ত্বিক জরীপে পাওয়া ১৭টি বালির স্তুপে মোনাজাইট এর মজুদ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৩৫২ মেট্রিক টন। আর মোনাজাইটের প্রায় ১৬% অংশ ইউরেনিয়াম এবং প্রায় ৫০% ভাগ অংশ বিরল খনিজ পদার্থ পরিপূর্ণ।
এছাড়া ২০১৬ সালে ব্রহ্ম্পুত্র নদসহ দেশের নদীতীরে থাকা খনিজ বালিতে জরীপ চালিয়েও সেখানে মোনাজাইটের অস্তিত্ব পায় বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরীপ অধিদপ্তর।

আহমদ গিয়াস
সাংবাদিক, কক্সবাজার।


শেয়ার করুন