কক্সবাজারে বন্যার পানি নামতে শুরু

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে। তবে ব্যাপক ক্ষতির চিহ্ন রেখে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে জেলার সাতটি উপজেলার কমপক্ষে ৪৫টি ইউনিয়নের সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানির কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে বন্যার পানি কমতে শুরু হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিকের পথে।

আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ জানান, আরও দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৪৫ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। যেখানে ছয় হাজারের বেশি পরিবারের সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে প্রবল বর্ষণ ও পূর্ণিমার উচ্চ জোয়ার অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে উচ্চ জোয়ারের কারণে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এখন যে তথ্য রয়েছে, তাতে কুতুবদিয়ায় ৭০০ পরিবার, পেকুয়াতে ১০ হাজার পরিবার, মহেশখালীতে ৫০০ পরিবার, চকরিয়ায় ৫০ হাজার পরিবার, কক্সবাজার সদরে ১ হাজার পরিবার, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৫০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছে। তারা বোট নিয়ে পানিবন্দি মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে এবং তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছে।

জেলায় সবচেয়ে বেশি প্লাবিত এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা। এই দুই উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ ২৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় অন্তত আড়াই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের উপর দিয়ে মাতামুহুরি নদী থেকে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বসতঘরগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুকনো খাবার ছাড়া রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই গত দুইদিন ধরে।

চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামার বেড়িবাঁধটি ভেঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এসব ইউনিয়নের নিচু গ্রামগুলোতেই পানি উঠেছে বেশি।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিজ নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা পানি যাতে দ্রুত নিচের দিকে নামাতে কাজ করছেন। এছাড়াও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ্এনও) পূর্বিতা চাকমা জানান, সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন সরজমিন পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেছেন, বন্যা কবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী প্রায় দেড় লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেসব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরও বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া রামু উপজেলার চার ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। মিঠাছড়ি, খুনিয়াপালং, রশিদনগর ও জোয়ারিয়ানালা এই চার ইউনিয়নের বাঁকখালী নদী সংলগ্ন গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও, জালালাবাদ, পোকখালী, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন, কক্সবাজার সদরের পিএমখালী, খুরুশকুল, পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড, কুতুবদিয়ার ছয়টি ইউনিয়ন, মহেশখালীর তিন ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।


শেয়ার করুন