শিল্পীর হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা

কক্সবাজারে ২৭৬ পূজা মন্ডপে চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি

COXSBAZAR NEWS PIC 03-10-2015 (1)বলরাম দাশ অনুপম ॥ 

আর মাত্র কয়েকটা দিন। ১৯ অক্টোবরর থেকে মন্ডপে মন্ডপে বেজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার শব্দ। মন্দিরে মন্দিরে উচ্চারিত হবে চন্ডী পাঠ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় পর্যটন জেলা কক্সবাজারেও দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। এবছর জেলার মোট ২৭৬টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। ১২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দেবী পক্ষের শুরু হলেও আগামী ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু করে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ২৩ অক্টোবর প্রতিমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের। এদিকে ব্যস্ত সময় পার করছেন কক্সবাজারের মৃৎ শিল্পীরা।

কাদামাটির কাজ শেষ করে এখন প্রতিমা রং পোষাক তৈরি ও মন্ডপ সাজানোর কাজ করছেন তারা। শিল্পীর নিপুন হাতের ছোঁয়ায় দেবী দুর্গার আগমনী সুর বেজে উঠেছে। পূজা মন্ডপে দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও শিব, লহ্মী, সরস্বতী, কার্ত্তিক ও গণেশসহ অন্যান্য দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে পূজা, প্রতিমা ও সাজ সজ্জ্বার জন্য বাজেট করে পুজা কমিটির নেতৃবৃন্দরা নেমে পড়েছে প্রস্তুতিতে। শহরের বেশ কয়েকটি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি হলেও জেলার বিভিন্ন স্থানের বেশীর ভাগ প্রতিমা প্রবীন মৃৎশিল্পী নেপাল ভট্টাচার্য্য’র তত্ত্বাবধানের তৈরি হচ্ছে শহরের প্রধান সড়কস্থ স্বরসতী বাড়ি প্রাঙ্গনে।

এবার জেলায় মোট ২৭৬ মন্ডপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা-সদর উপজেলায় ৪০টি প্রতিমা ও ৩২টি ঘট, রামু উপজেলায় ১৮টি প্রতিমা ও ৯টি ঘট, চকরিয়া পৌরসভা-উপজেলায় ৪১টি প্রতিমা ও ৩৫টি ঘট, পেকুয়া উপজেলায় ১১টি প্রতিমা ও ৬টি ঘট, কুতুবদিয়া উপজেলায় ১২টি প্রতিমা ও ২৭টি ঘট, মহেশখালী উপজেলায় ১টি প্রতিমা ও ৩১টি ঘট, উখিয়া উপজেলায় ৫টি প্রতিমা ও ৮টি ঘট এবং টেকনাফ উপজেলায় ৫টি প্রতিমা পূজার মন্ডপ স্থাপিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১৬টি পূজা মন্ডপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা।

এবছর শহরের হাসপাতাল সড়কস্থ বঙ্গ পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সর্ববৃহৎ প্রতিমা। এছাড়া এই পুজা মন্ডপে সবোর্চ্চ বাজেট ধরা হয়েছে ৮ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। তাছাড়া ঘোনারপাড়া পুজা উদ্যাপন পরিষদের বাজেট ধরা হয়েছে ৭ লক্ষ আর গোলদিঘীর পাড়স্থ ইঁন্দ্রসেন দুর্গাবাড়ির এবারের বাজেট প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। শুধু বঙ্গ পাহাড়, ঘোনারপাড়া কিংবা ইঁন্দ্রসেন দুর্গাবাড়ি নয় শহরের প্রায় পুজা মন্ডপেই যে যার সুন্দর মত প্রতিমা ও সাজসজ্জ্বা করতে বাজেট নিরুপন করে কাজে নেমে পড়ছে।

বঙ্গপাহাড় পুজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি জনি ধর বলেন-এবার এই পুজা মন্ডপে অতীতের চেয়ে সর্ববৃহৎ বাজেট নিয়ে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চলছে। ইঁন্দ্রসেন দুর্গাবাড়ি দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি বাবন দাশ বলেন-এখনো পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু না হলেও প্রতিমা তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ঘোনারপাড়া পুজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত পাল বিশু বলেন-প্রতিবছর এখানকার পুজা মন্ডপে নিত্য নতুন ডিজাইন এবং সাজসজ্জ্বার মাধ্যমে পূর্ণার্থীদের নজর কাড়া হয়।

এ বছরও সেভাবে নিত্য নতুনে স্টাইলে প্রস্তুতি চলছে। এদিকে পূজায় যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এবং সুষ্ঠ, সুন্দর ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মাধ্যমে যাতে পূজা করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে অর্থ্যাৎ ১ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন-দুর্গোৎসবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। যেসকল পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে সেসকল মন্ডপে পুলিশী টহলও অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।


শেয়ার করুন