ঈদকে সামনে রেখে

উখিয়া-টেকনাফে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম

downloadস্টাফ রিপোর্টার, উখিয়া।

উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকায় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চলছে হুন্ডির অবৈধ জমজমাট ব্যবসা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মিয়ানমার আরকান রাজ্যের শত শত নাগরিক অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া, সৌদিআরব, দুবাই, ইতালী, জার্মান, জাপান মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কক্সবাজার সীমান্তের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন বিদেশ থেকে এসব প্রবাসীদের পাঠানো হুন্ডির টাকার লেনদেন হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থার লোকজন পাচ্ছে নিয়মিত বখরা। এতে হুন্ডি ব্যবসার গডফাদারা বারবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন করায় সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা যায়, গত এক বছরে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে পাঠিয়েছে ১ হাজার কোটির অধিক টাকা। কক্সবাজার জেলায় ১শ জনের বেশি হুন্ডি ব্যবসার গডফাদার রয়েছে। তারমধ্যে উখিয়ায় ২০ জন, টেকনাফ ৩০ জন। সৌদি আরব এবং দুবাইতে রয়েছে তাদের শক্তিশালী নেটনেওয়ার্ক।

এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুবাই, সৌদি আবর, মস্কট থেকে পাকিস্তান, সিঙ্গাপূর হয়ে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে উখিয়া-টেকনাফ কক্সবাজারের বিভিন্ন ব্যাংকের ও চট্টগ্রামের পরিচিত ব্যবসায়ীর ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠানো হয়। হুন্ডি সম্রাটদের স্ব-নামে ও বে-নামে রয়েছে ব্যাংক একাউন্ড। ওই ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয় বলে জানা গেছে। শতাধিক দালাল রয়েছে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সহযোগী হিসাবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রাপকের নাম ঠিকানা পৌছায়। তারা বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা প্রবাসী আত্মীয় স্বজনের কাছে পৌঁছে দেয়। টাকা বুঝে পেয়েছি মর্মে একটি ছোট স্ল¬ীপে স্বাক্ষর নেয়া হয় টাকা গ্রহণকারীর কাছ থেকে। কক্সবাজার সীমান্ত এলাকা হুন্ডি ব্যবসায়ী গডফাদারদের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন গ্রেফতার করলেও ৫৪ ধারায় মামলা রেকর্ড করে আদালতে প্রেরণ করায় ্তারা সহজেই আইনের ফাঁক-ফোক দিয়ে বেরিয়ে যায়। মানি লন্ডারিং আইন প্রয়োগ করার কথা থাকলেও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ আইনের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। উখিয়া সদর ষ্টেশনের মসজিদ মার্কেটের একটি মোবাইল দোকান থেকে জনৈক এক ব্যক্তি সৌদিআরবে অবস্থানকারী তার ভাইয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উখিয়ায় বিলি করলেও পুলিশ প্রশাসনের কোন খরব নেই। তবে অভিযোগ রয়েছে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার লোকজন হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা পাওয়ায় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় না। প্রায় ওপেন সিক্রেট এ ব্যবসার খবর তারা জানলেও না জানার ভান করে থাকে।

সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, উখিয়া-টেকনাফে প্রায প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ডলার হুন্ডির মাধ্যমে মিয়ানমারে পাচার করে দিচ্ছে এক শ্রেণী হুন্ডি ব্যবসায়ে নিয়োজিত লোকজন। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ব্যাপারে একেবারেই নিরব। সূত্র দাবী করছে, সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা এসব হুন্ডি চক্রের সদস্য ও ডলার পাচারকারীদের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রির্পোট পাঠিয়েছে। সরকার গত ২ মাস আগে এসব হুন্ডিচক্রের তালিকা তৈরীর নির্দেশ দিলেও মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বরাবরই উদাসীন রয়েছে। যার ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকার সচেতন মহলের দাবী হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরী করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কোন ছাড় নেই, সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলেই গ্রেফতার করা হবে।


শেয়ার করুন