কী কথা হলো দেশের প্রধান তিন ব্যক্তির!

53সিটিএন ডেস্ক:
বঙ্গভবনে বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রধান তিন ব্যক্তির বিশেষ বৈঠক। নৈশ্যভোজ হলেও সেখানে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। এরমধ্যে দেশের বর্তমান অবস্থা, অবসরের পর বিচারপতিদের রায় লেখা, নতুন আইন করা ও বিভিন্ন আইনের সংশোধনী এবং রাষ্ট্রপতির লেখা বই ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। বৈঠকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এই তিনজনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দেশের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এবং প্রধান আইন কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রের এই পাঁচজনের ওই বৈঠকের ব্যাপারে কৌতুহল তৈরি হয়েছে নানা মহলে। কী কথা হলো তাদের। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, অ্যাটর্নী জেনারেল এ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমকে দাওয়াত করে খাওয়াতে চেয়েছিলেন বুধবার।
কিন্তু ওই দিন দাওয়াতে আইনমন্ত্রীর থাকা সম্ভব ছিল না। এই কারণে রাষ্ট্রপতি দাওয়াতের দিন পরিবর্তন করেন এবং সেটা বৃহস্পতিবার রাতে নির্ধারণ করেন। গত ছয় বছরে এই ধরনের দাওয়াত এবারই প্রথম। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তম্ভের কারো মধ্যে যাতে কোনো ধরনের বিরোধ না থাকে, বিতর্ক তৈরি না হয় সেই বিষয়টি ঐ বৈঠকে ও নৈশভোজে ইঙ্গিতে বোঝানো হয়। সরকারের কেউ কোন কথা বললে সেটা নিয়ে সরকারের কেউ যাতে সেটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি না করেন কিংবা কারো কথায় যাতে একই অঙ্গণের মানুষের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দেয়, সেটা নিয়ে কোন বিতর্ক তৈরি না করারও আভাস দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই বৈঠক ছিল বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নানা বিষয়ে কথা বলেন। কুশল বিনিময়ের পর আলোচনা শুরু হয় দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর ও সরকারের অগ্রযাত্রাকে রাষ্ট্রপতি প্রশংসা করেন। আগামী দিনে আরো কী কী উন্নয়ন হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকেও অবহিত করেন। রাষ্ট্রপতি এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাজের প্রশংসা করেন।
এরমধ্যে আলোচনায় উঠে আসে মানবতাবিরোধি অপরাধের বিচারের বিষয়টিও। সেখানে আগামী দিনে মানবতাবিরোধি অপরাধে সংগঠনের বিচার করার জন্য আগামী মাসে সংসদে এই সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করা হবে সেটা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়। জানানো হয়, এখন আইনে সুযোগ থাকলেও তা পূর্ণাঙ্গ নয়। চাইলে করা যায়। তবে সংশোধন করাটাই ঠিক হবে। এই আইন সংশোধন হলে জামায়াতের বিচার করার সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি এই বিচার কাজ চালিয়ে নেওয়া ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে আগামী দিনে সরকারের সতর্কমূলক ব্যবস্থা কী কী গ্রহণ করা হতে পারে সেটা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে দেশে যাতে কোন ধরনের নাশকতার ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়টিও সতর্ক ভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে বলে রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়।
সরকার নিজে জামায়াত নিষিদ্ধ করতে চায় না। সরকার চায় আইনের মাধ্যমে জামায়াত নিষিদ্ধ হোক। এই ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত নিলে যথার্থ হবে বলে সরকার মনে করে।
এক পর্যায়ে আলোচনায় আসে বিচারপতিদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও বিচারপতিদের অবসরে গিয়ে রায় লেখার বিষয়টি। আগামী দিনে বিচারপতিগণ আর যাতে অবসরের পর রায় লিখতে না পারেন সেই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি তার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। সেই হিসাবে রাষ্ট্রপতিও মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করণ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা করেন। এই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি নানা যুক্তি দেন।
তার সঙ্গে আইনমন্ত্রী ও এ্যাটর্নী জেনারেলও এক মত হন। এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সূত্র জানায়, এই বিষয়টি প্রধান বিচারপতি দেখবেন। কারণ তিনি যদি এটা করতে চান যে বিচারপতিরা রায় অবসরে যাওয়ার আগেই লিখে শেষ করে যাবেন তাহলে সেটা করতে পারেন। প্রধান বিচারপতিকে সার্বিক বিষয় দেখেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
এক পর্যায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া রায় ও এর পরে নির্বাচন করা, এই বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এটা নিয়ে আগামী দিনে কোন জটিলতা তৈরি হবে কিনা এই বিষয়টিও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও প্রধান আইন কমকর্তার কাছ থেকে জানতে চান। তারা তিনজনই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চিত করেছেন। বিএনপি কেন যে কেউ যদি এই ব্যাপারে কোন আইনী ব্যবস্থা নেন এতে করে কোন ধরনের জটিলতা তৈরি হবে না। এবং বিচারপতি খায়রুল হকের রায় বাতিল হবে না। সংবিধানে আগামী দিনে কোন সংশোধনীর প্রয়োজন হবে কিনা সেটাও নিয়েও আলোচনা হয়।
সূত্র জানায়, সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি ও এ নিয়ে যারা বিতর্ক তৈরি করে পাশাপাশি এই ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন তুললে তাদের ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলেও আলোচনা করা হয়। এই সংক্রান্ত আইনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বও আলোচনায় আসে। এরপর সেই বিষয়ে আইন করার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, দেশের সাম্প্রতিক অন্যান্য বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে সংসদ, বিএনপি, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রসঙ্গও এসেছে।
সরকারের উপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ রয়েছে। সরকারের এখনও পর্যন্ত আগাম নির্বাচনের কোন পরিকল্পনা নেই। ওই ধরনের নির্বাচনের কোন পরিকল্পনা করলে এই ব্যাপারে সরকারের আগামী দিনে করণীয়ও নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র আরো জানায়, বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পাশপাশি রাষ্ট্রের জন্য আগামী দিনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। সেই হিসাবে তারা আগামী দিনে আবারও বৈঠকে বসবেন। এই রকম আরো দাওয়াত রাষ্ট্রপতি দিবেন।
ওই বৈঠকের আলোচনা বিষয়ে যোগদানকারীরা অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন। সূত্র জানায়, আরো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে উচ্চ পর্যায়ে এই ধরনের একটি বৈঠকের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে চাননি।
বৈঠকের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির আতœজীবনীমূলক বইটির প্রসঙ্গে আসে। তার বইয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেন। তিনি তাকে আগামী দিনেও তার লেখা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি অতিথিদের অ্যাপায়ন করেন পোলাও, সাদা ভাত, ভেটকি মাছ, পাবদা মাছ, মুরগীর রোস্ট, খাসীর মাংস, দই মিষ্টিসহ আরো অনেক আইটেম দিয়ে।


শেয়ার করুন