কক্সবাজারে উদ্ধার দুই তিমির লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে বিজ্ঞানীদের তিন মত!

আহমদ গিয়াসঃ

কক্সবাজারের হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতে দুই তিমির মৃতদেহ উদ্ধারের পক্ষকাল পার হলেও তাদের মৃত্যুর কারণ তদন্তে এখনও কোন নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। মৃত তিমি দুটির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য গত সপ্তাহে বন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকাস্থ ‘ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট’ কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট হতে নমুনা সংগ্রহ করলেও সেই পরীক্ষার মাধ্যমে কেবল মৃত তিমি দুটির প্রজাতিই চেনা যাবে, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যাবে না। মৃত্যুর কারণ তদন্তে প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টের প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে মৃত তিমি দুটির জাত শনাক্তে একমত হলেও লিঙ্গ শনাক্তে এখনও একমত হতে পারেননি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই) ও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বুরি) বিজ্ঞানীরা। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের ত্রিধাবিভক্ত অভিমত পাওয়া যাচ্ছে।
চলতি মাসের ৯ তারিখ হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতে সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে ৪৪ ফুট দীর্ঘ একটি তিমির মৃতদেহ ভেসে আসে। পরদিন এর এক কিলোমিটার দক্ষিণে প্রায় একই আকারের আরো একটি তিমির মৃতদেহ ভেসে আসে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) আমিন আল পারভেজের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। তবে ওই কমিটির কাজ মৃত তিমি দুটির সমাহিত করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল বলে জানান এডিসি আমিন আল পারভেজ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা মৃত তিমি দুটির নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা আমাদের রিপোর্ট দেবেন।
মৃত তিমি দুটির নমুনা সংগ্রহকারী বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী দলের প্রধান ও বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ব্রাইড’স হুয়েল জাতের তিমির সুনির্দিষ্ট প্রজাতি সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। এ জাতের তিমির মোট পাঁচটি প্রজাতি রয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে প্যাথলজিক্যাল টেস্টের যে নমুনা দরকার, সেই নমুনা আমরা সংগ্রহ করিনি। সেই দায়িত্ব বনবিভাগের।
তিনি বলেন, আমরা কেবল আমাদের গবেষণার জন্যই নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম।
একই তথ্য জানান বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, তিমি একটি সামুদ্রিক প্রাণী হলেও তা সংরক্ষণ ও তত্ত¡াবধানের দায়িত্বে রয়েছে বনবিভাগ। তবে আমরা নমুনা সংগ্রহ করলেও করোনার কারণে এখনই টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করতে পারছি না। পরে সেটা যেকোন সময়ে করা যাবে। ঁ
সামুদ্রিক প্রাণী তিমি সংরক্ষণের দায়িত্ব বনবিভাগের হলেও চলতি মাসে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসা তিমির মৃতদেহের কোন নমুনা তারা সংগ্রহ করেছে কীনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের পক্ষ হতে মৃত তিমি দুটির ডিএনএ নমুনা ‘ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের’ পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে এবং এর ২দিন পর সেই নমুনা তারা পাওয়ার কথা নিশ্চিতও করেছে বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, আমাদের পাঠানো ডিএনএ নমুনা হাতে পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ। তবে সেই রিপোর্ট তৈরি হতে কত সময় লাগতে পারে তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। হয়ত: ২/৩ মাস সময় লাগতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট’ এর পরিচালক এএসএম জহিরউদ্দিন আকন বলেন, আমরা মৃত তিমি দুটির প্রজাতি শনাক্ত করতেই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছি।
প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুল হক সোমবার বিকালে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঘটনারদিন আমি কর্মস্থলে ছিলাম না। তবে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা সংগ্রহ করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তবে সেই নমুনা এখন কোথায়, তা আমার জানা নেই।
এদিকে তিমি ২টির জাত নিয়ে কক্সবাজারের মৎস্য বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতানৈক্য কেটে গেলেও লিঙ্গ নিয়ে এখনও মতানৈক্য রয়ে গেছে। রোববার রাতে এবিষয়ে চার বিজ্ঞানীর সাথে কথা বললে তিন বিজ্ঞানীর ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা মনে করছেন হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসা তিমি দুটির প্রথমটি পুরুষ এবং দ্বিতীয়টি মহিলা, বিএফআরআই’র সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পিএইচডি ফেলো) আশরাফুল হক মনে করেন ঠিক উল্টোটি; মানে প্রথমটি মহিলা এবং দ্বিতীয়টি পুরুষ, আবার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান উভয় তিমি পুরুষ লিঙ্গের বলে মনে করেন।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের প্রধান আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, আমরা মৃত তিমি দুটির মর্ফোমেট্রিক (বাহ্যিক রূপ) পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে, তিমি দুটির প্রথমটি পুরুষ এবং দ্বিতীয়টি মহিলা।
একই দাবী করেন বিএফআরআই’র বিজ্ঞানীদ্বয়ও।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, সাগরের কয়েকটি প্রাণী সংরক্ষণের দায়িত্ব বনবিভাগের উপর বর্তালেও সাগরে এক ইঞ্চি যাওয়ার মতো সরঞ্জামও বনবিভাগের নেই। আবার সাগরের কোন প্রাণীর প্রজাতি শনাক্ত করার মত যোগ্যতাসম্পন্ন কোন বিশেষজ্ঞও বনবিভাগে নেই।


শেয়ার করুন