এই ম্যাচ তো মাশরাফিরই ম্যাচ

মাশরাফি, মাশরাফি’
বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ দিকে শুরু হওয়া সে স্লোগান ফিল্ডিংয়ের সময়ও থামল না। থামার সুযোগ দিলেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাটিং, বোলিং ও অধিনায়কত্ব—সবকিছু দিয়েই তো আজ বাংলাদেশকে জেতালেন তিনি। আবারও ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক’ রূপে দেখা দিলেন অধিনায়ক।
পুঁজি মাত্র ২৩৮। পরিবর্তিত এই ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে এই রান নিয়ে লড়াই করার কথা ভাবাটাও অনেক সাহসের ব্যাপার। সে জন্যই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন মাশরাফি। শুরুটা করলেন জেমস ভিন্সকে ফিরিয়ে দিয়ে। একটু পরে ফেরালেন অন্য ওপেনার জেসন রয়কে। উইকেটে এলেন আগের ম্যাচের মাথাব্যথা সেঞ্চুরিয়ান বেন স্টোকস। তাঁকেও বোল্ড করে দিলেন মাশরাফি। ২৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড তখন কাঁপছে।
কিন্তু এমন পারফরম্যান্সের পরও বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হচ্ছিল না বাংলাদেশের। শেষ উইকেটে অবিশ্বাস্য ৪৫ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছিলেন আদিল রশিদ ও জ্যাক বল। একের পর এক বোলিং পরিবর্তনের পরও কোনো লাভ হচ্ছিল না। তাই নিজেই সে দায়িত্ব কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে ফিরলেন বোলিংয়ে। বলকে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ বানালেন নাসির হোসেনের। ৩৪ রানে জিতে গেল বাংলাদেশ।
ঠিক আট বছর পর ওয়ানডেতে ৪ উইকেট পেলেন মাশরাফি। সেটাও কোন ম্যাচে? প্রথম ম্যাচে প্রায় হাতের নাগালে চলে আসা জয়টা হাত ফসকে গেল। আজ হারলেই সিরিজের হারটাও নিশ্চিত হয়ে যেত। সে ম্যাচেই দেখা দিলেন অলরাউন্ডার মাশরাফি। বল হাতে তো বিজয় নিশ্চিত করেছেনই, ব্যাট হাতেও তো বাংলাদেশকে ২৩৮ রানের পুঁজিটা এনে দিয়েছেন মাশরাফি।
১৬৯ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর উইকেটে আসেন। ৪৮তম ওভারে যখন আউট হলেন, স্কোরবোর্ডে ২৩১/৯। ২২ বলে ৪২ রানের ইনিংসে দুই বাউন্ডারির সঙ্গে তিন ছক্কা। অনেক দিন পর ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন মাশরাফি। মাঝে তো ব্যাটিংটাই ভুলে গিয়েছিলেন বলে মনে হচ্ছিল। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। সর্বশেষ চার ইনিংসে তাঁর রান ৪, ২, ২, ১। অথচ স্লগ ওভারে এই মাশরাফিই কতবার যে বাংলাদেশের ভরসা হয়েছেন!
গত কিছুদিনে স্লগ ওভারে বাংলদেশের জীর্ণ দশার পেছনেও তো মাশরাফির হারিয়ে যাওয়াটাও ভূমিকা রেখেছে। সেই মাশরাফি আজ ফিরতেই শেষ ১০ ওভারে ৭৫ রান পেল বাংলাদেশ। এই বাড়তি রানটাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল পার্থক্য হয়ে রইল ম্যাচের। আর অধিনায়ক মাশরাফি তো ছিলেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই। যখনই বোলিং পরিবর্তন করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে ফল মিলেছে—যেন জাদুর কাঠির ছোঁয়া!
অবশেষে ব্যাটে-বলে নিজের দিকে সবটুকু আলো কেড়ে নেওয়া সেই মাশরাফিই যেন ফিরে এলেন আজ, ম্যাচ শেষে তাই না বললেও চলত ম্যাচ সেরার নামটি। সেটা তো সবাই জানে আজ—মাশরাফি বিন মুর্তজা!


শেয়ার করুন