ওলামা লীগের সভাপতি ইলিয়াস ‘যুদ্ধাপরাধী’

888_7আরটিএনএন

ঢাকা: নিজেকে স্বাধীনতার পক্ষের বলে দাবিকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ওলামা লীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালীর বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসার পর তার তদন্ত শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ধানমিন্ডতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান সরকার। শরীয়তপুরের দুইজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তা জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হান্নান সরকার বলেন, ‘অভিযোগ ওঠার পর ইলিয়াস বিন হেলালীর বিরুদ্ধে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘তদন্ত সংস্থায় বিভিন্ন সময় অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। কখনো জেলা জজকোর্ট বা কোনো ব্যক্তি অভিযোগ দিয়ে থাকে। তার ভিত্তিতে আমরা তদন্তের জন্য মামলার (আইও) তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেই।’

আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন ওলামা লীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান হান্নান সরকার।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ওলামা লীগের দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী ও মো. দেলোয়ার হোসেন। অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী ও কাজী মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালনকালে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেখানে ইলিয়াস বিন হেলালীর সমর্থকদের সশস্ত্র হামলায় অন্য গ্রুপটির ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।

এ ঘটনার পর সশস্ত্র হামলা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বিরোধী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন ইলিয়াস হোসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মোড়লগঞ্জের ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী, বাবা মাওলানা মুনছুর আহম্মদ, বর্তমানে সে ঢাকাতে বাংলাদেশ ওলামা লীগ করেন। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি একজন সক্রিয় রাজাকার ছিলেন। তার বাবা-চাচা ১৯৭১ সালে অস্ত্রধারী রাজাকার ছিলেন। তার বড় ভাই আবু সালেহ শিকদারও অস্ত্রধারী রাজাকার ছিলেন। তাদের পরিবার ও বংশের সবাই স্বাধীনতাবিরোধী।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এই অভিযোগের সঙ্গে হোগলাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও হোগলাবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির প্রত্যয়নও সংযুক্ত করা হয়।

তবে ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী দাবি করেন, ‘আমার জন্ম ১৯৬৯ সালে। আমাকে বলা হচ্ছে রাজাকার। আমার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাগেরহাটের সংসদ সদস্য ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন ভেবেছেন, আমি হয়ত সংসদ নির্বাচন করব। এজন্য হিংসার বশবর্তী হয়ে এ ধরনের মিথ্যাচার করছেন।’

তার ভাই আবু সালেহ শিকদারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের প্রসঙ্গে ইলিয়াস বলেন, ‘তার বিষয়ও মিথ্যা। কারণ, তথন তিনি ক্লাস ফোরের ছাত্র ছিলেন। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি। এজন্য বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে এসব অপ্রচার হচ্ছে।’


শেয়ার করুন