ঈদ মোবারক

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও তাদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছেন।

ঈদ মানেই আনন্দ। প্রিয়জনের সঙ্গে সে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেকেই ছুটে গেছেন দূর-দূরান্তে। পথের ক্লান্তি ভুলে ছোট-বড় সবারই অধীর অপেক্ষা এখন ঈদের দিনটির জন্য। ইতিমধ্যে অনেকেরই কোরবানির পশু কেনা সম্পন্ন হয়েছে। কেউ কেউ দরদাম যাচাই করছেন এ-হাট থেকে সে-হাট ঘুরে। শেষ মুহূর্তে পছন্দমতো কোরবানির পশু কিনে ফিরবেন তারা।

জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিন, অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকে ওই দুই দিনও পশু কোরবানি করে থাকেন।

মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় দ্বিতীয় বৃহত্তম এ উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ঈদের দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) এই দিনে তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন।

কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার করা ও হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান আত্মত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মঙ্গলবার সকালেই মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে যাবেন ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের জন্য।

নামাজের খুতবায় তুলে ধরা হবে কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে আদায় করবেন ঈদের নামাজ। শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন কোলাকুলির মাধ্যমে। নামাজ শেষে অনেকেই যাবেন কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে।

আনন্দের দিনে অশ্রুসিক্ত হয়ে চিরকালের জন্য চলে যাওয়া স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে হাত তুলবেন। নামাজ শেষে আল্লাহতায়ালার উদ্দেশে করা হবে পশু কোরবানি।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চার শতাধিক ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিট করপোরেশন এলাকায় জাতীয় ঈদগাহর প্রধান জামাতসহ ঈদুল আজহার ২২৯টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮০টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। এদিকে, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উদ্যোগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও শেষ জামাত সকাল পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।

দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচল করবে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সাথে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানীর পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দুই সিটি করপোরেশনের ১০ হাজার ৫৪৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে। ঈদের দিন বেলা দুটোর পর থেকে পরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল বর্জ্য অপসারিত হবে বলে ঢাকার দুই মেয়র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

 


শেয়ার করুন