কক্সবাজার রুটে ১৮ মে থেকে বোয়িং বিমান চলবে

biman-bangladesh-airlines_34352_1482235498-400x225ডেস্ক নিউজ :

শেষ হওয়ার পথে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নয়ন করার প্রথম দফার কাজ। ইতিমধ্যে রানওয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গতসপ্তাহে বোয়িং কোম্পানির সুপরিসর উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৩৭-৮০০ নতুন এ বিমানটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বোয়িং বিমানে চড়ে কক্সবাজার যান। এর মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে বোয়িং ওঠানামা শুরু হয়। কক্সবাজার বিমানবন্দরের ইতিহাসে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের কোনো সুপরিসর উড়োজাহাজের অবতরণ।
এরই মধ্যে কক্সবাজার রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বোয়িং-৭৩৭-৮০০ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য নতুন সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ভ্রমণ পিপাসুদের অবকাশযাপনে সুবিধা বিবেচনায় এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে আগামী ১৮ মে বৃহস্পতিবার থেকে। গ্রীষ্মকালীন সময়সূচির আওতায় প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বিমানের বিজি-৪৩৩ ফ্লাইট। কক্সবাজারে পৌঁছবে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে। অপরদিকে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে বিজি-৪৩৪ ছেড়ে আসবে শনিবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে এবং ঢাকায় এসে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬ টা ৩৫ মিনিটে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, যারা সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন কক্সবাজারে কাটাতে চান তাদের কাছে বিমানের এই সময়সূচি হবে খুবই আকর্ষণীয়।
তিনি বলেন, পর্যটন শিল্প বিকাশে বর্তমান সরকার কক্সবাজারকে নিয়ে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেটিকে আরো সার্থক ও গতিশীল করতে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বিমান বোয়িং-৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ পরিচালনা শুরু করেছে। উক্ত রুটে বর্তমানে সপ্তাহে ৪টি ফ্লাইট আসা যাওয়া করলেও পরে ফ্লাইট সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। এই রুটে বিজনেস ক্লাসের ভাড়া সর্বনি¤œ ৯ হাজার ও ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া ৪ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
জানা যায়, কক্সবাজারকে ঘিরে সরকারের ২৫ মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের অন্যতম হচ্ছে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প। কক্সবাজারকে পর্যটনের লীলাভূমি বানাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করবে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার বিমানবন্দরে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুট করা হয়েছে এবং রানওয়ের প্রস্থ ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুট করা হয়েছে। কেবল ৪৯ আসনের জেট এয়ারক্রাফ্ট এমব্রয়ার-১৪৫ বা ৬৮ আসনের এটিআর ৭২-৫০০ কিংবা ৭৬ আসনের ড্যাস-৮, ১৬২ আসনের বোয়িং-৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ওঠা-নামা করতে শুরু করেছে এই বিমানবন্দর দিয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের উন্নয়নের আরো একটি মাইল ফলক কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা। এতে করে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক মানের সুপরিসর বিমান চলাচল করতে পারবে। বিদেশি পর্যটকরা সরাসরি পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসা যাওয়া করতে পারবেন। পর্যটন খাতে আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করায় দেশের পর্যটন শিল্পের আরো বিকাশ ঘটবে। তিনি বলেন, এ বছরের শেষের দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে পুরোপুরিভাবে চালু করা সম্ভব হবে। চেয়ারম্যান বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মাণ করা হয় কক্সবাজার বিমানবন্দর। সময়ের পরিক্রমায় পর্যটন এলাকা হিসেবে দেশ বিদেশে কক্সবাজার হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি বিমান যোগাযোগের গুরুত্বও বেড়েছে। ফলে এখানকার বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সরকার তা বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতার এটি উন্নয়নের আরো একটি মাইলফলক। দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইতিহাসে আরো একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তিনি বলেন, কক্সবাজর বিমানবন্দর থেকে মাত্র দেড় ঘন্টায় চীনের বিমাবন্দরে যাওয়া সম্ভব হবে।
কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আমিনুল হাসিব বলেন, রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬৭৭৫ ফুট থেকে ৯০০০ ফুট, রানওয়ের চওড়া ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুট, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম, ফায়ার ফাইটিংয়ের যন্ত্রপাতি ক্রয়, আইএলএস এবং ডিভিওআরসহ প্রায় ৯০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরো জানান, ২০১৮ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক বিমানের ফ্লাইট অবতরণ করবে। পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করা, সমুদ্রসীমা রক্ষা, কক্সবাজারের উন্নয়নসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে সুপরিসর বিমান চলাচল নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর। বাণিজ্যিক গুরুত্বের পাশাপাশি পর্যটনের প্রসারও ঘটবে।
জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার হোসাইন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মানিক কুমার বিশ্বাস বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে প্রায় ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রধান অংশ হচ্ছে স্পার্ট। এটি গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদকাল ৩০ মাস হলেও কয়েক মাস বাকি থাকতেই কাজ শেষ করার বিষয়টি মাথায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তৎমধ্যে ৪৪০৯টি ভূমিহীন পরিবারকে বাঁকখালী নদীর পার্শ্বে খুরুস্কুলে পুনর্বাসিত করা হবে। বাঁকখালী নদীর ওপর এলজিইডি কর্তৃক নির্মিতব্য সংযোগ সড়কের জন্য ২০০ কোটি টাকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত পুনর্বাসন প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭৮ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের প্রকল্পও ইতিমধ্যে একনেকের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।


শেয়ার করুন