এক্সিটপয়েন্ট’ খুঁজছে বিএনপি!

BNP_thereport24.com

আনোয়ার চৌধুরী, আমাদের সময়.কম : 

 প্রকাশ্যে কেউই স্বীকার করছেন না। তবে অপ্রকাশ্যের বাস্তবতা হচ্ছেÑ সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে ‘আপাতত’ সরে দাঁড়াতে মর্যাদাসম্পন্ন একটি ‘এক্সিটপয়েন্ট’ খুঁজছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা নিজেদের মধ্যে অপ্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনাও শুরু করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত দলটির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমানকেও ইতোমধ্যে জ্যেষ্ঠ নেতারা তাদের ‘গুরুত্বপূর্ণ মতামত’ জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।
সূত্রগুলো এও জানিয়েছে, ৬ জানুয়ারি থেকে বিরতিহীন ৭৪ দিনের সরকারবিরোধী আন্দোলনের ‘ন্যূনতম সম্মানজনক কোনও অর্জন’ না নিয়ে অবরোধ-হরতাল থেকে না ফেরার সিদ্ধান্তে এখনও অনড়ই আছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। তবে ‘এক্সিটপয়েন্ট’ নিয়ে তারা ইতিবাচক পথেই হাঁটছেন।
সূত্রমতে, ঢাকার রাজপথে নেতাকর্মীদের দৃশ্যমান অনুপস্থিতি ও ধারাবাহিক ব্যর্থতা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের ক্লান্তি ও হামলা-মামলার ক্ষয়ক্ষতি, বিএনপির বিদেশি মিত্র ও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ‘আশ্বাস-পদক্ষেপ’ না থাকা, সরকার পক্ষের অনমনীয়তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি এবং আন্দোলন আরও দীর্ঘমেয়াদি করলে বিএনপির সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় রেখেই চলমান ‘বিরতিহীন আন্দোলনের সম্মানজনক সাময়িক এক্সিট’র পক্ষে মত দিয়েছেন দলটির প্রভাবশালী জ্যেষ্ঠ নেতারা। ২০-দলীয় জোটের নির্বাচনকালী সরকারব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকার যদি শেষপর্যন্ত সংলাপ না করার সিদ্ধান্তেই অনড় থাকে, সেক্ষেত্রে আসন্ন ৩ সিটি নির্বাচনকেই আন্দোলনের ‘এক্সিটপয়েন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষে মত রয়েছে জ্যেষ্ঠ নেতাদের। বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন বলে ওইসব জ্যেষ্ঠ নেতারা এখনও আশাবাদী।
সূত্রগুলোর দাবিÑ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ৪ জন সদস্য (এরমধ্যে একজন ঢাকার বাইরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতিতে মনোযোগী), কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিব এবং দুজন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গত দুসপ্তায় পৃথকভাবে চলমান আন্দোলন বিষয়ে তাদের মতামত দিয়েছেন খালেদা জিয়ার কাছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে এসব নেতা তাদের মনোভাবের কথা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও জানিয়েছেন। ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য তৈরি না করে শুধু তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপর চাপ দিয়ে সরকারপক্ষ থেকে কোনও অর্জন ঘরে তোলা যাবে না বলে মত দেন তারা। অবরোধ-হরতাল আরও দীর্ঘমেয়াদি হলে বিএনপির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্ভাবনার কথাও বলেছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। তবে আন্দোলন থেকে এখনই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা না দিয়ে ‘নতুন কোনও কর্মসূচি’ ঘোষণার মাধ্যমে ‘বিরতিহীন অবরোধ’ থেকে সরে এলে ইতিবাচক ফল আসতে পারে বলে মতদানকারী নেতাদের ধারণা। ওইসব নেতার মতে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই অংশসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সমর্থন দিলে দল অনেক উপকৃত হতে পারে। বিশেষ করে সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নেতারা নির্বাচনের স্বার্থেই প্রকাশ্য হতে শুরু করবেন ঢাকা ও চট্টগ্রামে। একইসঙ্গে পক্ষের নেতাকর্মীদের মাঠে চাঙা রাখতে তারা অর্থ খরচের পাশাপাশি নানা কৌশলে মাঠে থাকবেন। আর নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে বিএনপি অবস্থান সুসংহত করতে পারলে পরবর্তী ধাপে সরকারবিরোধী আন্দোলন দুই সিটিতেই চাঙা করা সহজতর হবে। ওই সময় তৃণমূল বিএনপির পূর্ণশক্তিকে কাজে লাগানো গেলে সরকারের কাছ থেকে ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই’ দাবি আদায় করা যেতেও পারে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান অবশ্য শুক্রবার রাতে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আন্দোলনের একমাত্র এক্সিটপয়েন্ট হতে পারে সংলাপ। অন্য কোনওভাবেই আন্দোলন থেকে সরে আসবে না বিএনপি। আপাতত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এমন সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারণী নেতা বলেন, ‘৩ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সমর্থনের বিষয়টি এখনও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। পরিস্থিতি ও সার্বিক দিক বিবেচনা করেই খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন। তবে সিটি নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশগ্রহণ করে, সেক্ষেত্রেও আন্দোলনের অর্জন ঘরে না পৌঁছা পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না।’


শেয়ার করুন