কক্সবাজার শহরে কর্মচারিদের নির্যাতনে বন্দিশালা, থানায় এজাহার

নিউজ ডেস্ক :

কক্সবাজার শহরে পর্যটন জোনের কলাতলী এলাকায় অবস্থিত শালিক রেস্টুরেন্টের মালিকের বিরুদ্ধে নারী কর্মচারীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। আর কেউ প্রতিবাদ করলে অন্যান্য কর্মচারিদের চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। যার জন্য তৈরি করা হয়েছে স্টাফ কোয়ার্টার নামের একটি বন্দিশালাও। যেখানে ২৪ ঘন্টায় নিরাপত্তা নিয়োজিত থাকে মালিকের দেয়া অস্ত্রধারী কয়েকজন যুবক।

বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় পৃথকভাবে দায়ের করা ২ টি মামলার এজাহার ও ঘটনায় শিকার ভূক্তভোগীদের সাথে আলাপকালে এমন তথ্য মিলেছে।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান জানান, শালিক রেস্টুরেন্টের ঘটনায় ২ টি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। দুইটি এজাহারই একই ঘটনার। ভূক্তভোগী একজন নারী ও একজন পুরুষ কর্মচারি পৃথকভাবে এজাহার দু’টি দায়ের করেছেন। একই ঘটনায় পৃথক দু’টি এজাহার দায়ের হওয়ায় নারী কর্মচারির এজাহার নথিভূক্ত করে পুলিশ তদন্তকাজ অব্যাহত রেখেছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

থানায় দায়ের হওয়া এজাহারের পৃথক ২ টি কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। একই সঙ্গে ঘটনায় শিকার ভূক্তভোগী ও এজাহারের উল্লেখিত সাক্ষিদের কয়েকজনের সাথে আলাপও হয়েছে প্রতিবেদকের সঙ্গে।

প্রাপ্ত তথ্যে উঠে এসেছে, কলাতলীতে বহুল পরিচিত এবং আলোচিত-সমালোচিত শালিক রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসেবে ২১ জন নারীকে নানাভাবে নিয়োগ দিয়েছে মালিক নাছির উদ্দিন বাচ্চু। যেখানে ১৬ জন রয়েছে উপজাতি সম্প্রদায়ের। এসব কর্মচারিদের নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয়েছে স্টাফ কোয়ার্টারের রাত্রিযাপন বাধ্যতামূলক। আর ওই স্টাফ কোয়ার্টার ঘিরে রয়েছে সশস্ত্র পাহারাদার। ওই স্টাফ কোয়ার্টারকে নির্যাতনের বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার করেন শালিকের মালিক। যেখানে প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে বাচ্চু।

কক্সবাজার সদর থানায় দায়ের করার ২ টি এজাহারের মধ্যে একটির বাদি উপজাতি সম্প্রদায়ের তরুণী। যার বাড়ি কক্সবাজারের পাশ্ববর্তী বান্দরবান জেলার একটি উপজেলায়। ওই নারী গত ৬ মাস ধরে ওই রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। যেখানে তিনি প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

কক্সবাজার সদর থানা প্রাঙ্গনে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওই নারী।

তিনি জানিয়েছেন, ১১ অক্টোবর ও ১২ অক্টোবর টানা নির্যাতনে শিকার হওয়ার পর জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর তিনি উদ্ধার হয়েছেন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশের পরামর্শক্রমে লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন।

লিখিত এজাহারটিতে উপজাতি ওই তরুনী বলেছেন, অসুস্থতা জনিত কারণে তিনি ছুটি নিয়ে স্টাফ কোয়ের্টারে চলে যান। পরে সেখান থেকে ঔষুধের জন্য বের হলে পথে রেস্টুরেন্টের কর্মচারি খালেক ও আবদুল্লাহর সাথে দেখা হয়। ওই ২ জনকে তার অসুস্থতার বিষয়টি জানালে তারা ২ জন গিয়ে একটি ফার্মেসি গিয়ে ঔষুধ ক্রয় করেন। এর মধ্যে মালিক বাচ্চু তাদের ফোন করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। যাওয়ার পর পরই শুরু হয় মারধর। মারধর করতে করতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় স্টাফ কোয়ার্টারে। সেখানেও তাদের উপর চালানো হয় নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাদের উপর যৌন নিপীড়ন চালায় বাচ্চু। পরে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান কর্মচারি আবদুল্লাহ। সশস্ত্র পাহারার কারণে তিনি ( নারী কর্মচারি) ও খালেক পালাতে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশের সহায়তা তারা সেখান থেকে উদ্ধার হন।

খালেক উদ্ধারের পর চকরিয়ায় পালিয়ে গিয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার রাতে তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আবদুল্লাহও একই হাসপাতালে চিকিৎসাধিন। প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয়েছে দুইজনের সাথেও।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার জন্য অভিযুক্ত শালিক রেস্টুরেন্টের মালিক নাছির উদ্দিনের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।


শেয়ার করুন