কাউন্সিলর পদে বিএনপিকে ছাড় দেবে না জামায়াত

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০ দলের ব্যানারে সক্রিয় জামায়াতে ইসলামী। কৌশলগত কারণে মেয়র পদে জোটের প্রধান দল বিএনপিকে ছাড় দিলেও কাউন্সিলর পদে তারা কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ। একই কৌশলে গত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে বিতর্কিত দলটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনটি সিটি করপোরেশনেই নিজেদের আদর্শের কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে জোরালোভাবে মাঠে নেমেছে জামায়াত। এজন্য প্রত্যেক মহানগরী অঞ্চল, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে। যদিও প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাতে না পারছে না।

জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বাংলামেইলকে জানান, গত ১৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই জামায়াতের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তিন সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী দেবে তারা। এর পরপরই ঢাকা ও চট্টগ্রামের মহানগর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকেই মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এমন সিদ্ধান্তের পর মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করে দলটি। এই পর্যায়ে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় মেয়র পদে প্রার্থী দেয়া থেকে বিরত হয় জামায়াত। তবে এককভাবে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি বহাল থাকে।

এরপরই ঢাকা ও চট্টগ্রামের জামায়াত অধ্যুষিত ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৯৬টি ওয়ার্ড। এরমধ্যে দক্ষিণে ৫৬টি এবং উত্তরে ৩৬টি ওয়ার্ডকে তারা টার্গেট করেছে। প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিয়েছে তারা। এক্ষেত্রে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর, উত্তরা, মতিঝিল, মালিবাগ, সবুজবাগ, যাত্রবাড়ী এলাকার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভালো অবস্থানে রয়েছেন তাদের ধারণা। চট্টগ্রামে ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। অন্যগুলোতে সমঝোতা হয়েছে।

জামায়াতের সিদ্ধান্ত, এসব এলাকায় বিএনপি প্রার্থী দিলেও কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া অনেক ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। সেদিক থেকে জামায়াত শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওই এলাকাগুলোতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের ভালো অবস্থান রয়েছে। আর বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের কোনো কর্মী সক্রিয় নাই। এক্ষেত্রে জামায়াত অনেক এগিয়ে আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং দাখিলের দিন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে স্বশরীরে নির্বাচন কমিশনে যাননি। আর জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলর পদ প্রার্থীরা আতঙ্কের মধ্যেও নিজে গিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।’

দলটির ঢাকা মহানগরের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজপথের আন্দোলন জোরদার করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতন ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে কয়েক হাজার নেতাকর্মী। নিহত হয়েছেন শতাধিক জামায়াত-শিবির কর্মী। আর ৩০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী কারাগারে আটক আছে। তারপরও আমরা এখনও সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় রয়েছি, যা বিএনপিতে নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আত্মগোপনে থেকেও জামায়াতের কেন্দ্রীয়, মহানগর এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের বর্তমান শীর্ষ নেতারা দলীয় বিষয়ে অতি গোপনে বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করছেন। সকল সাংগঠনিক বিষয়ে কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তিন সিটি নির্বাচন ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই নেতাদের এক সাথে বসা হচ্ছে এবং স্বাভাবিক নিয়মেই সব সিদ্ধান্তও নেয়া হচ্ছে। তবে দেশের পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক ডাকা হচ্ছে না, ব্যতিক্রম শুধু এটুকুই।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর পদে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে দলীয় কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন না, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন লোকজন বেছে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাব আছে এমন সমর্থক পর্যায়ের মানুষকে কাউন্সিলর পদে অগ্রাধিকার দিচ্ছে জামায়াত। এরা প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় এবং দলের কোনো পদপদবিধারী না হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। দু’এক জনের বিরুদ্ধে থাকলেও জামিনে মুক্ত আছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের পক্ষে কেন্দ্রীয়, মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রচার ও তথ্য বিভাগসহ ৮টি করে টিম গঠন করেছে শিবির। প্রত্যেকটি টিমে তিনজন করে সদস্য (শিবিরের সর্বোচ্চ ক্যাডার) রয়েছে। আর এই টিমগুলোর নেতৃত্বে একাধিক সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে যারা রয়েছেন, যে এলাকায় যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াতের কেন্দ্রীয়, মহানগরীর শাখাও একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি টিম আলাদা আলাদাভাবে এ নির্বাচনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’

বর্তমান ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘তিন সিটি নির্বাচনে আমাদের কাউন্সিলরদের কীভাবে বিজয় নিশ্চিত করা যায়, সেই বিষয়ে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। জনগণ আমাদের সাথে আছে। প্রত্যেকদিন আমাদের টিমগুলো মাঠে কাজ করছে। আল্লাহর রহমাতে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের কাউন্সিলররা বিজয়ী হবে।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছে।’


শেয়ার করুন