উখিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির ৩১ লক্ষ টাকা লোপাটের চেষ্টা!

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

কক্সবাজারের উখিয়ায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে অন্ধকারে রেখে প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে প্রাইমারি স্কুলের রুটিন মেইনটেন্যান্স, ওয়াশ ব্লক মেইনটেন্যান্স ও প্লে এক্সেসরিজ বাবদ বরাদ্দকৃত ৩১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা লোপাটের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে একাধিক ভূক্তভোগী।

এমন কি অভিযোগ কারী মনখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সোনার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নারায়ন দেবনাথকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ওই সভাপতিকে পথ থেকে পদত্যাগ করে পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন এ কর্মকর্তা।

সূত্রে জানাযায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে সরকার প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় রুটিন মেইনটেন্যান্সের কার্যক্রম বাস্তবায়নের নিমিত্তে ২০২২-২৩ অর্ধ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুটিন ম্যান্টেনিসের ব্যয় নির্বাহের বরাদ্দ ও মজুরী অর্থ বরাদ্দ দেন। ওই বরাদ্দের বেশিভাগ অর্থ বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আসছিলো বেশকয়েক বছর ধরে। এসব অর্থ সিন্ডিকেট সদস্যরা নানা কৌশলে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক, উপজেলা শিক্ষা ও উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার যোগসাজশে হরিলুট করা হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডজনখানেক শিক্ষক।

সম্প্রতি উখিয়ার ৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুটিন মেইনটেন্যান্স, ৯টি বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক মেইনটেন্যান্স ও ৭টি বিদ্যালয়রর প্লে এক্সেসরিজ বাবদ বরাদ্দ আসে ৩১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। ওই টাকা স্ব স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে নয়ছয় করার অভিযোগ তুলেন বেশকছি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি।

তারা বলছেন, পরিপত্র মতে এসব বরাদ্দকৃত অর্থ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ অন্যান্য সদস্যদের মতামতে ভিত্তিতে উত্তোলন ও কার্য সম্পাদনের নির্দেশনা থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তার ও স্বস্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন। তারা স্কুল কমিটির সাথে কোন ধরণের সভা না করে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড়ের জন্য কম্পিউটার কম্পোজ করা স্বাক্ষর বিহীন কাল্পনিক কার্যবিবরণী উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে জমা দেন। পরে স্বাক্ষর বিহীন কার্যবিবরণী দেখে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আলী অর্থ ছাড় না করেও স্বস্ব প্রধান শিক্ষক বরাবর ওইসব ফাইল ফেরৎ দেন। ফেরৎ দেওয়া ফাইলগুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসার সত্যায়িত করে আবারও হিসাব রক্ষণ অফিসে পুনরায় জমা করেন এবং এসব অর্থ ছাড়ের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে বারবার ধর্না দিচ্ছেস বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে মনখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নারায়ন দেবনাথ জানান, আমি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত দেড় বছরে প্রধান শিক্ষক বেদার উদ্দিন মাহমুদ আমার সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ করেনি। কোনদিন কোন স্বাক্ষরও নেননি। তারা কেমনে কেমন অফিসের সব কাজ করেন আমি জানি না। সম্প্রতি বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় রুটিন ম্যান্টেনিসের কার্যক্রম বাস্তবায়নের নিমিত্তে ২০২২-২৩ অর্ধ বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুটিন ম্যান্টেনিসের ব্যয় নির্বাহের বরাদ্দ ও মজুরীর টাকার তুলে নেওয়ার অভিযোগ সর্বত্র জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক গতবছর ক্রয়কৃত আসবাবপত্রকে এবছর ক্রয়বিবরণীতে দেখিয়ে স্বাক্ষর নিতে আসলে সভাপতি হিসেবে আমি স্বাক্ষর করতে অসম্মতি জানাই। পরে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফোনে করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সভাপতি থেকে পদত্যাগ করতে বলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আলী জানান, আমাদের হাতে কিছু ফাইল এসেছিলো, সেখানে কিছু আপত্তি থাকায় ফেরৎ দেওয়া হয়েছিলো। আপত্তি নিষ্পত্তি করে তারা ফাইলগুলো আমাদের হাতে জমা করেছেন। ফাইলগুলো আবারও যাছাই বাছাই চলছে।

স্কুল সভাপতিকে পথ থেকে পদত্যাগ করে পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তার মুঠোফোনে জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আমার অফিসে এসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বলেন। এর বেশি কিছু আপনাকে বলতে পারবো না।


শেয়ার করুন