এক হচ্ছে রবি-এয়ারটেল

2015_09_09_18_26_32_mKYBWesWr4HXGsTXeqkxtPZ99SQshH_originalসিটিএন ডেস্ক :

একীভূত হতে যাচ্ছে দেশের দুই টেলিকম অপারেটর রবি ও এয়ারটেল। এজন্য প্রতিষ্ঠান দু’টি আলোচনা শুরু করেছে। এই দুই কোম্পানি একীভূত হলে গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে দুই কোম্পানি মিলিত মার্কেট শেয়ার হবে সাড়ে ২৮ শতাংশ। যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি বাংলালিংকের (২৫.১৬ শতাংশ) চেয়ে বেশি ।

রবির মূল কোম্পানি মালেয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ। অন্যদিকে এয়ারটেলের মূল কোম্পানি ভারতী এয়ারটেল লিমিটেড। উভয় কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে বিষয়টি পর্যালোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে ভারতী এয়ারটেল তার শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ অংশের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চাইছে বলে গত কিছুদিন থেকে ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

এজন্য কোম্পানিটি ব্যাংকও নিয়োগ করেছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে তাদের চার হাজার টাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অরেঞ্জের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে ।

এয়ারটেল বাংলাদেশের আগের নাম ছিল ওযারিদ টেলিকম। বাংলাদেশ সরকারের সাথে ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার মাধ্যমে নতুন কোম্পানি হিসেবে ২০০৫ সালে ওয়ারিদে যাত্রা শুরু ।

আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালের ১০ মে থেকে। পরবর্তীতে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ৭০ শতাংশ শেয়ার গ্রহণ করে এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেড নাম ধারণ করে। একই বছরের ২০ ডিসেম্বর তা এয়ারটেল নামে সেবা প্রদান শুরু করে। ২০১৩ সালে ওয়ারিদের কাছে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারও কিনে নেয় সিঙ্গাপুরে ভারতি এয়ারটেলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতি এয়ারটেল হোল্ডিংস লিমিটেড। শুরু দিকে কিছু প্রবৃদ্ধি হলেও গত কয়েক বছর থেকে আয় ও গ্রাহক সব দিকেই প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছে না কোম্পানিটি।

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক প্রবৃদ্ধি ছিল ১০২ শতাংশ। এরপর ২০১১ সালে ৫২ শতাংশ, ২০১২ সালে ১৭ শতাংশ ও ২০১৩ সালে দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল । কিন্তু ২০১৪ সালে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ গ্রাহক কমে যায় । চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির অবস্থান একটু ভালো হয়। এ সময় গ্রাহক প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের বেশি। সর্বশেষ জুলাই মাসের তথ্য মতে, এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা ৯০ লাখ, যা মোট মোবাইল মার্কেটের প্রায় ৭ শতাংশ।

ভারতী এয়ারটেলের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এয়ারটেল বাংলাদেশ ও এয়ারটেল লংকা আয় করেছে প্রায় ৩৮০ কোটি রুপি। আগের বছরের একই সময়ে ৫০ কোটি রুপি কম।

ব্যবসায়িক মন্দার কারণে এয়ারটেল গত বছর আফ্রিকার পাঁচটি দেশে তার মোবাইল ফোনের টাওয়ার বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে জাম্বিয়া ও রুয়ান্ডাতে এক হাজার ১০০ টাওয়ার আইএইচএস হোল্ডিং লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে এয়ারটেল। একই সময় নাইজেরিয়াতে তাদের চার হাজার ৮০০ টাওয়ার ১ দশমকি ৮ বিলিয়ন ডলারে আমেরিকান টাওয়ার কোম্পানির কাছে বেচে দেয় ।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আফ্রিকার ৬টি দেশে থাকা এয়াটেলের তিন হাজার ৫০০ টাওয়ার কিনে নেয় ইয়াটন টাওয়ারস নামের একটি কোম্পানি। ওই বছরের জুলাইয়ে আফ্রিকার চার দেশের তিন হাজার ১০০ টি টাওয়ার দুই বিলিয়ন ডলারে হেলিওস টাওয়ারের কাছে বিক্রি করে এয়ারটেল।

এছাড়া আফ্রিকার বারকিনা ফাসো, চাদ, কঙ্গো ও সিয়েরালিওনের ব্যবসা বিক্রির বিষয়ে যুক্তরাজ্যর প্রতিষ্ঠান অরেঞ্জের সাথে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে।

এশিয়ার ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ এবং আফ্রিকার ১৭টি দেশে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে ভারতী এয়ারটেল। গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সেল ফোন কোম্পানি এটি । চলতি বছরের মার্চ শেষে বিশ্বব্যাপী ভারতী এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৩২ কোটি ৪৩ লাখের বেশি। ভারতে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি পাশাপাশি এম-কমার্স, ফিক্সড লাইন, ব্রডব্যান্ড, আইপিটিভি, ডিটিএইচ ও লং ডিস্ট্যান্স এন্টারপ্রাইজ সেবা দেয় কোম্পানিটি। তবে ভারতের বাইরে শুধু টুজি, থ্রিজি ও এম-কমার্স সেবা প্রদান করছে।

অন্যদিকে রবি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন কোম্পানি। যার মালিকানায় রয়েছে মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাড, (৯২%) এবং জাপানের এনটিটি ডোকোমো ইনকরপোরেটেড (৮%)।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের আগে নাম ছিল টেলিকম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল (বাংলাদেশ) । একটেল ব্র্যান্ড হিসেবে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ থেকে ‘রবি’ ব্র্যান্ড হিসেবে অভিহিত হয় । ২ কোটি ৭৯ লক্ষেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে রবির বর্তমান মার্কেট শেয়ার ২১ দশমিক ৬ শতাংশ।

বিটিআরসির হিসাব অনুসারে, জুলাই শেষে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৮৭ লাখ।


শেয়ার করুন